মঙ্গলবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ভ্যাট আদায়ে নভেম্বরে দেশে আসছে ১০ হাজার ইএফডি যন্ত্র
ভ্যাট আদায়ে নভেম্বরে দেশে আসছে ১০ হাজার ইএফডি যন্ত্র
পুরোপুরি কার্যকর হয়নি নতুন ভ্যাট আইন। প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় ছিল, কিন্তু তারপরও নানা ক্ষেত্রে বিপত্তি। অর্থবছরের চার মাস গেলেও আনা যায়নি ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি যন্ত্র। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম। তবে, প্রথম পর্যায়ে আগামী নভেম্বরে দেশে আসছে ১০ হাজার যন্ত্র। আর ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে দেয়া হবে সংযোগ।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, চীন থেকে আনা হচ্ছে ইএফডি যন্ত্র, যা সামনে মাসে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। তারপর ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা যাবে। কারণ যন্ত্র আসার পর তাতে সংযোগ স্থাপনের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। যন্ত্রগুলো প্রথমে চালু করা হবে বড় মার্কেট দিয়ে। যেমন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, বড় স্বর্ণের দোকান, বিউটি পার্লার, ওষুধের মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণীবিতানে। যন্ত্রগুলো ভালো কাজ করলে পরের চালানে বড় সংখ্যাক যন্ত্র আনা হবে।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে সব ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি, অর্থাৎ যারা ভ্যাটের আওতাধীন, তাদের বাধ্যতামূলক ইএফডি ব্যবহার করতে হবে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) চালু রয়েছে সেগুলোর সবকটি ইএফডি এর আওতায় আসবে। রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড, মিষ্টান্নভান্ডার, আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও জেনারেল স্টোর, সুপার শপ, বড় ও মাঝারি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণ ও রূপার প্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্র সরবরাহ করা হবে।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান আরও জানান, জুন ২০২০ সাল নাগাদ এক লাখ ইএফডি যন্ত্র স্থাপন করা যাবে। দুই লাখ যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার নেয়া হচ্ছে, এরপর সংযোজন করতে আর সময় লাগবে না। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে এখন আগের ইসিআর মেশিন ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যে ভ্যাট আদায় হচ্ছে তা যেন কোনো লিকেজ না হয় বা টাকা সরে না যায়। কারণ ইসিআর যন্ত্র এনবিআরের সার্ভারে সংযোগ ছিল না, তবে ইএফডি যন্ত্র সরাসরি সার্ভারে যুক্ত থাকবে। এতে লেনদেন পরিমাণ জানা যাবে। তবে, যন্ত্রের মূল্য দোকানদারদের কাছ থেকে কিভাবে নেয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, দুই বছর আগ থেকেই ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, নতুন আইন প্রবর্তনের আগেই ইএফডি মেশির নিয়ে আসা প্রয়োজন। কিন্তু এনবিআর পারেনি। চলতি বাজেটে কার্যকর হয়, ভ্যাট আইন। আরেকটা বাজেটের সময় চলে এসেছে। এরই মধ্যে কয়েক মাস চলে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইএফডি মেশিন দেশে এসে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, যতো দ্রত মেশিনটি দেশে এসে পৌঁছাবে, আসার পর এর প্রভাবটা কেমন হয় তা বোঝা যাবে। প্রভাবটা যদি এমন হয় এর ফলে ব্যবসায়ী কিংবা এনবিআর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই যন্ত্রগুলো কার্যকর হবে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইএফডি যন্ত্রটা পরীক্ষামূলকভাবে দিয়ে কাজটি শুরু করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এনবিআর প্রস্তুত ছিল না। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার যন্ত্র আসছে; যেখানে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, সেখানে এই সামান্য যন্ত্র দিয়ে কি হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ মনে করেন, ২০১৭ সালে যখন ভ্যাট আইন স্থগিত হয়, তখন থেকেই প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। তখন প্রস্তুতি নিলে এখন অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, অনলাইন কার্যক্রমে যতোদিন গতি আনা যাবে না ততোদিন রাজস্ব আদায়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম ৩০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ইএফডি যন্ত্র চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রথম ধাপে আনা হচ্ছে মাত্র ১০ হাজার। ভ্যাট সংগ্রহের জন্য এক লাখ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস কিনবে সরকার। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৩১৫ কোটি ৮৮ লাখ ২১ হাজার টাকা।