বৃহস্পতিবার ● ২২ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » আইএসপিদের বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্যারেন্টাল গাইড লাইন’ মানতে হবে
আইএসপিদের বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্যারেন্টাল গাইড লাইন’ মানতে হবে
নিরাপদ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে এবার ‘প্যারেন্টাল গাইড লাইন’ মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হবে। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। গাইড লাইনটি করা হয়েছে অনেক ভেবেচিন্তে। কারণ, অভিভাবকরা খুব সহজে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইনে কি চলবে তা ঠিক করতে পারবেন। তাদের সন্তানরা যা খুশি তা দেখতে পারবেন না। এতে সৃজনশীল কাজেই সন্তানরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা এই গাইড লাইনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে যাদের লাইসেন্স নেই এমন সব আইএসপি গাইড লাইন নাও মানতে পারেন যদি কোন তদারকি না থাকে। অনেক পাড়া-মহল্লায় মস্তানদের হাতেই ইন্টারনেট ব্যবসা চলছে। তারা কোন না কোন আইএসপির কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে সরকার ইন্টারনেটকে নিরাপদ করার জন্য একটি ভাল উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তদারিকীর অভাবে যেন উদ্যোগটির সূচনালগ্নেই মৃত্যু না ঘটে এ দিকটি খেয়াল রাখতে মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কারণ দেশে অনেক ভাল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্ত পরে তদারকীর অভাবে তার মৃত্যু ঘটেছে। সাধারণত ব্রডব্যান্ড সংযোগে রাউটার দিয়ে ওয়েবসাইট বন্ধ করা গেলেও ওই পদ্ধতিকে ঝামেলা মনে করেন অধিকাংশ অভিভাবক। তাই অভিভাবকদের সচেতন করতেও আইএসপিদের দায়িত্ব দেয়া উচিত; যাতে অভিভাবকরা প্রযুক্তিটি ভালভাবে শিখে নিতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতিটি আইএসপিদের প্যারেন্টাল গাইড লাইন দেয়া হয়েছে। বাসা-বাড়িতে অভিভাবকের সন্তানরা কোন্্ পর্যন্ত যেতে পারবে আর পারবে না তার ওপর এই গাইড লাইন দেয়া হয়। এটা প্রতিটি আইএসপির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে অভিভাবকরা সহজেই পরিবারের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারবেন। ব্রডব্যান্ড লাইনে অভিভাবকরা যে কোন ওয়েবসাইট বা কনটেন্ট বন্ধ করতে পারবেন। যদি কোন আইএসপি এই গাইড লাইন না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যে সাড়ে ২২ হাজার পর্নো সাইড বন্ধ করেছি। ইন্টারনেটকে নিরাপদ সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিটিআরসিকে বলা হয়েছে, দেশের মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারবেন-তবে সেটা হতে হবে ভাল কাজের জন্য। কোন গুজব বা অপপ্রচার ও পর্নো সাইট দেখার জন্য নয়। একটা সভ্য জাতি যেভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঠিক সেভাবেই দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার হবে। বিটিআরসি ইতোমধ্যে সেই কাজ শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ তার ফল ভোগ করতে পারছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে রাউটার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইএসপিদের নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। নির্দেশ মেনেই বড় বড় আইএসপি কাজ শুরু করে দিয়েছে। নতুন যারা আইএসপির লাইসেন্স নিচ্ছেন তাদের লাইসেন্সের সঙ্গেই এটি বলে দেয়া হচ্ছে। আর পুরনো আইএসপিদের ক্ষেত্রে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেট যেমন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তেমনি এখানে সুরক্ষা দেয়া আরও বেশি প্রয়োজন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি ও আম্বার আইটির সিইও আমিনুল হাকিম বলেন, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দুভাবেই ব্রডব্যান্ডে লাইনে এই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হার্ডওয়্যার ও সফওয়্যার দুই ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এখানে একটু উচ্চ প্রযুক্তির রাউটার দিয়ে তা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রয়োগ একদমই কম। সচেতনতার অভাব, একটু বেশি খরচ, কিভাবে করতে হবে তা না জানা ইত্যাদি কারণে অভিভাবকরা এ ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহী হন না। তবে এখন সময় এসেছে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার। কারণ ছেলেমেয়েরা যে কোন গ্যাম্বলিং.ড্রাগ, আর্মস, বিভিন্ন খারাপ সাইট থেকে বিরত রাখতে এই পদ্ধতি সাহায্য করবে। সরকার আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে তা আমরা পালন করছি। প্রয়োজন হলে কোন অভিভাবক রাউটারে অপ্রয়োজনীয় সাইট বন্ধ করা শিখতে চাইলে আমরা সে দায়িত্বও পালন করতে রাজি আছি। সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেটা আইএসপিরা নিজেরা করবে। এখানে অভিভাবকদের একটি ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেয়া হবে যার মাধ্যমে তারা কি দেখতে চান আর চান না তা ঠিক করবেন। এটা তারা সহজেই ঠিক করতে পারবেন। খুব বেশি জটিল প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে না। সরকারের নির্দেশ অনুয়ায়ী কাজ চলছে। এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে আইএসপিদের অল্প কিছু ইনভেস্টমেন্টও করতে হবে। তা করতে হলেও ক্ষতি নেই। কারণ একজন ব্যবসায়ী প্রথমে অভিভাবক। সন্তানকে নিরাপদ রাখতে ও পরিবারের সুরক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে আইএসপিরা।
আমিনুল হাকিম জানান, দেশে এখন প্রায় সাড়ে ১৭শ’ বৈধ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর রয়েছে। এর বাইরে লাইসেন্স নেই এমন আইএসপির সংখ্যা ৫ হাজারের মতো। দেশে সব ধরনের ব্যবহারকারীর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট গড়ে তুলতে তাদের আগে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। টেলিযোগাযোগ আইনের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এই সেক্টরে কোন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। এরপর তাদের লাইসেন্সের আওতায় আনা না আনা বিটিআরসি বুঝবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা মতে বিটিআরসি কয়েক দফা অবৈধ আইএসপিদের লাইসেন্স করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কিন্ত কেউ লাইসেন্স নেননি। আর এ কাজটি করছে পাড়া-মহল্লার মস্তানরা। ৫ হাজার অবৈধ আইএসপি ব্যবসায়ী রেখে সরকারের এমন উদ্যোগ সফল করা কঠিন হবে।