সোমবার ● ৩০ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পেটেন্ট লড়াইয়ে আজ আদালতে নামছে অ্যাপল ও স্যামসাং
পেটেন্ট লড়াইয়ে আজ আদালতে নামছে অ্যাপল ও স্যামসাং
স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে লড়াইয়ে নামবে অ্যাপল ও স্যামসাং। বিশ্বের ১২টিরও বেশি দেশে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পেটেন্ট লড়াই চললেও আজ শুরু হওয়া লড়াইটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ মামলায় জয়ী কোম্পানিই ভবিষ্যতে স্মার্টফোনের বাজারে ভিন্নতা নিয়ে আসবে বলেই সবার ধারণা। দ্রুত বর্ধনশীল স্মার্টফোন বাজারে টিকে থাকার জন্য এ মামলায় জেতার জন্য জীবন-মরণ লড়াই করবে প্রতিষ্ঠান দুটি। খবর রয়টার্সের।
অ্যাপলের সদর দফতর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ক্যালিফোর্নিয়ার সানজোশে এ মামলাটি আজ শুরু হবে। স্যামসাংয়ের জন্য এটি জীবন-মরণ লড়াই। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যালাক্সি সিরিজের স্মার্টফোন বিক্রি করতে পারবে কি না। অ্যাপলের জন্যও এটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ মামলায় জিতলে একদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি পাবে কয়েক শ কোটি ডলার, পাশাপাশি নিজেদের পেটেন্ট সামলানোর কৌশলটিও ঝালিয়ে নেয়া হবে তাদের।
বর্তমানে স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলের চেয়ে এগিয়ে স্যামসাং। এ ছাড়া সেলফোন বিক্রিতে টানা ১৪ বছর নকিয়ার শীর্ষে থাকার গর্বও ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বিশ্বে বিক্রীত স্মার্টফোনের অর্ধেকই বিক্রি হয় অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মাধ্যমে।
গত বছরের মার্চ থেকে এ দুই প্রতিষ্ঠানের পেটেন্ট যুদ্ধ শুরু। সে সময় অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে মামলায় জানিয়েছিল, স্যামসাং নির্লজ্জভাবে অ্যাপলের পণ্য নকল করছে। এর বিপরীতে স্যামসাং এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং পাল্টা মামলায় বলে, স্যামসাংয়ের মোবাইল যোগাযোগের প্রযুক্তি আইফোন ও আইপ্যাডে ব্যবহার করছে। এরপর থেকেই বিশ্বের ১২টিরও বেশি দেশে মামলায় লড়ছে অ্যাপল ও স্যামসাং।
আজ শুরু হতে যাওয়া মামলায় অ্যাপলের জয় হলে প্রতিষ্ঠানটি ন্যূনতম ২৫৩ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবে। এ ছাড়া বিচারক লুসি কোহ মনে করলে এ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সর্বোচ্চ তিন গুণ করতে পারবেন।
এ মামলায় স্যামসাং হারলে কেবল আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং আরও বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। ফলে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য গ্যালাক্সি এসথ্রি বিক্রিতে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে জানান ম্যারিল্যান্ডের সিএফআরএ রিসার্চের বিশ্লেষক নিক রডেলি। এ ছাড়া এ মামলায় হারার ফলে স্যামসাংয়ের বৈশ্বিক মুনাফা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলেও
তিনি জানান।
রডেলি বলেন, স্যামসাং অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান এবং সারা বিশ্বে এর কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু এ মামলায় হারলে পুরো বিশ্বে স্যামসাংয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর প্রভাব পড়বে।
এ মামলায় জেতার জন্য অ্যাপলের হাতে শক্ত একটি প্রমাণ রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এ বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, স্যামসাং শুরু থেকেই জানত তারা অ্যাপলের পেটেন্ট ভঙ্গ করছে। এ-সংক্রান্ত দলিলাদি অ্যাপল দেখাবে। স্যামসাংয়ের দাবি, নিজেদের মুনাফা বাড়াতে ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অ্যাপল এ মামলা করেছে।
এ বিষয়ে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাজিমাত করতে চায় অ্যাপল। গ্রাহকদের পছন্দের ক্ষেত্র কমিয়ে আনার পাশাপাশি উদ্ভাবন অনুত্সাহিত করতে চায় তারা।
মামলায় হারলে অ্যাপলকে কম ক্ষতির শিকার হতে হবে না। হারলে স্যামসাংকে হয়রানির কারণে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ছাড়া পেটেন্ট ভঙ্গের জন্য দিতে হবে আলাদা জরিমানা। সর্বোপরি গ্যালাক্সি এসথ্রির বিক্রি আটকাতে না পারলে আইফোন ৪এসের বিক্রি কমবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেসটিনেশন ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ইয়োশিকামি।
তিনি বলেন, স্যামসাংই এখন একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা অ্যাপলকে আটকে দিতে পারে।
গত দ্বিতীয় প্রান্তিকে অ্যাপল সর্বমোট ২ কোটি ৬০ লাখ আইফোন বিক্রি করেছে, যা এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে কিছু কম। একই সময়ে বাজারে গ্যালাক্সি এসথ্রি ছাড়ার কল্যাণে স্যামসাং বিক্রি করেছে ৫ কোটি স্মার্টফোন। এ কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাং রেকর্ড মুনাফা করেছিল।
অ্যাপলের পক্ষে এ মামলা লড়বে বিখ্যাত আইনি ফার্ম মরিসন অ্যান্ড ফরেস্টার। স্যামসাংয়ের পক্ষে লড়বেন কুইন ইমানুয়েল আরকোয়ার্ট অ্যান্ড সুলিভান। নূ্যূনতম চার সপ্তাহ এ মামলার বিচারকাজ চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০ সদস্যের জুরি বোর্ড এ সময় দুই পক্ষের তথ্য শুনবেন ও পরবর্তীতে ভোটের মাধ্যমে রায় দেবে।
এ মামলা শুরুর আগে ১৬ জুলাই আদালতের নির্দেশে আলোচনায় বসেছিল অ্যাপল ও স্যামসাং মোবাইলের সিইও। কিন্তু সে সময় তারা এ মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে একমত হতে পারেননি।