বৃহস্পতিবার ● ৫ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হিগস-বোসন কণার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা (ভিডিও)
হিগস-বোসন কণার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা (ভিডিও)
অবশেষে বস্তুর ভর কীভাবে সৃষ্টি হয়, এ তথ্য জানার ৪৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। নিউক্লিয়ার গবেষণার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় সংস্থা সার্নের গবেষকেরা দাবি করেছেন নতুন একটি অতিপারমাণবিক কণার খোঁজ পেয়েছেন তারা। খুঁজে পাওয়া নতুন কণাটির বৈশিষ্ট্য হিগস বোসনের মতো হলেও এটিই হিগস-বোসন কণা কি না, তা জানতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন ।
৪ জুলাই বুধবার যুক্তরাজ্য ও জেনেভায় আলাদা সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ দাবি করেছেন। -খবর রয়টার্স
২০১০ সালে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে মিনি বিগ ব্যাং ঘটানোর পর থেকে অপেক্ষার পালা শুরু। কিন্তু এ কণার অস্তিত্ব আদৌ আছে কি নেই, সে তথ্য জানার অধীর অপেক্ষায় ছিলেন গবেষকেরা। কারণ, এ তথ্য জানতে পারলে মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য জানতে পারবেন।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, প্রাপ্ত উপাত্তে ১২৫-১২৬ গিগাইলেকট্রন ভোল্টের কণার মৃদু আঘাত অনুভূত হওয়ার তথ্য তাঁরা সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। এ কণা প্রোটনের চেয়ে ১৩০ গুণেরও বেশি ভারী।
সার্নে এ ঘোষণা দেওয়ার পর হাততালিতে ভরে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। গবেষক হিগস নিজেও এ পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট।
এ প্রসঙ্গে হিগস জানিয়েছেন, ‘আমার জীবদ্দশাতেই যে এর ফল আমি দেখে যেতে পারব, তা কল্পনাও করিনি। আমার জন্য এ এক দারুণ আনন্দের মুহূর্ত।’
যুক্তরাজ্যের সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাসিলিটিজ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী জন ওমার্সলি জানিয়েছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এমন একটি কণার খোঁজ মিলেছে, যা হিগস-বোসন কণার অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের।’
সার্নের মুখপাত্র জো ইনকানডেলা জানিয়েছেন, ‘যদিও এটি প্রাথমিক ফলাফল। কিন্তু প্রাথমিক ফলে যে প্রমাণ মিলেছে, তা হিগস-বোসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, হিগস-বোসন খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে গবেষকেরা সব সময়ই ইতিবাচক ধারণা করে আসছেন। এ ফলাফল ঘোষণা করার আগে ‘ঈশ্বর কণা’র বা হিগস-বোসনের ৯৯.৯৯ শতাংশ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন গবেষকেরা।
পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা হিগস-বোসন কণাটি ‘ঈশ্বর কণা’ হিসেবেও পরিচিত।
হিগস-বোসন কি ?
হিগস-বোসনের বাস্তব অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বড় মাপের গবেষণা একেবারেই সাম্প্রতিক কালের ঘটনা। জেনেভায় সার্নের গবেষণাগারে এ নিয়ে গবেষণা চলছে প্রায় দেড় দশক ধরে, এর পেছনে খরচ করা হয়েছে শত শত কোটি ডলার।
কিন্তু যাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের এতো চেষ্টা, এতো অর্থ ব্যয়, সেটা আসলে কি? খুব সহজ করে বলতে গেলে, এটি একটি অদৃশ্য এনার্জি ফিল্ড, যা পুরো মহাবিশ্ব জুড়ে পরিব্যপ্ত।
টম হুয়াইনটাই, সার্নের বিজ্ঞানী
মহাবিশ্বে সব পদার্থেরই যে মাস বা ভর, তার মূলে রয়েছে এই হিগস-বোসন। যখন কোনো বস্তুর কণা এই হিগস-বোসন ফিল্ডের সঙ্গে ক্রিয়া করে, তখনই সেই বস্তুর ভর তৈরি হয়।
এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে সার্ন গবেষণাগারের এক বিজ্ঞানী টম হুয়াইনটাই বলছেন, “হিগস-বোসন যদি না থাকতো, এই মেকানিজম যদি না থাকতো, তাহলে মহাবিশ্বে হয়তো আলো ছাড়া আর কিছুই থাকতো না। আমরা যাকে ‘মাস’ বা ‘ভর’ বলি, কোনো বস্তুরই সেই ‘ভর’ থাকতো না। কিন্তু এখন আমরা জানি যে, বস্তুর ভর কোত্থেকে আসে, সে সম্পর্কে আমরা এতদিন যে ধারায় চিন্তা করছিলাম, সেই চিন্তা সঠিক।”
“এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের এতদিনের ধারণাকেই সুনিশ্চিত করেছে। মহাবিশ্ব কিভাবে কাজ করছে, তার একটা মৌলিক প্রশ্নের উত্তর আমরা আজ খুঁজে পেয়েছি। সুতরাং বলতে পারেন, এখানে মানব কৌতুহলেরই বিজয় হয়েছে।” বলেন তিনি।
আবিষ্কারের গুরুত্ব
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিগস-বোসনের আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হচ্ছে, এটি পদার্থবিজ্ঞানের বহুল প্রচলিত একটি তত্ত্ব, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ধারণাকে সুনিশ্চিত করেছে। এই মডেল অনুযায়ী, মহাবিশ্ব মূলত বারোটি মৌলিক কণা দিয়ে গঠিত, এবং চারটি মৌলিক শক্তি এই কণাগুলোর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কাজেই হিগস-বোসনের আবিষ্কার যে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার জন্য এক বিরাট ঘটনা , সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করা ছাড়া এই আবিষ্কার বাস্তবে কি কাজে লাগবে?
এ প্রশ্নের জবাবে সার্নের আরেক বিজ্ঞানী টিযিয়ানো ক্যাম্পোরেসি বলছেন, “এ প্রশ্নের জবাব আসলে আমার কাছে নেই। ধরুন আঠারো শতকে কোন রাজদরবারের জ্যোর্তির্বিজ্ঞানী বিদ্যুৎ আবিষ্কার করার পর তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো-এটা কি কাজে লাগবে, তিনি হয়তো রাজাকে এই একই উত্তর দিতেন। কারণ সেসময় তারা আসলেই জানতেন না, বিদ্যুৎ কি কাজে লাগে। তার মানে আমি কিন্তু বলছি না যে হিগস-বোসন ভবিষ্যতে বিদ্যুতের মতোই সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলবে আমাদের সমাজে, আমি বলতে চাইছে এর বাস্তব ব্যবহার কি হবে তা আমরা আসলেই জানি না।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের প্রকৃত গুরুত্ব মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনে। তাদের ভাষায়, মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে এমন একটা সীমানায় তারা পৌঁছেছেন, যেটা হয়তো তাদের অনেক অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর যোগাতে পারে, নতুবা আরও অনেক নতুন আবিষ্কারের দিগন্ত খুলে দিতে পারে।