![ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |](https://www.dailyictnews.com/cloud/archives/fileman/ICT-NEWS-LOGO-2024-55px.png)
বুধবার ● ৩১ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য: গণতন্ত্র সুসংহত নয়, এমন দেশ ইন্টারনেট বন্ধ রাখে
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য: গণতন্ত্র সুসংহত নয়, এমন দেশ ইন্টারনেট বন্ধ রাখে
মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
বিক্ষোভ ও ভিন্নমত দমনে বিভিন্ন দেশে অনেক সময়ই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয় সরকার। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, গুলি ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় টানা পাঁচ দিন বাংলাদেশেও সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। এখনো ইন্টারনেট স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখনো ইন্টারনেটের বাইরে আছে।
গণতন্ত্র সুসংহত নয়, এমন দেশগুলোতে এ রকম পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। ইন্টারনেটবিহীন অবস্থায় কার্যত বাংলাদেশ বিশে^র অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্নই ছিল। এই পরিস্থিতির জন্য সরকার ডেটা সেন্টারে নাশকতার বিষয়টি সামনে এনেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিশে^র কোন দেশ কত সময় ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখে, তার হালনাগাদ তথ্য দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা। এ রকমই একটি সংস্থা ‘ইন্টারনেট সোসাইটি’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক এই সংস্থা সাধারণ মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে কাজ করে। তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫ দিন ১২ ঘণ্টা (১৮-২৩ জুলাই) ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মহাখালীর ওই জায়গা থেকে সারা দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়। ফলে সেখানে ডেটা সেন্টার বন্ধ থাকলেও সারা দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার কথা নয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ক্লাউডফ্লেয়ারের আউটেজ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট বিভ্রাটের শুরুতে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। ২৫ জুলাই দেশটি জুড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য সরকারের নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। সিরিয়ার পরেই বাংলাদেশ। ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ দেখানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ক্লাউডফ্লেয়ার। সেখানে সরকারের নির্দেশে বন্ধের বিষয়টি বলা হয়েছে।
বিভিন্ন বৈশি^ক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে গণতন্ত্র সুসংহত নয় বা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে, সেসব দেশের সরকার নিজেদের সুবিধামতো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলি ও অগ্নিসংযোগের এক পর্যায়ে ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিথিল থাকলেও কারফিউ এখনো বলবৎ রাখা হয়েছে। কারফিউ শুরুর আগে ১৭ জুলাই বুধবার মধ্যরাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এবং ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই রাতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয় এবং ২৮ জুলাই বিকেলে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হয়। তবে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটক বাংলাদেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম সেবা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে ইন্টারনেট বন্ধ করাকে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশকে বহির্বিশ্ব থেকে যেভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো, তার মূল উদ্দেশ্য যে অবাধ তথ্য ও মত প্রকাশ রোধ করা, তা সহজেই অনুমেয়।
১৮ জুলাই মহাখালীতে দুর্যোগ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। এ ভবনের পাশের তিনটি ভবনে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা সেন্টারসহ ইন্টারনেট সরবরাহকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। ইন্টারনেট সরবরাহকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুনে এসব ভবনের বাইরে থাকা কিছু কেব্ল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই ডেটা সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত কিছু কেব্ল কেটে ফেলা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মহাখালীর ওই জায়গা থেকে সারা দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়। ফলে সেখানে ডেটা সেন্টার বন্ধ থাকলেও সারা দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার কথা নয়।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে নিউইয়র্কভিত্তিক অ্যাকসেস নাউ এবং ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে কাজ করে কিপইটঅন কোয়ালিশন নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ নিয়ে তারা সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গত মার্চে। এই প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সহিংসতা, যুদ্ধাপরাধ ও গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ এবং অন্যান্য নৃশংসতা দমন করতে বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে তিনবার এবং ২০২২ সালে ছয়বার মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিন্নমত দমনের জন্য ১৫টি দেশে ৬৩ বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। এ ছাড়া বারবার সেবা বন্ধ রাখার তালিকায়ও বাংলাদেশের নাম রয়েছে। কিপইটঅন কোয়ালিশন বাংলাদেশ সরকারকে ইন্টারনেট চালু করার জন্য ১৯ জুলাই আহ্বান জানিয়েছিল।