সোমবার ● ৫ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ই-পাসপোর্টের ফি বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হল
ই-পাসপোর্টের ফি বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হল
শিগগিরই ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালু হচ্ছে দেশে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্টের ফি বাড়িয়ে নতুন পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এতে পৃষ্ঠা অনুযায়ী ফি পুনর্নির্ধারণের পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে কাগজপত্র সত্যায়নের ঘর।
গত ১ আগস্ট জারি করা ওই পরিপত্র অনুযায়ী, ভ্যাট ছাড়াই ই-পাসপোর্টের সর্বোচ্চ ফি ১২ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্টের জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৩ হাজার ৪৫০ ও অতি জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৬ হাজার ৯০০ টাকা।
বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য সর্বোচ্চ ফি ২২৫ মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন ফি ১০০ মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ফি ২২৫ মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন ফি ৩০ মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠার হবে। মূলত পরিপত্রে সাধারণ, জরুরি ও অতিজরুরি-এই তিনভাবে ই-পাসপোর্টের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশে আবেদনকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা।
বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারী, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা ই-পাসপোর্ট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১০০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ১৫০ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১২৫ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ২০০ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ২২৫ মার্কিন ডলার ধার্য করা হয়েছে। এদিকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ৪৫ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ২০০ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ১৭৫ মার্কিন ডলার ও জরুরি ফি ২২৫ মার্কিন ডলার ধার্য করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই ই-পাসপোর্ট চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই ই-পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তখন থেকেই পরিপত্র অনুযায়ী কাজ করবে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পরিপত্রে ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে পূরণ করা যাবে। এছাড়া পিডিএফ ফরম্যাট ডাউনলোড করে যেকোনো কম্পিউটারে ফরমটি পূরণ করা যাবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন হবে না। এছাড়া কোনো ছবি সংযোজন করা এবং তা সত্যায়ন করার দরকার হবে না। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারীর ক্ষেত্রে তার পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ই-পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে ১৮ বছরের নিচে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি), ১৮ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) এবং ১৮ বছরের বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অবশ্যই লাগবে। তবে ১৮ বছরের নিচে সব আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এতে বলা হয়েছে, টেকনিক্যাল সনদগুলো (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ড্রাইভার) আপলোড করতে হবে। এছাড়া এনওসি, জিও, প্রত্যয়নপত্র, পেনশন বই অবশ্যই আপলোড করতে হবে। ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে এটা আপলোড করবে।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনের স্থায়ী কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাদের নির্ভরশীল স্ত্রী বা স্বামী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের ১৫ বছরের কম বয়সের সন্তান সাধারণ ফি জমা দিয়ে অতি জরুরি সুবিধা পাবেন। দেশে পাসপোর্টের ফি জমা দিলে নির্ধারিত ভ্যাট এবং বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশন কর্তৃক সারচার্জসহ নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কূটনৈতিক পাসপোর্ট পেতে আবেদনকারীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার উইং বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন করতে হবে।
বৈদেশিক মিশন থেকে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করা হলে স্থায়ী ঠিকানায় বাংলাদেশে যোগাযোগের ঠিকানা থাকতে হবে। অতিজরুরি পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে অতিজরুরি পাসপোর্ট পেতে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে অন্যান্য সব তথ্য ঠিক থাকলে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। দেশের অভ্যন্তরে জরুরি পাসপোর্ট পেতে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে অন্যান্য সব তথ্য ঠিক থাকলে সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। দেশের অভ্যন্তরে রেগুলার পাসপোর্ট পেতে আবেদনের সঙ্গে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে অন্যান্য সব তথ্য ঠিক থাকলে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে অতিজরুরি পাসপোর্ট রিইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। জরুরি পাসপোর্ট রিইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে। রেগুলার পাসপোর্ট রিইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়া হবে।
নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্ট রিইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত তথ্য সংযোজন বা ছবি পরিবর্তনের প্রয়োজন না হলে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিতির দরকার নেই বলেও উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে। তবে রিইস্যুর ক্ষেত্রে যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হওয়ার দরকার হতে পারে। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার পাসপোর্ট বাতিলের জন্য নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস বা বাংলাদেশ মিশনে জমা দিতে হবে। বাতিল করা পাসপোর্ট আবেদনের ভিত্তিতে মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারদের কাছে ফেরত দেয়া যাবে।