বৃহস্পতিবার ● ১৫ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বিনিয়োগ না থাকায় বেসরকারি অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে টেলিটক
বিনিয়োগ না থাকায় বেসরকারি অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে টেলিটক
বিনিয়োগ সংকটে আছে টেলিটক। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না থাকায় বেসরকারি অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই মোবাইল ফোন অপারেটর। এ অপারেটরের টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি) লাইসেন্সের মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৫ বছর মেয়াদি এ লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স নবায়নের মাধ্যমে টেলিটক আরো ১৫ বছরের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদের লাইসেন্স পাওয়ার অধিকার রাখে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ বিষয়ে গত ২ এপ্রিল প্রথম দফা এবং গত ২৯ মে দ্বিতীয় দফা টেলিটকের কাছে তাগিদপত্র পাঠায়। এ ছাড়া টেলিটককে ছয় বছর ধরে থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি) সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়াই।
২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল টেলিটকের অনুকূলে থ্রিজির কমার্শিয়াল টেস্টের জন্য অস্থায়ীভাবে ২১৫০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের ১০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বাণিজ্যিক টেস্টের মেয়াদ কয়েকবার বাড়িয়ে টেলিটক তাদের থ্রিজি সেবা চালিয়ে যাচ্ছে। মূল লাইসেন্স গ্রহণ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য এখনো নেই। এ ছাড়া থ্রিজি সেবার জন্য ব্যবহার করা তরঙ্গের মূল্য হিসেবে টেলিটকের কাছে বিটিআরসির পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ভ্যাট ও এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ পাওনা কিভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে টেলিটকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টুজি লাইসেন্স নবায়নের জন্য গত সপ্তাহেই বিটিআরসির কাছে আবেদন করা হয়েছে। অন্য সমস্যার সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিটকের টুজি লাইসেন্স নবায়নে দেরি হলে তাদের ফোরজি সেবায়ও সমস্যা হতে পারে। কারণ টুজি লাইসেন্সের জন্য ১৫ বছর আগে তাদের অনুকূলে যে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দিয়ে তাদের ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি) সেবার লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু টুজি লাইসেন্স নবায়ন না হলে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার ওই লাইসেন্স অকার্যকর হবে এবং টেলিযোগাযোগ আইন অনুসারে টুজির জন্য দেওয়া তরঙ্গে ফোরজি সেবায়ও ব্যবহার করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সমস্যার বিষয়টি সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ২২৯তম সভায় আলোচনা হয়। সভায় বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, টেলিটক থ্রিজি সেবার লাইসেন্স গ্রহণ না করাতে বিটিআরসি তথা সরকার ওই সেবার জন্য স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) চার্জ বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে টেলিটককে একটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কি না তা কমিশন জানে না।
সভায় টেলিটকের টুজি লাইসেন্স সম্পর্কে বলা হয়, স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে টেলিটককে তাদের লাইসেন্স নবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সমেত আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হলেও সাড়া মেলেনি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, টেলিটককে থ্রিজি লাইসেন্স গ্রহণ করার জন্য আবারও অনুরোধপত্র পাঠানো হবে। এ ছাড়া টুজি লাইসেন্স নবায়ন ও থ্রিজির তরঙ্গ ব্যবহারের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে টেলিটককে চিঠি দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে টুজি লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছি।’
সূত্র জানায়, থ্রিজি সেবার স্পেকট্রাম ফির প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বিষয়ে টেলিটক অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে এবং আশা করা হচ্ছে ওই টাকা সরকারের পক্ষ থেকে টেলিটকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো হবে।
প্রসঙ্গত, দেশে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের একচেটিয়া কারবারের পরিবর্তন এবং কলরেট কমাতে টেলিটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরে এর নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক বৃদ্ধিতে প্রত্যাশা অনুসারে সাফল্য আসেনি। টেলিটকের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসা হচ্ছে, বেসরকারি অপারেটরদের বিপুল বিনিয়োগের তুলনায় পিছিয়ে থাকার কারণেই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও গ্রাহক বৃদ্ধিতে তাঁরা প্রত্যাশা অনুসারে সফল হতে পারছেন না।
জানা যায়, টেলিটকের এ পর্যন্ত বিনিয়োগ মাত্র চার হাজার কোটি টাকা মতো। অন্যদিকে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।