সোমবার ● ১৯ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হাইড্রোজেন হতে পারে ভবিষ্যতের জ্বালানি
হাইড্রোজেন হতে পারে ভবিষ্যতের জ্বালানি
বিকল্প জ্বালানিচালিত মোটরগাড়ির ধারণাটি এখনো অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে। কিন্তু গবেষকদের তৎপরতায় অর্জিত অগ্রগতির ফলে সে রকম ভাবনা থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। ‘নর্থ আমেরিকান অটো শো’ শীর্ষক মোটরগাড়ি প্রদর্শনীতে চলতি বছর হাইড্রোজেনচালিত গাড়িও ঠাঁই পেয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের আরো দ্রম্নত এগিয়ে যেতে হবে। বিদু্যৎচালিত গাড়ির বাজার এত দ্রম্নত বিস্তৃত হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে জ্বালানি ব্যয় ১ হাজার ৩০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড কমে যাবে- নতুন এক গবেষণায় এমনই তথ্য মিলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি চীনও থেমে নেই। সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর তালিকায় চীনও রয়েছে। দেশটি কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের প্রথম হাইড্রোজেনচালিত ট্রাম চালু করেছে। বর্তমান বিশ্বে হাইড্রোজেন গ্যাসের ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এ হাইড্রোজেন যেমন অবিশুদ্ধ, তেমনি এর উৎপাদন খরচও অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এবার জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। মোটরগাড়িতে এ গ্যাস ব্যবহার করাটা যেমন সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হবে, তেমনি গাড়ির গতিও হবে তুলনামূলক বেশি।বিজ্ঞানীরা শস্যের পরিত্যক্ত অংশ থেকে ওই হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন করবেন। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো একসময় রাস্তার আশপাশে পেট্রলপাম্পের জায়গা দখল করে নেবে জৈব জ্বালানি উৎপাদন কারখানাগুলো। ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীদের ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
হাইড্রোজেন জ্বালানি হিসেবে যেমন ব্যবহারের উপযোগী, তেমনি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে। তবে কম দামে এবং কার্বননিরপেক্ষ উপায়ে হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য নতুন প্রযুক্তি প্রয়োজন। ভার্জিনিয়া টেকের গবেষক পার্সিভ্যাল ঝ্যাং বলেন, তাদের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমতে পারে। আর হাইড্রোজেনই হবে ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব জ্বালানি।
ঝ্যাং ও তার সহযোগীরা নতুন ওই পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিমাণে হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যে গবেষণার জন্য ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। তাদের ওই পদ্ধতিতে ভুট্টাজাতীয় শস্যের বর্জ্য হিসেবে জমে থাকা চিনির শতভাগই হাইড্রোজেন গ্যাসে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এতে বায়ুমন্ডলে কোনো কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন হবে না। আর এ পদ্ধতিতে ভুট্টার খোসা এবং শাঁসেরও সদ্ব্যবহার হবে। চিনির বড় উৎস হিসেবে পরিচিত জাইলোজ থেকে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদনের বিষয়টি আগে কেবল তাত্ত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল।
ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন উৎপাদনে কোনো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হবে না। পাশাপাশি কোনো ভারী ধাতব পদার্থ ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই। মূলত প্রক্রিয়াজাত চিনি থেকেই ওই হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়। ঝ্যাং বলেন, স্থানীয় জৈব উপাদান থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনের ব্যাপারটি অর্থনৈতিকভাবেও অনেক লাভজনক হতে পারে। আর জৈব জ্বালানি ব্যবহারের এ পদ্ধতি প্রচলিত হলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর চাপ কমবে।
নতুন ওই পদ্ধতিতে উৎপাদিত হাইড্রোজেন হবে অত্যন্ত বিশুদ্ধ, যা যানবাহনের জ্বালানি কোষে ব্যবহারের বিশেষ উপযোগী। পদ্ধতিটি জটিল হলেও এর মাধ্যমে উৎপাদিত জ্বালানির কার্যকারিতা শতভাগ। জাইলোজ বা চিনিনির্ভর অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত জৈব জ্বালানি (যেমন ইথানল ও বিউটানল) এতটা কার্যকারিতা দেখাতে পারে না। ঝ্যাং আগেও হাইড্রোজেন উৎপাদনের একটি পদ্ধতি বের করেছিলেন, কিন্তু তা প্রয়োগ করে বেশি পরিমাণে উৎপাদনে যাওয়াটা অনেক বেশি ব্যয়বহুল ছিল।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প জ্বালানির অনুসন্ধান চলছে। হাইড্রোজেন ব্যবহারের ধারণাটি বেশ পুরনো। মার্কিন জ্বালানি দপ্তর স্বীকার করছে, বিশুদ্ধ ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার শুরু হলে জীবনযাত্রার ধরনে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে।