রবিবার ● ১৮ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » মোবাইলের গ্রে মার্কেটে পণ্য আসা ৪০ শতাংশ কমেছেঃ বিটিআরসি
মোবাইলের গ্রে মার্কেটে পণ্য আসা ৪০ শতাংশ কমেছেঃ বিটিআরসি
বিদেশ থেকে চোরাই পথে মোবাইল হ্যান্ডসেট আনার দিন শেষ হয়েছে। বাজারে এখন আর কেউ চোরাই পথে মোবাইল সেট এনে বিক্রি করতে পারছে না। বিটিআরসি এ বছরের শুরুতে ‘এনওসি অটোমেশন এ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ’ (এনএআইডি) চালু করার পর থেকে চোরাই পথে মোবাইল আসছে না বলে জানিয়েছে। বৈধ আমদানিকারক ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএম-পিআইএ) আর্থিক সহায়তায় এনএআইডি কার্যক্রম চালু করা হয়। তবে অনেক আমদানিকারক অভিযোগ করেছেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও বিটিআরসি মার্কেট টু মার্কেট পরিদর্শন করছে না। ফলে চোরাই পথে এখনও বিপুল পরিমাণ মোবাইল হ্যান্ডসেট দেশের মার্কেটে ঢুকছে।
সূত্র জানিয়েছে, আসল নকল মোবাইল চিনতে হলে- নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর (*#/,. ইত্যাদি বিশেষ চিহ্ন থাকবে না- শুধুমাত্র ১৫টি নম্বর থাকবে। ব্যবহৃত মোবাইলের ক্ষেত্রে *#০৬# চেপে প্রাপ্ত ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর ‘কেওয়াইডি’ ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে আইএমইআই নম্বরটি বিটিআরসি’র ডাটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে কিনা তা জানা যাবে। এখান থেকেই বোঝা যাবে মোবাইল আসল না নকল। আইএমইআই ডাটাবেজে ২ কোটির বেশি ‘আইএমইআই নম্বর’ ইনপুট দিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ৩ কোটির বেশি মোবাইল সেট দেশে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ২ কোটির বেশি নম্বর দেয়া হয় ডাটাবেজে। ২০১৮ সালের আগের মোবাইলের (দোকানে অবিক্রীত ও ব্যবহার হওয়া) আইএমইআই নম্বর মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেরাই ডাটাবেজে ইনপুট দেবেন। তবে এ বছর দেশে আসা সব মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ডাটাবেজে ইনপুট দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আইএমইআই ডাটাবেজের কাজ সফলভাবেই হচ্ছে। এটিকে আরও গতিশীল করতে কাজ চলছে। বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা, স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে। যেহেতু এটি একটি কারিগরি বিষয়, ফলে প্রশিক্ষণের পরই আরও এ্যাডভান্স কাজ শুরু হবে। আগে চোরাই পথে বা মোবাইলের গ্রে মার্কেটে পণ্য আসা ৪০ শতাংশ কমেছে। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, চোরাই পথে এখনও বিপুলসংখ্যক সেট দেশে আসছে। বিটিআরসির নিয়মিত অভিযান না থাকলে গ্রে মার্কেট থেকে মোবাইল সেট সরানো মুশকিল হবে। লাগেজ পার্টি প্রতিনিয়ত মোবাইল সেট এনে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছে।
নতুন প্রযুক্তি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক। অবৈধ সেট আমদানি প্রযুক্তি ছাড়া অন্য কোনভাবে ধরা সম্ভব না। সেটি এখন থেকে সম্ভব হবে। আমরা ডিজিটাল যত হচ্ছি ডিজিটাল অপরাধ প্রবণতা তত বাড়ছে। অপরাধের চরিত্র ডিজিটাল এবং এটি মোকাবেলার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার। প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তির মাধ্যমে করা অপরাধ শনাক্ত করতে হবে। অন্য কোন মাধ্যম দিয়ে তা করা সম্ভব হবে না। এক রাতে সেনাবাহিনীর নামে ৭৬০টি লিংক তৈরি করে গুজব করা হচ্ছিল, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন একটি বিষয় ছিল। কিন্তু ফেসবুকে বিটিআরসি সেটা শনাক্ত করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে পেরেছে। দেশে মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে। মাদারবোর্ড তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হতে একটি কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। ফাইভ-জি থেকেও এক মুহূর্ত দূরে থাকতে চাই না।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ জহুরুল হক বলেন, ডাটাবেজ তৈরি করে অবৈধ বাজার বন্ধ এবং মোবাইল ফোন চুরি-ছিনতাই বন্ধ হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত হবে রাজস্ব হারানোর ক্ষতি। এতে গ্রাহক লাভবান হবেন। ৯ কোটি মানুষ ১৫ কোটি সিম ব্যবহার করছে। এজন্য আনুমানিক ১০ কোটি হ্যান্ডসেট ব্যবহার হয়। মানুষ ২৫-৩০ শতাংশ সেট অবৈধ বাজার থেকে কেনেন। ফলে সরকার এক হাজার থেকে ১২শ’ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নিম্নমানের সেট স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এই ডাটাবেজ তৈরি হওয়ায় রাজস্ব হারানো বন্ধ হবে এবং ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সেট নিয়ে আসলে ট্যাক্সসহ বা ট্যাক্স ছাড়া রশিদ দেবে, তাতে ওইসব হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা যাবে। যারা ইতোমধ্যে নিয়ে এসেছেন তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ, ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) স্থাপিত হলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে। বিএমপিআইএ সভাপতি মোঃ রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, এর মাধ্যমে মোবাইলের অসৎ ব্যবসায়ীরা আর থাকতে পারবে না। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।