বুধবার ● ৬ জুলাই ২০১১
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » লিখিত বক্তব্য আর নয়, টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া যাবে
লিখিত বক্তব্য আর নয়, টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া যাবে
।।ডিজিটাল বাংলা ডেস্ক।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শেষ সুযোগ পাচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। দু’জনই বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেখান থেকে সংসদীয় উপকমিটির বৈঠকে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দিলে তা গ্রহণ করবে কমিটি। তবে আগেরবারের মতো কোন লিখিত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-সেনা সংঘর্ষ এবং দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন, গ্রেফতার এবং জরম্নরী অবস্থা ও কাফু্য জারি করা হয়। ওই ঘটনা তদনত্মে গঠিত শিৰা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত উপকমিটি মঙ্গলবার তদনত্ম প্রতিবেদন তৈরির ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম দিন গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই শীর্ষ ব্যক্তির সাৰ্য নেয়ার বিষয়ে এ সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। তারা এই শেষ সুযোগ গ্রহণ না করলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের দায়ী করা হতে পারে।
এর আগে উপকমিটি গত ১৮ এপ্রিল ও ৫ জুনের বৈঠকে ফখরম্নদ্দীন আহমদ ও মইন উ আহমেদকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা উপস্থিত না হয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠান। কমিটি তাঁদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সশরীরে বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানায়। সে আহবানে সাড়া দেননি দু’জনের কেউই।
মঙ্গলবার প্রথম দিনের বৈঠক শেষে শিৰা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং উপকমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে শেষ সুযোগ হিসেবে ফখরম্নদ্দীন ও মইনকে আত্মপৰ সমর্থনের জন্য সাৰ্য দিতে বলা হবে। যদি তাঁরা এ সুযোগ গ্রহণ না করেন তবে ফখরম্নদ্দীন ও মইনের বিরুদ্ধে কমিটি যেসব অভিযোগ পেয়েছে তা সঠিক এবং নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা রয়েছে- এমনটা ধরে নিয়েই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে। আমরা এখনও তাঁদের বক্তব্য শোনার অপেৰায় রয়েছি। খুব শীঘ্রই তদনত্ম প্রতিবেদনের কাজ শেষ হবে। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এটি উত্থাপন করা হবে। সে পর্যন্ত তাঁরা বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পাবেন। তাঁদের নতুন করে আর আমন্ত্রণ জানানো হবে না।
ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে মনত্মব্য করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ওই সময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা ছাত্র-শিক্ষক-সেনা সদস্যের মধ্যে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনাটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। কারণ রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁরা না থাকলেও তাঁদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, কমিটির প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচার, ক্ষতিগ্রসত্মদের পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুপারিশ করা হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতন্ত্রায়ন ও সংঘর্ষ পরবর্তী নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবারের বৈঠকে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক আনোয়ার হোসেন, নির্যাতনের শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম শামসুল আলম, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরম্নজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী। আমন্ত্রিতরা ওই সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন বিষয়ে কমিটির কাছে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁরা ওই ঘটনাকে পরিকল্পিত দাবি করে ফখরম্নদ্দীন ও মইন উ আহমেদসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করে বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি দীর্ঘস্থায়ী সেনা শাসন কায়েমের জন্যই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তাই ওই ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।