মঙ্গলবার ● ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » সার্ভার হ্যাক করে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস ও শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় মামলা করবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর
সার্ভার হ্যাক করে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস ও শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় মামলা করবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভার হ্যাক করে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাস ও শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা করতে যাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। রাজধানীর রমনা থানায় আজ বা আগামীকাল এ মামলা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন শুল্ক গোয়েন্দার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এনবিআরের সার্ভারে ৩৭৭৭ বার ঢুকে জাল চিঠি ইস্যু ও পণ্য খালাসের এ ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
এ সম্পর্কে চলতি বছর জানুয়ারিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য অফিসে বদলি হওয়ার পরও এক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ‘ইউজার আইডি’ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে’ ৩ হাজার ৬৮১ বার লগইন করা হয়েছে। অন্যদিকে অবসরে যাওয়া আরেক রাজস্ব কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৬ বার সিস্টেমে লগইন করা হয়েছে। আমদানি করা কিছু কনটেইনার খালাসে শুল্ক গোয়েন্দার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এ দুই আইডিতে লগইন করে চালান খালাস করা হয়। এ ঘটনায় দুই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মালিকের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা এবং তাকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে এনবিআর থেকে চারটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
শুল্ক গোয়েন্দা তাদের তদন্ত শেষে এবার ২২টি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আসে। ‘এনবিআরের সাভারে ঢুকে কর্মকর্তাদের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হতে পণ্য ও কনটেইনার ছাড়করণ’ শীর্ষক ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অর্থের বিনিময়ে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের ৩২ কর্মকর্তা। পণ্য খালাসের বিভিন্ন স্তরের এসব কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদ থাকায় অভিনব কায়দায় পণ্য খালাস হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
জালিয়াতিতে জড়িত কর্মকর্তারা এখনো কাস্টম হাউসে কর্মরত। ফলে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে। জালিয়াতির ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বদলিসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয় ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২২টি চালান ছাড়ের ঘটনায় জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা, অবসরপ্রাপ্ত বা অন্য স্থানে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড প্রযুক্তির ইউজার আইডি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, চট্টগ্রাম কাস্টমসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করা হোক।
অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে কাস্টমসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আমদানিপণ্যের যথাযথ শুল্ক আদায় না করে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসে সহযোগিতা করছেন। সুচতুর অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কনটেইনারে পণ্য নিয়ে এসে কায়িক পরীক্ষা না করে উচ্চ শুল্ক হার এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে ২২টি চালানের কনটেইনার নম্বর, ঘোষিত পণ্য, বিল অব অ্যান্ট্রি, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের নাম উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব চালানে ঘোষণাবহির্ভূত, উচ্চ শুল্ক হারযুক্ত, আমদানি-নীতি আদেশের পরিপন্থী, জাতীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিযুক্ত পণ্য থাকায় চালানগুলো খালাস না করার অনুরোধ থাকার পরও অবৈধ অর্থের বিনিময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা কনটেইনার খালাসে সহযোগিতা করেছেন।