বুধবার ● ২১ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » গ্রামীণফোন ও রবির এনওসি দেওয়া বন্ধ করেছে বিটিআরসি
গ্রামীণফোন ও রবির এনওসি দেওয়া বন্ধ করেছে বিটিআরসি
বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির এনওসি বা অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। ফলে বিপাকে পড়েছে অপারেটর দুটি। নতুন প্যাকেজ অনুমোদন না হওয়ায় অপারেটররা গ্রাহকের সামনে নতুন অফার নিয়ে হাজির হতে পারছে না। একারণে ঈদুল আজহায় অপারেটর দুটির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বকেয়া অর্থ আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিটিআরসি। অপারেটর দুটিও এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছে বলে জানা গেছে।
এনওসি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরে অপারেটর দুটি কোনও প্যাকেজ (ভয়েস ও ইন্টারনেট) চালু, নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, নতুন সেবা বা সফটওয়্যার কিনতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অপারেটরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘ভয়েস ও ইন্টারনেটে নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। তবে কী পরিমাণে পড়েছে তা কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে।’ ঈদের ছুটির কারণে পরিসংখ্যান তৈরি হতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে ১২ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে গ্রামীণফোন এবং ৮৬৭ দশমিক ২৩ কোটি টাকার জন্য রবিকে নোটিশ পাঠায় বিটিআরসি। টাকা পরিশোধের জন্য অপারেটর দুটিকে দুই সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়। বিটিআরসি থেকে তখন বলা হয়, গ্রামীণফোন ও রবির সর্বশেষ অডিটের পরে এই ডিমান্ড লেটার পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় বিটিআরসির কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ৪ জুলাই অপারেটর দুটির ব্যান্ডউইথ সীমিত করে দেওয়া হয়। এর পরে এই আদেশ প্রত্যাহার করে এনওসি দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ‘পাওনা আদায়ে কমিশন আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আইনি কাঠামোর বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এনওসি বন্ধের পরও তারা বকেয়া পরিশোধ না করলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এনওসি বন্ধের পরে গত ২৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে গ্রামীণফোন। সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরটি জানায়, বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তটি কোনোভাবেই গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে নেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের স্বাধীনভাবে সেবাগ্রহণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে মানসম্পন্ন ফোন-কল, ইন্টারনেট ব্যবহার, ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অধিকারকে খর্ব করছে।
অন্যদিকে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘ব্যান্ডউইথ সীমিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বন্ধের সিদ্ধান্তে শুধু গ্রাহকের ভোগান্তিই বাড়বে। অনাপত্তিপত্র বন্ধের কারণে বিনিয়োগ বন্ধ থাকবে, যার কারণে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নয়নের সব পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হবে। টেলিযোগাযোগ খাতে জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেমন-নেটওয়ার্ক পার্টনার, এনটিটিএনসহ আইটি সামগ্রী ও সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন লাইসেন্স প্রাপ্ত তিনটি টাওয়ার কোম্পানির ব্যবসাও এর ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে নতুন বিনিয়োগও আটকে যাবে। সব মিলিয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রাহকের ওপর বহুমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশী আইন ২০০১ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি চাপ প্রয়োগ করে বিতর্কিত দাবির টাকা উদ্ধারের চেষ্টা না করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করলেই দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা হবে।’