রবিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » উখিয়া ও টেকনাফে থ্রিজি-ফোরজি বন্ধে ভোগান্তিতে স্থানীয়রা
উখিয়া ও টেকনাফে থ্রিজি-ফোরজি বন্ধে ভোগান্তিতে স্থানীয়রা
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধ ঠেকাতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে উখিয়া ও টেকনাফে থ্রিজি এবং ফোরজি মোবাইল সেবা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।খবর বাংলানিউজ ২৪ এর।
তাদের অভিযোগ, মোবাইল অপারেটরগুলো রোহিঙ্গা শিবিরে থ্রিজি ফোরজি সেবা বন্ধ করলেও ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও মিয়ানমারের মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার করে বিকল্প ব্যবস্থায় ঠিকই এ সেবাগ্রহণ করছে রোহিঙ্গারা। কিন্তু ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
শুধু তাই নয়, মোবাইল ডেটার মাধ্যমে সেবাগ্রহণকারী উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে ইন্টারনেট নির্ভর মানুষদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রতন দে বলেন, শুধু থ্রিজি ফোরজি নয়, টুজি নেটওর্য়াকেও মোবাইলে কথা বলার সময়ও ঘন ঘন কল ড্রপ হচ্ছে। কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
‘‘তারা (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারের ‘এমপিটি’ নামের একটি মোবাইল অপারেটরের সিম দিয়ে ইন্টারনেট সেবা ভোগ ঠিকই ভোগ করছে। এছাড়া অনেক রোহিঙ্গা শিবিরে ব্রডব্যান্ড সংযোগও পৌঁছে গেছে। কিন্তু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির শেষ নেই।”
রতনের ভাষ্য, ‘মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের ফলে এ দেশের টাকা চলে যাচ্ছে সেখানে। আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে নানা অপরাধ তো করছেই আবার বেআইনিভাবে মিয়ানমারের মোবাইল সিমও ব্যবহার করছে।’
উখিয়ার থাইংখালী এলাকার ব্যবসায়ী এন আমিন ছোট্টু বলেন, মোবাইল নেটওর্য়াক নিয়ে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করে ঠিকই ফোরজি সেবা গ্রহণ করছে। ওই সিম দিয়েই তারা মোবাইলে রিচার্জ করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের ভেতরে গড়ে তোলা মোবাইলের দোকানের কারণে রোহিঙ্গারা হাত বাড়ালেই সিম আর মোবাইল সেট পাচ্ছে। এসব দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়ানোর বর্ণনা দিয়ে উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরোয়ার আলম শাহীন বলেন, রোহিঙ্গারা প্রযুক্তি নির্ভর নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছিলো। এমন পরিস্থিতিতে তাদের অপরাধ দমনে সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মোবাইলে থ্রিজি ও ফোরজি সেবা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখন রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রাও মোবাইল সেবা নিয়ে দারুণ ভোগান্তিতে রয়েছে।
পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় সব ধরনের মোবাইল সিমসহ নতুন সংযোগ প্রদানও বন্ধ রয়েছে। মোবাইলে আগের মতো রিচার্জও করা যাচ্ছে না। তবুও রোহিঙ্গারা মোবাইল সেবা নিয়ে স্থানীয়দের চেয়ে এগিয়ে অাছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীও থ্রিজি-ফোরজির সেবায় একটু সমস্যায় পড়ছেন। আমি নিজেও সমস্যায় আছি, অফিসে ব্রডব্যান্ডের সংযোগ থাকলেও বাইরে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সংযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরাও পাচ্ছি। শুনেছি অনেক ব্রডব্যান্ড কোম্পানি রোহিঙ্গাদের সংযোগ দিয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, থ্রিজি-ফোরজি সেবা বন্ধ করার পরকিছু কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমারের মোবাইল কোম্পানির সিম বাংলাদেশে নিয়ে আসছে এবং অনেকে এই সিম ব্যবহারও করছে এটা ঠিক।
‘এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নজরদারির জন্য ক্যাম্পগুলোতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা কিভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রোহিঙ্গা শিবিরে পুলিশ ক্যাম্প বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। এছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে যৌথ টহল জোরদারসহ আগের চেয়ে নজরদারি অনেক বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সরকারের সিদ্বান্ত অনুযায়ী বিটিআরসি রোহিঙ্গা শিবিরে থ্রিজি-ফোরজি সেবা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে এটা যদি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে যায় সে বিষয়টিও অবশ্যই সরকার বিবেচনা করবেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে উখিয়া-টেকনাফে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। এ কারণে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ দুই উপজেলায় মোবাইল সিগন্যাল শক্তিশালী করার কোনো পরিকল্পনা নেই।