সোমবার ● ২৫ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে শীর্ষ চারে বাংলাদেশ
চার বছরে ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে শীর্ষ চারে বাংলাদেশ
গত ৪ বছরে ডিজিটাল অর্থনীতিতে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করে হুয়াওয়ের ‘গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স ২০১৯’ এর ‘টপ মুভার’ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
তালিকায় থাকা বাকি তিন দেশ হচ্ছে ইউক্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আলজেরিয়া।
২০১৫ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিজিটাল অর্থনীতিতে সারা বিশ্বের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
গ্লোবাল কানেকটিভিটি ইনডেক্স (জিসিআই) ডিজিটাল বিকাশের উপর হুয়াওয়ের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন। এটি আইসিটি উদ্ভাবন এবং আইসিটি অ্যাপ্লিকেশনগুলি কীভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়, থিঙ্ক ট্যাঙ্কস এবং শিল্প সমিতিগুলির সঙ্গে ডিজিটাল অর্থনীতিতে মুক্ত গবেষণা পরিচালনা করে সেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
এর লক্ষ্য হলো দেশ এবং শিল্পকে ডিজিটাল রূপান্তর সম্পর্কিত অনুমোদন, দিক নির্দেশনা, এবং এর অগ্রগতির সঠিক মূল্যায়ন পরিমাপগুলো তুলে ধরা।
২০১৪ সাল থেকে হুয়াওয়ে প্রতি বছর সরবরাহ, চাহিদা, অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা নামক চার ক্ষেত্রের ৪০টি সূচকের ভিত্তিতে একটি জিসিআই প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
জিসিআই ২০১৯ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরেরও কম সময়ের পথচলায় ‘গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স’ বা বৈশ্বিক সুযোগ সূচকে সাত পয়েন্ট এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের পর দেশটিতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর হার ৫% থেকে বেড়ে ৪১% হয়েছে। একই সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার ৭% থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪%। এছাড়াও মোবাইল ফোন ও বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রেও দেশটির তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা সবে ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগোচ্ছে, তারাও ‘ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি’কে কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি থেকে কেবল উন্নত দেশগুলোই লাভবান হবে- এমন নয়, বরং যে কোনো দেশ সম্ভাবনাময় নতুন এই খাতকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে।
জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রথম সারির দেশ, যারা ইতিমধ্যেই আইসিটি অবকাঠামোতে শীর্ষে অবস্থান করছে, তারাও সম্ভাবনাময় এই খাতকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। ফলে তাদেরও আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
আর চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, ফিলিপাইন এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতেও একই সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও উন্নয়ন তারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
‘ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি’ কাজে লাগিয়ে যে নতুনভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, এটিই এবারের ‘গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স’ প্রতিবেদনের প্রধান পর্যবেক্ষণ। এতে দেখানো হয়েছে যে, গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স (জিসিআই) বা বৈশ্বিক সংযোগ সূচকে ৬৫ এর বেশি নম্বর পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে যারা কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগ খাতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ করেছে, তারা এক শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সক্ষম হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে বৈশ্বিক পর্যায়ে আমরা একে অন্যকে কতটা সহযোগিতা করতে পারছি, তার ওপর সামগ্রিক সাফল্য নির্ভর করছে বলেও এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে অন্যতম প্রধান সঞ্চালক হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড, ক্লাউড এবং আইওটি’র মতো করে ‘ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি’ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রযুক্তির এই চারটি ধারার-ই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিজিটাল উন্নয়নে একটি দেশের অবস্থান যেখানেই থাক না কেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংযোগকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো যায়, তা নিয়ে সে দেশের নীতি নির্ধারকদের এখনই ভাবা উচিত।
হুয়াওয়ে আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিভাগের সিএমও কেভিন ঝাং বলেন, আমরা এখন লক্ষ্য করছি যে, ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ক্লাউড সংযোগের নতুন সংজ্ঞা দাঁড় করাচ্ছে
তিনি আরও বলেন, ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি উন্নয়ন কার্যক্রমকে তরান্বিত করছে। কাজেই আইসিটি বিশ্বে যারা মাত্রা যাত্রা শুরু করছে এবং যারা আইসিটিকে গ্রহণের কথা ভাবছে, সেসব রাষ্ট্রের সরকার ও ব্যবসায়ী নেতাদের উচিত দ্রুত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে জাতীয় পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশন ঘটিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এ খাতে থেকে ফায়দা নেয়া।
কেভিন ঝাং বলেন, আমরা এটাও বুঝতে পেরেছি যে, ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটি সমাজে ধনী-গরিবের ব্যবধান ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যারও সমাধান করতে সক্ষম। বিশ্বের প্রত্যেকের কাছেই আধুনিক প্রযুক্তির এই আশীর্বাদ পৌঁছে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
হুয়াওয়ে। এভাবেই ইন্টেলিজেন্ট কানেক্টিভিটির সুবিধা প্রতিটি ঘরে, প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চায় হুয়াওয়ে।
ডিজিটাল অর্থনীতিতে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে নীতি নির্ধারক ও স্টেকহোল্ডারদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা প্রদানের উদ্দেশ্যেই গ্লোবাল কানেক্টিভিটি ইনডেক্স বা বৈশ্বিক সংযোগ সূচক নকশা করা হয়েছে। এতে অংশ নেয়া ৭৯টি দেশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে বিশ্বের ৯৫% এবং জনসংখ্যার হিসাবে প্রায় ৮৪% অন্তর্ভুক্ত করে।
হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিতকরণ ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি উন্নত ও সংযুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধাসমূহ প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে যা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার সমান। এক লাখ ৮০ হাজার কর্মী নিয়ে বিশ্বব্যাপী টেলিকম অপারেটর, উদ্যোক্তা ও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ তৈরির লক্ষ্যে হুয়াওয়ে এগিয়ে চলেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল শেষে হুয়াওয়ে আয় প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে যা আগের বছরের চেয়ে ১৯.৫% বেশি।
এছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নে (আরএন্ডডি) বিনিয়োগ মোট বার্ষিক রাজস্বের ১৪.১%, যার ফলেই পণ্য ও সল্যুশনের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে। বিশেষ করে ফাইভজি’র ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ৪০টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ইতোমধ্যে ৭০ হাজার বেইজ স্টেশন হস্তান্তর করেছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় হুয়াওয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যান্যদের চেয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস এগিয়ে।