রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি জার্নাল » ফাইভ-জি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
ফাইভ-জি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এরই মধ্যে চালু হয়েছে পঞ্চম প্রজন্মের মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ফাইভ-জি। তবে নতুন ধরনের এই নেটওয়ার্ক যত বিস্তৃত হচ্ছে, তা সম্পর্কে মানুষের মনে তত ভুল ধারণার জন্ম নিচ্ছে।
২০২৩ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি ফাইভ-জি গ্রাহক তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফাইভ-জি মুঠোফোনে শুধু দ্রুতগতির নেটওয়ার্কই এনে দেবে না, চালকবিহীন গাড়ি, ড্রোন, ইন্টারনেট অব থিংসসহ নানা প্রযুক্তিও এগিয়ে যাবে এর সুবাদে।
বলা হচ্ছে, ফাইভ-জি বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে। সুতরাং তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন যে থাকবে, তা-ই স্বাভাবিক। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী সিনেট-এর অনলাইন সংস্করণে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
ফাইভ-জি কি নিরাপদ
ফাইভ-জির বেতার তরঙ্গের তেজস্ক্রিয়তা থেকে ক্যানসার হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। একদম অমূলক আশঙ্কা নয়। ২০১১ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেলফোনের তেজস্ক্রিয়তা মানব শরীরে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে বলে উল্লেখ করেছিল।
২০১৬ সালে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় বেতার তরঙ্গের তেজস্ক্রিয়তা ও ইঁদুরের মধ্যে ক্যানসারের সম্পর্ক দেখিয়েছিল। আইফোন এবং স্যামসাং গ্যালাক্সির মতো স্মার্টফোনে এই তেজস্ক্রিয়তা আরও বেশি।
তবে স্মার্টফোন ও ক্যানসারের মধ্যে সম্পর্ক বললে একটু বেশি বলা হয়ে যায়। কারণ, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য অনেক যন্ত্রপাতি থেকেই কিছু না কিছু তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে থাকে। ২০১৬ সালের গবেষণায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়েছিল। মানুষের শরীরে এতটা ক্ষতি করতে পারবে না। অবশ্য শতভাগ নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি।
ফাইভ-জি এলে বিদ্যমান ফোনের কী হবে
ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য ফাইভ-জি সমর্থিত হ্যান্ডসেটের প্রয়োজন হবে। বর্তমানের বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই তা নেই। তবে কিছু কিছু সূত্র বলছে, ফাইভ-জি চালু হলে ফোর-জি নেটওয়ার্কেও বেশি গতি পাওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া ফোর-জি নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করেই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। মানে হলো ফাইভ-জি চালু হলেও ফোর-জি নেটওয়ার্কে দিব্যি কাজ চালাতে পারবেন।
জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের সব মুঠোফোন সংযোগের ১৫ শতাংশ হবে ফাইভ-জি নির্ভর। ওই একই বছরে ফোর-জি এলটিই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের হার ২০১৮ সালের ৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৯ শতাংশে পৌঁছাবে। সোজা কথায়, ফাইভ-জি এলেও ফোর-জি নেটওয়ার্কের বিস্তার শিগগিরই থামছে না। তা ছাড়া যাঁরা ফাইভ-জি ব্যবহার শুরু করবেন, তাঁদের দখলে যেটুকু ফোর-জি ব্যান্ডউইডথ ছিল, তা মুক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং বলা যায়, ফোর-জির গতি আরও বাড়বে।
রিমোট সার্জারি ও স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ব্যবহার নিশ্চিত করবে ফাইভ-জি
এ বছরের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফাইভ-জি সংযোগের সাহায্যে কীভাবে একজন ডাক্তার দূর থেকে শল্যবিদকে ভিডিও দেখে দেখে নির্দেশনা দেবেন, তা দেখানো হয়েছে। তবে এখনই পুরোপুরি নির্ভর করা যাবে বলে মনে হয় না। আর স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফাইভ-জি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে না বলেও মনে করেন অনেকে। তবে ভিডিও সম্মেলনের গতি যে বাড়বে, তা নিশ্চিত। আর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ব্যবহারও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেটফ্লিক্সে ভিডিওর মান কি বাড়বে
নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য ভিডিও দেখার ওয়েবসাইটে ভিডিওর মান সাধারণত এইচডি বা ফুল-এইচডি হয়ে থাকে। বর্তমানের গতি তা দেখার জন্য যথেষ্ট। তবে ধীরে ধীরে ফোর-কে বা আরও বেশি রেজল্যুশনের ভিডিওর পরিমাণ বাড়লে ফাইভ-জি থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
ডিজিটাল বিভাজনের কী হবে
ফাইভ-জি এলে ডিজিটাল বিভাজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশে ফোর-জিই ঠিকমতো চালু হয়নি। এতে এক অঞ্চলের মানুষ উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা পেলেও বাকিরা ফোর-জি বা আগের প্রজন্মের নেটওয়ার্কে পড়ে থাকছে। ফলে বিভাজন বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র: সিনেট