বৃহস্পতিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » মাত্রাতিরিক্ত কর না কমানো হলে গ্রামীন মানুষ সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট পাবে না
মাত্রাতিরিক্ত কর না কমানো হলে গ্রামীন মানুষ সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট পাবে না
মোবাইল ফোনের একজন গ্রাহক ১০০ টাকার ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনলে ৬০ টাকার বেশি চলে যায় সরাসরি সরকারের পকেটে। যেহেতু সরকার খুব সহজেই ১০ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থেকে অনেক টাকা আদায় করতে পারছে, তাই সরকার নিজেই চায় না ইন্টারনেটের দাম কমুক। ১৬ জানুয়ারি রাজধানীতে টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি এডভোকেসি প্লাটফর্ম (TIPAP) আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
টিপআপের সমন্বয়ক বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার ও ফ্রীল্যান্সিং কমিউনিটির প্রতিনিধিসহ অনেকে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ফাহিম মাশরুর দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহারে বিশাল পার্থক্য। শহরে যত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে গ্রামে তার অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গড়ে শহরে একজন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ১০০ গিগাবাইট ডাটা মাসে ব্যবহার করে, গ্রামে এর পরিমান গড়ে ৬ গিগাবাইট। পাশ^বর্তী ভারতে গড়ে একজন মোবাইল ডাটা ব্যবহারকারী বাংলাদেশ থেকে ৩ গুন বেশি ডাটা ব্যবহার করে। মোবাইল ডাটা চার্জ বেশি হওয়াতে আমরা পাশ^বর্তী দেশগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছি, বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে।
বক্তারা বলেন, দেশে মোবাইল ডাটা মূল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সরকারি অতিরিক্ত কর। ১৫% ভ্যাট ছাড়াও ২৩% সম্পূরক শুল্ক, ২% সারচার্জ, ৬% রেভিনিউ শেয়ারিংসহ আরো নানা ধরণের সরকারি খরচের জন্য মোবাইল ডাটার মূল্য দিন দিন বাড়ছে। গত ১০ বছরে মোবাইলের উপর কর দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে বলে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ইন্টানেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হয়, কর ছাড়াও আরো একটি বড় বাধা এনটিটিএন লাইসেন্স ব্যবহার করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দুইটি কোম্পানির চাঁদাবাজি। এনটিটিএন-এর মনোপলি ব্যবসার জন্য গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেট ডাটা ট্রান্সমিশন কম খরচে করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমাতে নিজেরা যাতে সারাদেশে ট্রান্সমিশন করতে পারে সে অনমোদন বিটিআরসিকে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে গত সপ্তাহে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন করে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর যে সম্পূরক শুল্ক (মোবাইলের ক্ষেত্রে ৩% ও ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ১০%) আরোপ করেছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, এই বৃদ্ধি জুলাই বিপ্লবের সাথে সাংঘর্ষিক, কেননা ইন্টারনেট ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের বড় হাতিয়ার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বিল্ডকনের প্রধান মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, এমটব এর সেক্রেটারি জেনারেল লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.), মোবাইল অপারেটর রবি’র চিফ রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম, বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক, আইআইজি এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম, বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবির, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।