সোমবার ● ২৬ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » বেসরকারী খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয়ার বিধান রেখে তৈরি হচ্ছে নীতিমালা
বেসরকারী খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয়ার বিধান রেখে তৈরি হচ্ছে নীতিমালা
বেসরকারী খাতে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয়ার বিধান রেখে নীতিমালা হচ্ছে। লাইসেন্সের জন্য ৩ কোটি টাকা ফির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবছরের নবায়ন ফি ৫০ লাখ টাকা এবং জামানত হিসাবে ২ কোটি টাকা জমা রাখার বিধান রেখেছে। এসব প্রস্তাব দিয়ে বিএসসিসিএল (সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) নীতিমালা তৈরি করে বিটিআরসির কাছে জমা দিয়েছে। বিটিআরসি এই নীতিমালা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ১৫ দিন আগে নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় নীতিমালার কোন অনুমোদন দেয়নি। পরে তা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কেন, কি কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয়ে নীতিমালাটি ফেরত পাঠিয়েছে তা জানা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএলের দীর্ঘ ১৪ বছর কোন নীতিমালা নেই। নীতিমালা অনুমোদন হলে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিও লাইসেন্সের আওতায় আসবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) এমডি মশিউর রহমান বলেন, দেশে একটিমাত্র কোম্পানি থাকার কারণে এতদিন কোন প্রকার নীতিমালা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলেছে। বেসরকারী কোন কোম্পানি যদি ক্যাবল স্থাপন করতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে ওই কোম্পানি কিসের ভিত্তিতে চলবে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর থেকে নীতিমালা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি চলছে। একটি কোম্পানি থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক বেসরকারী কোম্পানি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে আগ্রহী। আমাদের বিটিআরসি কোন লাইসেন্সও দেয়নি। একটি পারমিটের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি চালানো হচ্ছে। এবার অবশ্য একটা নীতিমালা তৈরি করার ওপর সরকার তাগিদ দিয়েছে। আমরা একটা নীতিমালা করে পাঠিয়েছি। ওই নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে হবে। আমি জেনেছি, অর্থ মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি আবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় হয়ত কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। প্রথমে খসড়ায় অবশ্য এ দুটি অঙ্ক যথাক্রমে ১০ কোটি ও তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছিল। লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিকে ১ শতাংশ হারে রাজস্ব শেয়ার করতে হবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে। তাছাড়া জামানত হিসেবে দুই কোটি টাকা জমা রাখাতে হবে। পরে তা সংশোধন করে লাইসেন্সের জন্য ৩ কোটি টাকা ফির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবছরের নবায়ন ফি ৫০ লাখ টাকা এবং জামানত হিসাবে ২ কোটি টাকা রাখার বিধান রেখেছে।
সাবমেরিন ক্যাবলের এমডি মনে করেন, নীতিমালা পাস হয়ে গেলে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে। যেভাবে চলছে এভাবে কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না। সরকার বেসরকারী কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হয়। পুরোপুরি চালু হয় ২০০৬ সালে শুরুর দিকে। এই ক্যাবল সংযোগ দেয়ার পর দীর্ঘদিন পর হলেও সরকার বেসরকারী কোম্পানিকেও দেশের মধ্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ দেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা চিন্তা করছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত (প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ল্যান্ডিং স্টেশন) এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ প্রথম চালু হয়। দ্বিতীয় সি-মি-উই-৫ ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কুয়াকাটায় অবস্থিত। এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ (সাউথ এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) মালিক হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ এর মালিক হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মালিকও এই ১৬ টি দেশ। এখন চিন্তা করা হচ্ছে সি-মি-উই-৬ ক্যাবলের কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। এটা হলে দেশে ইন্টারনেট নিরবচ্ছিন্ন হবে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে এক হাজার ২শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে বিএসসিসিএল দিচ্ছে ৮০০ জিবিপিএস। বাকিটা ভারত থেকে আনছে বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানি। দিন দিন দেশে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বাড়ছে। সামনের দিনে এ চাহিদা আরও বাড়বে। তখন বিএসসিসিএলের দুটি ক্যাবলে চাহিদা মেটানো যাবে না। এ কারণে তৃতীয় ক্যাবল বা বেসরকারী পর্যায়ের ক্যাবলের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
বিএসসিসিএলের এমডি মশিউর রহমান বলেন, সি-মি-উই-৫ নতুন কেবল। এর মেয়াদকাল ২৫ বছর। তাছাড়া ক্যাবলটি সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সি-মি-উই-৪ ক্যাবল ২০০৫ সালে স্থাপন করা হয়। এই ক্যাবলের মেয়াদকাল ২০ বছর। কেবলটি বেশ কয়েক দফা মেরামত এবং আপগ্রেটেশনও করা হয়েছে। এ কারণে ২১ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবলের বিভিন্নস্থানে রিপিটার বসানো আছে। রিপিটার হচ্ছে ব্যান্ডউইথের গতি বাড়ানোর একটি যন্ত্রের নাম। যন্ত্রটির কোথাও সমস্যা দেখা দিলে ব্যান্ডউইথ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হবে। এ জন্য আমরা সি-মি-উই-৬ ক্যাবলের কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার জন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। তবে এই কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগেই সাবমেরিন ক্যাবল নীতিমালা তৈরি হয়ে যাবে।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ