রবিবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ২০২৪ সালে চীনে মোবাইল সেবা খাতের রাজস্ব পৌঁছবে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারে
২০২৪ সালে চীনে মোবাইল সেবা খাতের রাজস্ব পৌঁছবে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারে
২০২৪ সালের মধ্যে চীনের মোবাইল সেবা খাতের রাজস্ব ১৬ হাজার ৫০০ কোটি (১৬৫ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছবে, যা চলতি বছরের ১৫ হাজার ৩০০ কোটি (১৫৩ বিলিয়ন) ডলারের চেয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বেশি। বৈশ্বিক ডাটা বিশ্লেষক ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবালডাটার এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর টেলিকম লিড।
চীন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কারণে টেলিযোগাযোগ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। দেশটিতে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারী ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আগামী পাঁচ বছর দেশটিতে মোবাইল সাবস্ক্রাইবার বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সময় দেশটিতে মোবাইল ডাটা রাজস্ব বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। স্মার্টফোন সাবস্ক্রিপশন ও ডাটা ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মোবাইল ডাটা থেকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
গ্লোবালডাটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে চীনের মোট মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের ৭৫ দশমিক ৭ শতাংশই ছিল ফোরজি। চীনজুড়ে এলটিই বা লং টার্ম ইভল্যুশন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিস্তারের কল্যাণে এটা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির কয়েকটি সেলফোন অপারেটর পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ফাইভজির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছে। এসব অপারেটর আগামী বছরের প্রথম দিকেই বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
২০২৪ সালের শেষ দিকে চীনের মোট মোবাইল সাবস্ক্রিপশনে ফাইভজির দখল ৩১ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে আগামী পাঁচ বছর পরও দেশটিতে ফোরজি বা এলটিই প্রযুক্তিরই আধিপত্য থাকবে। টেলিযোগাযোগ বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় দেশটির অপারেটরগুলো ফোরজিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। আগামী পাঁচ বছর শেষেও চীনের মোট মোবাইল সাবস্ক্রিপশনের ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ দখলে নিয়ে আধিপত্য ধরে রাখবে ফোরজি এলটিই।
গ্লোবালডাটার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের টেলিযোগাযোগ বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছে রাষ্ট্রীয় সেলফোন অপারেটরগুলো। গত মাসে এসব অপারেটর ফাইভজি নেটওয়ার্কে উন্নীত হওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। ফাইভজি বিস্তারের দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে থাকতে চায় চীন। এরই অংশ হিসেবে আপাতত বেইজিংয়ে ফাইভজি সেবা চালু করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় অপারেটরগুলো। চায়না ইউনিকম, চায়না মোবাইল ও চায়না টেলিকম মাসিক সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক শূন্য ৮ পাউন্ডে ফাইভজি সেবা দিচ্ছে। আগামী বছরের শুরুতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
চীন প্রযুক্তি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিস্তৃত ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালুর ঘোষণা দেয়ার পর আবারো নড়ে-চড়ে বসেছেন প্রযুক্তিবিদসহ নেটিজেনরা। রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি সেলফোন অপারেটরের একযোগে ওয়্যারলেস এ প্রযুক্তিতে সেবাদান শুরুর সংবাদ প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে চীন কীভাবে এটা সফল করেছে কিংবা এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আমেরিকার বাজারে নিষিদ্ধ হওয়া চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের ভূমিকাইবা কী?
চীনে বর্তমানে ৮৫ কোটি মানুষ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এসব ব্যবহারকারীর মধ্যে ফাইভজি সেবা পৌঁছানোর পর নিশ্চয়ই বৈশ্বিক বাজার দখল করতেও চেষ্টা চালাবে চীন। ফলে প্রযুক্তিগত মূল্যায়নে চীন আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। দাম ও নেটওয়ার্ক বিবেচনায় এ ফাইভজি সেবা শুধু চীনে নয়, জোগান চক্রে সারা বিশ্বে এক বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বের বৃহৎ টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম ও দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। চীনে দ্রুততম সময়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শেনজেনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। চায়না মোবাইল হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী অপারেটর, যেটি কিনা তাদের অর্ধেকের মতো ফাইভজি নেটওয়ার্ক-সংশ্লিষ্ট চুক্তি করেছে হুয়াওয়ের সঙ্গে।
বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বাজারে হুয়াওয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এরিকসন, নকিয়া ও জিটিইর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু তারা যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে নেই। কাজেই ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করায় যুক্তরাষ্ট্র ফাইভজি খাতে চীনের তুলনায় পিছিয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।