মঙ্গলবার ● ২৩ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » জাপান-কোরিয়া বিরোধে উদ্বিগ্ন অ্যাপল, অ্যামাজন, সনির মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো
জাপান-কোরিয়া বিরোধে উদ্বিগ্ন অ্যাপল, অ্যামাজন, সনির মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো
দক্ষিণ কোরিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কাঁচামাল রফতানিতে জাপান বিধিনিষেধ আরোপ করায় উদ্বিগ্ন অ্যাপল, অ্যামাজন, সনি, ডেলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। প্রযুক্তি শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাপানের এ পদক্ষেপের কারণে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারের ভ্যালু চেইন সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। এতে চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। খবর কোরিয়ান টাইমস।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাপানের রফতানি নিষেধাজ্ঞার মুখে স্মার্টফোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতারা তাদের মজুদ থেকে সেমিকন্ডাক্টর ও ডিসপ্লে চাহিদা হয়তো মেটাতে পারবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সরবরাহ ঘাটতি ও উচ্চমূল্য মোকাবেলা করতে তাদের হিমশিম খেতে হবে।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কোরিয়ার স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্স তাদের স্মার্টফোনের জন্য মেমোরি চিপ ও ডাটা সেন্টারের জন্য সার্ভার নির্মাণ কমিয়ে আনছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে অ্যাপল ও অ্যামাজন। অন্য বৃহৎ কোম্পানিগুলোও এদিকে কঠোর নজরদারি করছে বলে জানা যাচ্ছে।
এদিকে মেমোরি চিপ ও ডিসপ্লে প্যানেল প্রস্তুতকারক স্যামসাংয়ের উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগল ও অ্যামাজনের কর্মকর্তারা।
তাছাড়া চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর যখন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো চিপ ব্যবসায় নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছিল, তখন জাপানের রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
বিশ্বের বৃহত্তম চিপ ফাউন্ড্রি কোম্পানি টিএসএমসির চেয়ারম্যান মার্ক লিউ বলেন, জাপান-কোরিয়া বাণিজ্য বিরোধ আগামী মাসগুলোয় চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। এ পরিস্থিতি প্রযুক্তির সরবরাহ চেইনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ জাপান এখনো হাইটেক কাঁচামাল সরবরাহের বাজারে আধিপত্য করছে।
আরেক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো একটি যৌক্তিকমূল্যে যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় মজুদ করার কারণে জাপান-কোরিয়ার বিরোধ এখন কোনো প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার ফল অদূর ভবিষ্যতে সবাইকেই ভোগাবে।
সেমিন্ডাক্টরের উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহৎ কোম্পানিগুলো তাদের সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনার চিন্তাভাবনা করতে পারে। তবে এটি সহজ হবে না। কারণ বিশ্ববাজারে প্রযুক্তিপণ্য প্রস্তুতে প্রয়োজনীয় ফ্লুরিনেটেড পলিমাইড ও রেসিস্টের ৯০ শতাংশ এবং ইচিং গ্যাসের প্রায় ৭০ শতাংশই উৎপাদন করে জাপান।
যদিও সনির পিসি বিজনেস বিভাগ ভায়োর একজন মুখপাত্র বলছেন, বাণিজ্য বিরোধে কম্পিউটারের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ কোরিয়ার বাইরে চিপের বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
তবে কোরিয়ায় প্রযুক্তি কাঁচামাল রফতানিতে ৯০ দিনের আনুষ্ঠানিকতার ভেতর যেতে বাধ্য করার যে পদক্ষেপ জাপান নিয়েছে, তাতে এরই মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ডির্যাম এক্সচেঞ্জের হিসাবে, ৪ জুলাই থেকে এ বিধিনিষেধ আরোপ করার পর পরই ডির্যামের দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে এনএএনডি ফ্ল্যাপ চিপের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে স্যামসাংয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছর এক্সিনোসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ প্রসেসর গ্যালাক্সি নোট ১০ ডিভাইসে ব্যবহার করার কথা রয়েছে। তবে আগামী মাসে এ ঘাটতি উৎপাদন পূরণ করা হবে।