সোমবার ● ৩০ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » অনলাইনে ডলার উপার্জনের প্রলোভনে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের হাজার হাজার লোক
অনলাইনে ডলার উপার্জনের প্রলোভনে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের হাজার হাজার লোক
ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে ডলার উপার্জনের প্রলোভনে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের হাজার হাজার লোক। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলছে এ ডিজিটাল প্রতারণা। এরই মধ্যে এ ধরনের প্রতারণা করে খুলনা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এর বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এ পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জনের জন্য প্রথমে সর্বনিম্ন ২ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। প্রতিদিন অ্যাকাউন্টে ৫০টি বিজ্ঞাপনের লিংক আসবে। লিংকগুলোয় ক্লিক করলে প্রতিদিন এক ডলার করে অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তবে প্রথম দুই মাস কোনো টাকা পাওয়া যাবে না। তৃতীয় মাস থেকে আপনি মাসে ডলার পাবেন। ওই টাকা বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক থেকে তোলা যায় বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। একজন সদস্য কমপক্ষে ১২ মাস ওই পদ্ধতিতে ডলার আয় করতে পারবেন বলে মৌখিকভাবে জানানো হচ্ছে। তবে দেয়া হচ্ছে না কোনো কাগজপত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ের নাম করে গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করেছে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব অনলাইন প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক আগে অবহিত করার পরও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
২৩ জুলাই প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শতাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে খুলনার সাড়ে চার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে আউটসোর্সিং কোম্পানি স্পিডলিংক ইউকে ডটকম। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধর তাহাজ্জত হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা করবে ভুক্তভোগী গ্রাহক। স্পিডলিংক ইউকে ডটকম গ্রাহক পুঁজি উদ্ধার আন্দোলন আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘গত মার্চ থেকে কোম্পাটির যাত্রা। কোম্পানিটি প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাথমিক সদস্য পর্যায়ে ৮ হাজার ৬২৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অধিক লাভের প্রলোভনে কোনো কোনো গ্রাহক ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে চার মাসে। সব মিলে খুলনায় সাড়ে ৪ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে কোম্পানিটি। স্পিডলিংক ইউকের চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ থাকায় তার মতামত নেয়া যায়নি।
অন্যদিকে খুলনায় ‘ল্যান্সটেক ডট বিজ’ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুপ্রকাশের সঙ্গে যোগসাজশে সাধারণ গ্রাহকদের ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৪ মে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগীরা। গ্রাহক মেহেদী হাসান বলেন, ল্যান্সটেক ডট বিজ প্রায় ১৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুপ্রকাশকে আটক করেন সাধারণ গ্রাহক। সে সময় সুপ্রকাশ জানান, তার কাছে ২ কোটি ৪০ লাখ ও ১২ প্রুপ লিডারের কাছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রয়েছে। এ ঘটনায় সুপ্রকাশের ভাই চিকিত্সক সুপ্রিয় নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক দিয়ে তাকে নিজের জিম্মায় নিয়ে যান। শর্ত থাকে, ২০ দিনের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করা যাবে চেক জমা দিয়ে। বাকি টাকা ৯ জুনের মধ্যে পরিশোধ করবে। ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেকটি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি দেব দুলাল বাড়ৈ বাপ্পী, সাধারণ সম্পাদক শেখ শাজালাল আহম্মেদ সুজন ও যুবলীগ নেতা তানভীর আশরাফ যূথীর কাছে ছিল বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক।
মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘এসব নেতা এখন চেকটি হারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করছেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রতারক সুপ্রকাশও আত্মগোপনে। এক প্রশ্নের জবাবে মেহেদী হাসান বলেন, ‘এসব বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো ফল হয়নি।
নগরীর বয়রা বাজারের মৌ মার্কেটে অফিস নিয়ে জ্যাকশন আইটি ওয়ার্ল্ড নেট ডট ও সোনাডাঙ্গার টেকনো ফাইভ এ ধরনের ব্যবসা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
প্রতারণা রোধে প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সফিকুর রহমান বলেন, গ্রাহকরা টাকা-পয়সা হারিয়ে তারপর আসে প্রশাসনের কাছে। লেনদেনের আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারলে এমনটি হয় না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। -SBB