বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ই-নামজারিতে বদলে গেছে যশোর ভূমি অফিসের চিত্র
ই-নামজারিতে বদলে গেছে যশোর ভূমি অফিসের চিত্র
জমি কেনার পর নামপত্তন নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না এতদিন। ভূমি অফিসে গিয়ে ঘুষ দিয়ে তারপর নামপত্তন করতে হতো। মানুষের ভোগান্তিও ছিল চরমে। কিন্তু সেদিন আর নেই। যশোর সদর ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কমে গেছে। ঘরে বসেই সবকিছু জানতে পারছে এসএমএসরে মাধ্যমে। ডিজিটাল যুগের সুবিধা পেতে শুরু করেছে মানুষ।
যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামের সফিয়ার রহমান। ছয় বছর আগে ৩১ শতক জমি কিনেছিলেন। সেই জমির নামপত্তন ছিল না। আরবপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে তিনি জানতে পারেন অনলাইনে নামপত্তনের আবেদন করা যায়। নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেন তিনি। এরপর চারধাপে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের (এসএমএস) মাধ্যমে জানতে পারেন কাজের অগ্রগতি। সর্বশেষ এসএমএস পেয়ে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে গ্রহণ করেন নামপত্তনের কাগজ। সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে একটি টাকাও দিতে হয়নি। ঘুষ, দুর্নীতি ও দালালের হয়রানি ছাড়াই ২৮ কর্মদিবসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হওয়ায় খুশি সফিয়ার রহমান। তার মতো আরেকজন সেবাগ্রহীতা সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কামাল হোসেন।
ক্রয়সূত্রে ১৪ শতক জমির মালিক। নামপত্তনের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করেন। তিনিও ভোগান্তি ছাড়াই সহজেই সেবা পেয়েছেন। শুধু সফিয়ার রহমান কিংবা কামাল হোসেন নয়, ১৯ মাসে যশোর সদর উপজেলায় অনলাইনে নামজারির সেবা পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৯১ জন। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব এনেছে ই-নামজারি পদ্ধতি। জেলার মডেল সদর উপজেলার ই-নামজারি কার্যক্রম সফল হওয়ায় চলতি বছরের জুলাই মাসে বাকি সাত উপজেলায় চালু করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ জাকির হাসান জানান, ২০১৭ সালের নবেম্বর মাসে এই উপজেলায় অনলাইনে নামজারির আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম ই-নামজারি চালু হয়। গত ১৯ মাসে এ উপজেলায় ই-নামজারির আবেদন জমা পড়েছে ১৯ হাজার ৮১৮টি। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮ হাজার ২৯১টি আবেদন। ২০১৭ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত আবেদন পড়েছিল ৮ হাজার ৫৭২টি। এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭ হাজার ৮০৩টি। ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ১১ হাজার ২৪৬টি আবেদন জমা পড়ে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৮টি আবেদন। অর্থাৎ প্রত্যেক মাসে গড়ে এক হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। অনলাইনে আবেদন নেয়ায় মানুষের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে।
জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমি সংস্কার বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম কর্তৃক পরিচালিত ই-মিউটেশন (নামপত্তন) সেবা চালু করা হয়। ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে নির্ধারিত দুই শ’ টাকা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপর সেই অনলাইন আবেদন ও নথিপত্র চলে যায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রতিবেদনের জন্য। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রতিবেদন হয়ে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে চলে যায় শুনানির জন্য। শুনানি শেষে সরকার নির্ধারিত এক হাজার ১৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। প্রত্যেকটি ধাপেই সেবাগ্রহীতাকে টেলিটকের ১৬৩৪৫ নম্বর থেকে এসএমএস দেয়া হয়। শেষ ধাপে ই-নামজারির তথ্য নিশ্চিত করা হয়। সর্বোচ্চ ২৮ কার্যদিবসের মধ্যেই আবেদন নিষ্পত্তি হয়। এসএমএস পেয়ে আবেদনকারী উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নামপত্তনের কাগজ সংগ্রহ করতে পারেন। এতে আগের মতো ঘাটে ঘাটে ঘুষ, দুর্নীতি ও দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়েছে। উপকারভোগী শহরতলীর শেখহাটি এলাকার রুহুল আমিন বলেন, সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছি। জমির নামপত্তনের জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করেছিলাম। নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোন টাকা দিতে হয়নি। মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমেই কাজের অগ্রগতি জেনেছি। দ্রুত কাজ হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নামজারি হওয়ায় দুর্নীতি কমেছে। ভেকুটিয়া গ্রামের বদর উদ্দিন বলেন, বর্তমান এসিল্যান্ড জাকির হাসান স্যারের চেষ্টায় দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে ভূমি অফিস। ভোগান্তি ছাড়াই সহজে মিলছে সেবা। আরবপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা এসএম আরিফুজ্জামান বলেন, গ্রামে বসে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ভূমি সেবা পাচ্ছেন সাধারণ নাগরিক।
ভূমি অফিসে গেলে অচেনা লোকের কাছে সেবা নিতে হয়রানি হতে হতো। আমরা গ্রামবাসীর পরিচিতজন। আমাদের সেবামূল্য নির্ধারিত। সে কারণে বাড়তি টাকা গচ্চা দিতে হয় না। প্রতিটি অনলাইন আবেদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাখিল করে দেয়া হয়Ñ যে কারণে তাদের অর্থের সঙ্গে সময়ও বেঁচে যাচ্ছে। নওয়াপাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা সেলিম রেজা জানান, ই-নামজারি চালু হওয়ায় সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। সদর উপজেলা ভূমি অফিসের ভূমি-বিষয়ক ই-সার্ভিস সেন্টারের উদ্যোক্তা আমিন মাহমুদ বাবু বলেন, আগে সেবা নিতে আসা মানুষ দালালের খপ্পরে পড়ত। এখন সেই সুযোগ নেই। সেবাগ্রহীতার ভোগান্তি কমেছে। অর্থ ও সময়ও সাশ্রয় হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল ইসলাম বলেন, ই-নামজারি চালু করায় হাতের নাগালে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে সহজেই সাধারণ মানুষ আবেদন করছে। ভোগান্তি ছাড়াই পাচ্ছে সেবা। এতে দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে ভূমি অফিস। সদর উপজেলায় এই কার্যক্রম সফল হওয়ায় জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও চালু করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।