মঙ্গলবার ● ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » রোহিঙ্গামুক্ত করতে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার চেক করবে ইসি
রোহিঙ্গামুক্ত করতে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার চেক করবে ইসি
চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার ফের চেক করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। হালনাগাদ করা পুরো তথ্যভাণ্ডার রোহিঙ্গাদের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে ভোটার তালিকায় কোনো রোহিঙ্গা থাকলে তাদের ধরা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় পরিদর্শন শেষে নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের ঢুকে পড়া নিয়ে অনেকেই ইসির দায় আছে বলে মন্তব্য করছেন। আমি বলবো না যে আমাদের কোনো দায়ভার নেই।
তিনি বলেন, ২০০৭-৮ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য ইসি ১০ হাজার ল্যাপটপ কেনে। কাজ শেষে সেসব ল্যাপটপের অধিকাংশ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। এখন এসব ল্যাপটপের মাধ্যমে যদি কিছু ঘটে থাকে সেটার দায়ভার নির্বাচন কমিশন অবশ্যই নেবে। আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করবো কোথায়, কীভাবে এসব ঘটনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, যে নিয়মে আমরা তথ্যভাণ্ডারে তথ্য আপলোড করি, সে নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটলে প্রয়োজনবোধে সেসব তথ্য ব্লক করে ফেলবো। ওই ভোটারদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করবো। যদি সঠিক পাওয়া যায় তাহলে ব্লক থেকে তাদের রিলিজ করবো। অন্যথায় তথ্যগুলো রিমুভ করবো।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিশ এবং ছবি সংগ্রহ করা আছে। এখন ভোটার তালিকায় থাকা ফিঙ্গার প্রিন্ট, আইরিশ এবং ছবির সঙ্গে এসব মিলিয়ে দেখলেই রোহিঙ্গা ধরা যাবে। চাইলেও এসব রোহিঙ্গারা ফের ভোটার হতে পারবে না।
তথ্যভাণ্ডারের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের ধরা কঠিন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা তিনধাপে একজন ভোটারের তথ্য যাচাই করি। প্রথমে ইসি কর্মীরা ভোটারের বাড়ি যায়। তারপর ভোটারের বাবা-মা, দাদা-দাদীর পরিচয় জানতে চায়। সর্বশেষ ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং ছবি তুলতে যখন ভোটার কেন্দ্রে আসে তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের যাচাই করেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ তিন ধাপে যদি কেউ ধরা না পড়ে, কোনো জনপ্রতিনিধি যদি না বলেন- ওমুক আমার এলাকার নন, তাকে আমি চিনি না, বা সে রোহিঙ্গা- তখন রোহিঙ্গা খুঁজে বের করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই ফাঁকে কেউ কেউ ভোটার তালিকাতেও ঢুকে পড়ে।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে সারা দেশের ৩২টি এলাকাকে আমরা বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছি। সেখানে ভোটার হতে গেলে প্রচলিত ফরমের বাইরে আরেকটি বড় ফরম পূরণ করতে হয়। ওই ফরমে তার পূর্বপুরুষসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে। এরপর ওই এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত আমাদের বিশেষ কমিটি সেগুলো যাচাই করে। তারাই ছাড়পত্র দেয়। ছাড়পত্র পেলে আমরা ভোটার করি।
‘এখন যেসব রোহিঙ্গাদের তথ্য রোহিঙ্গা তথ্যভাণ্ডারে নেই, বা যারা ৩২টি বিশেষ অঞ্চলের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে- তাদের ধরাটা মুশকিল। সে জন্য সকল নাগরিক এবং জনপ্রতিনিধির কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ থাকবে, রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশের নাগরিক নন- এমন কেউ যদি ভোটার হতে আসে আমাদের জানান। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, এখান থেকে ঢাকায় গিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করবো। সেই ওয়ার্কশপে বিশেষ অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার যারা কাজ করছেন তাদের নিয়ে বসবো। এখানে কিছু কিছু বিষয় আছে টেকনিক্যাল, কিছু কিছু বিষয় আছে নন টেকনিক্যাল। এসব বিষয়ে কী করতে হবে সেটা আমরা বিশদভাবে ঠিক করবো। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্ত করব।
‘আমার জানা মতে কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডারে খুব বেশি রোহিঙ্গা ভোটার নেই। তবে যারা আছে তাদের খুঁজে বের করে রিমুভ করা হবে। চেষ্টা থাকবে ভোটার তালিকা যতখানি রোহিঙ্গামুক্ত করা যায়।’
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভূক্তি করার অভিযোগে চট্টগ্রাম নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার রয়েছেন। দুদক এবং সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে ওই কর্মচারীরা নির্বাচন কমিশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ কাজে তাদের সহযোগিতা করতেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির পেছনে কারা দায়ী এসব নিয়ে ধারনা বা মনে করার কিছু নেই। তবে ইসির কেউ যদি এ কাজে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। এখানে কোনো রকমের দুর্নীতি বা নিয়মের বাইরে কোনো কিছু হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।