মঙ্গলবার ● ৬ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » অনলাইনে গরুর ডিজিটাল হাট
অনলাইনে গরুর ডিজিটাল হাট
কোরবানির ঈদের আগে বিভিন্ন হাটে সকাল থেকে বিকাল, সন্ধ্যা থেকে সারারাত ঘুরে ঘেমেনেয়ে একশা হয়ে পছন্দের গরু কেনা এবং দড়ি ধরে গরু নিয়ে বাসায় ফেরা এখন নিয়মিত দৃশ্য। ধুলোবালি গায়ে মেখে ক্লান্ত পায়ে গরুর সামনে-পেছনে কখনও হেঁটে, কখনও দৌড়ে বাড়ি ফেরার সময় কৌতূহলী মানুষের ‘দাম কত’ বা ‘কত হলো’ প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও বড় আনন্দের। এসবের ফাঁকে কবে যেন ডিজিটাল দুনিয়ায়ও কোরবানির হাট বসে গেছে।
এই হাটে কোনও ঝক্কিঝামেলা নেই। মোবাইলে বা কম্পিউটারে গরু দেখে, পছন্দ করে অর্ডার করলেই হলো। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে কোরবানির পশু বাড়ি পৌঁছে দেবে। দাম মেটানোর জন্যও রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম। ডেবিট কার্ড, বিভিন্ন পেমেন্ট মাধ্যমে (মোবাইল ব্যাংকিং) দাম পরিশোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা হাতে বুঝে পেয়ে দাম পরিশোধের ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থার কারণে কোরবানির ডিজিটাল হাট এরইমধ্যে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট দিন দিন বড় হচ্ছে, জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। কোরবানির হাটের পশুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে গরু। এই হাটের বয়স প্রায় অর্ধযুগ হয়ে গেলেও নেই কোনও পরিসংখ্যান। বছরে কত পশু বিক্রি হয়, অনলাইনে হাটের সংখ্যা কত, কতজন খামারি এই হাটে গুরু দিচ্ছেন, কতগুলো খামার অনলাইনে গরু বিক্রি করছে, এসব তথ্য পাওয়া গেল না কারও কাছে।
তবে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন, এই হাটের পরিসর আগের চেয়ে বেড়েছে, বেড়েছে জনপ্রিয়তাও। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর পাশাপাশি অনেক খামারি, ফার্ম বিশেষ করে ফেসবুকে পেজ খুলে গরু বিক্রির তথ্য প্রকাশ করছে, বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে। অনেক ওয়েবসাইটে রীতিমতো বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করা হয়েছে।
এমনই একটি বিজ্ঞাপন এবার সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বেশ ঘুরছে। সামাজিক মাধ্যম তথা ফেসবুকের মাধ্যমে জানা গেলো, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো টাইটানিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান ঈদ উপলক্ষে একটি গরুর প্রচারণা চালাচ্ছে। সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষের দাবি-এটাই এবারের ঈদের বাজারে সবচেয়ে বড় গরু। এর উচ্চতা ৭ ফুট, দৈর্ঘে্য ১০ ফুট। এর ওজন এক হাজার ৫০০ কেজি। এই গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২৮ লাখ টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহায়েদ তমাল বলেন, ‘এটা ঠিক যে অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বড় হচ্ছে। তবে গরুই বেশি।’ তিনি জানান, এখনও ডিজিটাল হাট সেভাবে জমে ওঠেনি। ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা যাবে। কারণ, হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু গরু বাসায় পৌঁছে দেওয়ার একটা ব্যাপার আছে, তাই অনলাইনের হাট প্রচলিত হাটের আগেই শেষ হয়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান বেশি সময় ধরে হাট চালিয়ে নেয়, স্টক থাকা সাপেক্ষে।
তিনি মনে করেন, অনলাইনের হাটের অনেক সুবিধা। ওজন, রং দেখে অনেক গরু থেকে পছন্দেরটা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। বয়স্কদের পক্ষে ভিড় ঠেলে হাটে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই হাট গ্রাহকদের ‘কমফোর্ট’ দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে প্রচুর গরুর ফরমায়েশ আসছে। যারা ঈদে দেশে আসতে পারেন না কিন্তু কোরবানি করতে চান, তারা অনলাইন থেকে গরু কিনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর হোম ডেলিভারি দেওয়ায় অনেকেই এই সুযোগটা নিয়ে থাকে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকম পশু বিক্রি শুরু করে ২০১৫ সালে। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের প্রধান ঈশিতা শারমিন বলেন, আমরা ৫ বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছি। ক্রেতাদের সাড়া প্রতিবছরই বাড়ছে। এবার ১০ হাজারের বেশি কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন রয়েছে সাইটে। তিনি জানান, এছাড়া বিরাট হাট নামের একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন রয়েছে সাইটে।
জানা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ও পশুর হাটের আয়োজন করেছে। দারাজের অনলাইন হাটে রয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নারী উদ্যোক্তাদের গরু। গরুর বিশেষত্ব হচ্ছে অর্গানিক খাবার খাওয়ানো হয়েছে। লালন-পালন করা হয়েছে বাসাবাড়িতে।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রিয়শপ ডটকম আয়োজন করেছে ঈদ ফেস্ট। ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই ফেস্টে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি কেনা যাবে কোরবানির গরু। পাওয়া যাবে ফ্রি ডেলিভারি।
প্রিয়শপ ডটকমের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, ‘কোরবানির ঈদে অনেকেই গরু কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েন। তাই প্রিয়শপের ঈদ ফেস্টে এবার থাকছে গরু। সব গরুই অর্গানিক খাবার খেয়ে বড় হয়েছে।’ কেউ তাদের কাছ থেকে পশু কিনলে তা গ্রাহকদের বাসায় গরু পৌঁছে দেবে প্রিয়শপ, জানান আশিকুল আলম।
অনলাইনে আরও হাটের মধ্যে রয়েছে-বেঙ্গলমিট, আমেরিকান ডেইরি, দেশি মিট, দারাজ, প্রিয়শপ, আমার দেশ আমার গ্রামের মতো প্রতিষ্ঠান।