বৃহস্পতিবার ● ১৫ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে গুগল
নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে গুগল
বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল কয়েক বছর ধরে নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। কর্মীবাহিনীতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং মানবাধিকার ও নীতি-নৈতিকতা বর্জন করে চীনের জন্য বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন চালুর ‘ড্রাগনফ্লাই’ প্রকল্প হাতে নেয়ায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রিত গুগলের বিরুদ্ধে এত ভুল পদক্ষেপ নেয়ার অভিযোগ কেন?
গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরিক শিমিডের ভাষ্যে, অতীতের চেয়ে এখন বেশি সমালোচিত হচ্ছে গুগল। এর প্রধান কারণ হলো নীতিভ্রষ্ট প্রতিভাকে প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি দান। তবে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এ ধরনের প্রতিভাকে এড়িয়ে চলারও উপায় নেই। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে অনেক নীতিভ্রষ্ট কর্মীকে ধরে রাখতে হয়। এতে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও সুনাম নষ্ট হয়, যা একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গুগলের নীতিভ্রষ্ট প্রতিভা হিসেবে সবার আগে সাবেক অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের প্রধান অ্যান্ডি রুবিনের নাম উঠে আসে। অধীনস্থ এক নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ থাকার পরও ২০১৪ সালের অক্টোবরে বীরের বেশে প্রতিষ্ঠান ছেড়েছিলেন তিনি। এমনকি আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও ওই সময় তাকে ৯ কোটি ডলার দেয়ার চুক্তি করেছিল গুগল।
অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার পরও গুগল যে তিন নির্বাহীকে রক্ষা করেছিল, রুবিন তাদের অন্যতম। এ ধরনের দুটি ঘটনায় গুগল জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছিল। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও গুগল ছাড়ার বিনিময়ে তাদের বিপুল অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। তৃতীয় একটি ঘটনায় অভিযুক্ত নির্বাহীকে প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে বহাল রাখা হয়। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবার অভিযোগ ওঠার পর গুগল নীরব ছিল।
গুগল চাইলে রুবিনকে বরখাস্ত ও খালি হাতে বের করে দিতে পারত। এর বদলে প্রতিষ্ঠানটি তাকে ৯ কোটি ডলার পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে জ্ঞাত দুই ব্যক্তির ভাষ্য, চার বছরে প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ ডলার কিস্তিতে রুবিনকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করা হয়। গত নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ কিস্তি পরিশোধ করা হয়।২০১৮ সালের জুনে পেন্টাগনের সঙ্গে ম্যাভেন প্রকল্পে কাজ না করার ঘোষণা দেয় গুগল। অথচ এ প্রকল্পে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
গুগলের একসময়ের স্লোগান ছিল ‘ডোন্ট বি ইভিল’। এর অনেক কর্মীই এ মন্ত্র মনে ধারণ করেন। প্রাণঘাতী উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে, এমন প্রযুক্তি বা সেবা উদ্ভাবনের পক্ষে নন অনেকেই। যে কারণে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের এমনই একটি প্রকল্প ম্যাভেন নিয়ে নাখোশ ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির একদল কর্মী। তাদের আশঙ্কা, পেন্টাগন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তারা এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান না। কর্মীদের এ অসন্তোষের মুখে গুগল পেন্টাগনের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
গত বছর আগস্টে চীনে সেন্সরড সার্চ ইঞ্জিন চালুর সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র কর্মী বিক্ষোভের মুখে পড়ে গুগল। এ নিয়ে কর্মীরা গুগলের কাছে একটি প্রতিবাদপত্র জমা দেয়। সেখানে ১ হাজার ৪০০ জন কর্মী সই করেছিলেন।
গুগল কর্মীরা চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমকে আরো স্বচ্ছ করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে কাজের নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে তারা বুঝতে পারেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, চীনে সার্চ ইঞ্জিন চালুর প্রকল্প থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে, গুগল দেশটিতে সেন্সরশিপ আইন মেনে চলতে রাজি আছে, যা তাদের কাজের সঙ্গে নৈতিক কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, গুগলের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর জিমেইল, ম্যাপ ও গুগল ট্রান্সলেটের মতো সেবাগুলো বিশ্বব্যাপী শত শত কোটি মানুষ ব্যবহার করছে। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশা করছি, গুগল তাদের সংস্কৃতি উন্নয়নে গুরুত্ব দেবে।