বৃহস্পতিবার ● ২৮ জুন ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » টিনএজারদের মধ্যে বাড়ছে সাইবার অত্যাচারের প্রবণতা
টিনএজারদের মধ্যে বাড়ছে সাইবার অত্যাচারের প্রবণতা
আসিফ মাহমুদ:
একটা সময় খেলার মাঠে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দশাসই কাউকে দেখলে অনেকের মনে মানসিক অত্যাচারের শিকার হওয়ার ভয় থাকত। তবে এখন সাইবারজগতেও এসব মানসিক অত্যাচারী ঢুকে পড়ছে। টিনএজারদের মধ্যে এ মানসিক অত্যাচারকারী ও অত্যাচারিত উভয়ের সংখ্যাই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ইন্টারনেট বা সেলফোনের মাধ্যমে কাউকে মানসিক অত্যাচার করাকে সাইবার বুলিং বলা হয়। নিজের সম্পর্কে নিচু ধারণাকে মানসিক অত্যাচারের কারণ ধরা হয়ে থাকে। নিজে ভালো বোধ করার উদ্দেশ্যে অত্যাচারীরা অন্যকে ছোট করার চেষ্টায় থাকে। পরে তারা নিজেরাই নিজেদের অপকর্মের শিকার হয়। সাইফি হাসপাতাল এবং প্রিন্স আলি খান হাসপাতালের কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডক্টর হোজেফা ভিনদারওয়ালা বলেন, মনোযোগ দেয়ার সুযোগ কম থাকা এবং ঝোঁকের মাথায় কিছু করে বসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সাইবার বুলিং বেড়ে চলেছে।
ইন্টারনেট শুধু যোগাযোগের দ্বার খুলে দেয় না, এখানে মানসিক অত্যাচারীরা নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে তাদের কাজ করতে পারে। সামাজিকতায় অপারগ ব্যক্তিরা মূলত নিজেদের আক্রোশ ঝাড়ার উদ্দেশ্যে সাইবার বুলিংয়ে জড়িত থাকে।
ইশান ব্যাগিনস (ছদ্মনাম) নামে ভোপালের ২১ বছর বয়সী ব্যক্তি সাইবার বুলিংয়ে জড়িত ছিলেন। তার মুখ থেকেই শুনুন, ‘আমার এক বন্ধু ফেসবুক ব্যবহার করে না। বিরক্তি কাটানোর জন্য এক দিন তার নামে আমি ভুয়া প্রোফাইল খুলে বসি। আমার সঙ্গে আরও বেশকিছু বন্ধু যোগ দেয়। এরপর ও চিনত এমন বন্ধুদের আমরা অ্যাড করতে শুরু করি। আমরা তার কিছু বিব্রতকর ছবি আপলোড করি। মেয়েদের ছবিতে মজার মন্তব্য করি এবং হাস্যকর স্ট্যাটাস দেই। সময় কাটানোর জন্য আমরা একে খুব ভালো উপায় হিসেবে দেখতাম।’
সাইবার বুলিংয়ের শিকার ১৭ বছর বয়সী কিয়ারা দেশাই (আসল নাম নয়) বলেন, ‘স্কুল শেষ হলো, বাড়ি গেলাম আর মানসিক অত্যাচার থেকে বেঁচে গেলাম- বিষয়টা এখন এত সোজা নয়। প্রযুক্তির সুবাদে (অভিশাপে) মানসিক অত্যাচার নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইন্টারনেটে তো পালানো বা লুকানো কোনোটারই উপায় নেই। অবিশ্বাস্যভাবে মানসিক অত্যাচারী হিসেবে শক্তিশালী কারও বদলে এ ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে সহজ-সরল দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র এবং লেখাপড়া ছাড়া কিছু বোঝে না এমন কেউ আবির্ভূত হয়।’ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই কিয়ারা বলেন, ‘আমার সহপাঠী আমাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দিতে চাইতাম না। ফলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে আমার ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল খুলে বসে এবং আমার নামে কুত্সা রটনা করে। ব্যক্তিগত জীবনে আমি যে সমস্যাগুলোর মধ্যে ছিলাম সেগুলোও সে জানত এবং প্রোফাইলে তা লেখা হয়। বিষয়টি সামাল দেয়া একসময় আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়। ফলে দুই মাস ধরে সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই এবং অসামাজিক হয়ে যাই। কোথাও জটলা দেখলে আমার রীতিমতো ভয় লাগত। সবকিছু আবারও আগের মতো করার পেছনে আমার প্রিয় মানুষগুলোর সমর্থন এবং তিন কাউন্সিলর যুক্ত ছিলেন।’
মানসিক অত্যাচারের ক্ষেত্রে শুধু অত্যাচারিত নয়, অত্যাচারীও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সাইবার বুলিংয়ে জড়িত ব্যক্তিদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদা বাড়ানোর আরও ভালো উপায়ের কথা তাদের মাথায়ই আসে না। সত্যিকার জীবনে কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হয়, সেটা তারা বোঝে না। তারা মূলত অসামাজিক হয়ে থাকে। তাদের অনুশোচনা বোধ কম থাকে, যা তাদের আরও মারাত্মক অপরাধে অনুপ্রাণিত করে।