রবিবার ● ৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আর্থিক সিদ্ধান্তকে যেভাবে প্রভাবিত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
আর্থিক সিদ্ধান্তকে যেভাবে প্রভাবিত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্ট কারো আর্থিক সিদ্ধান্ত বা বিনিয়োগকারীর মনোভাবকে কতটা, কী পরিমাণে প্রভাবিত করে? প্রযুক্তিশাসিত এ যুগে এ রকম প্রশ্ন যে কারো মনে উঁকি দিতে পারে।
আপনারা অনেকেই হয়তো জেমস অ্যালান ক্রেগের নাম শুনেছেন। কয়েক বছর আগে এক শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য হঠাৎ পরিচিত হয়ে ওঠে এ নামটি।
২০১৩ সালের ঘটনা। কিছু শেয়ার কেনার কথা ভাবছিলেন অ্যালান ক্রেগ। শেয়ার কিনবেন এ রকম দুটি প্রযুক্তি কোম্পানিও তিনি বাছাই করেন। শেয়ার কেনার আগে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই কোম্পানি দুটি সম্পর্কে তিনি ভুল বা মিথ্যা বিবৃতি পোস্ট করেন। উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানি দুটির শেয়ারদর একটু কমানো। কিন্তু সে শেয়ার কেনার আগেই কোম্পানি দুটির শেয়ারদরের বড় রকমের পতন হয়। কয়েকটি টুইটবার্তায় কোম্পানি দুটির শেয়ারহোল্ডাররা নগদ হারান ১৬ কোটি ডলার।
এরপর নদীর জল অনেক গড়িয়েছে। ক্রেগের বিরুদ্ধে সিকিউরিটি জালিয়াতির মামলা হয়। দীর্ঘ সময় পর চলতি বছরের মে মাসে মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দেন। তবে তিনি অল্প ক্ষতিপূরণ দিয়েই রক্ষা পান।
টুইটার, ফেসবুক, ব্লগ যে প্লাটফর্মই হোক, অনলাইন কার্যক্রম যে অফলাইন বা বাস্তব বাজারকে ব্যাপক ও ত্বরিত প্রভাবিত করতে পারে, তা নিয়ে এখন আর কারো তেমন দ্বিধা থাকার কথা নয়। এসব গুজবে আমাদের চারপাশে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ হওয়ার উদাহরণের অভাব নেই।
অ্যালগরিদম ব্যবসায়ী বা প্রযুক্তিবিদদের সক্ষমতা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কেউ হয়তো তক্ক তুলবেন, ভার্চুয়াল নিরাপত্তাও আগের চেয়ে জোরদার হচ্ছে। তা তো বটেই!
২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিখ্যাত অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। এ অ্যাকাউন্ট থেকে হোয়াইট হাউজে বোমা বিস্ফোরণে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আহত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়। এ সংবাদে দেশটির এসঅ্যান্ডপি সূচক তত্ক্ষণাৎ ১৩ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অ্যাপল তার টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে মর্মে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আইখান ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের কর্ণধার কার্ল আইখান একটি ঘোষণা দেন। তবে বিষয়টি এতটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু যা ঘটার তা মুহূর্তে ঘটে গেল। এ ঘোষণার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অ্যাপলের শেয়ারদর বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপ বা বাজারের আয়তন বেড়ে গিয়েছিল ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
একই বছরের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ‘জার্নাল অব ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকৃত খবরের চেয়ে নেতিবাচক গুজবে আর্থিক বাজার বেশি প্রভাবিত হয় বলে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণা প্রতিবেদনে ওই ফলাফলের অনুরূপ সমর্থন পাওয়া যায়।
স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্টক রিটার্নের ওপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক ছোট ছোট অনলাইন মন্তব্যের ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব রয়েছে। যেখানে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক মন্তব্য বা অনলাইন কার্যক্রম শেয়ারের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আইডিয়া বিনিময়ের স্টকটিউইটস নামে একটি সামাজিক প্লাটফর্ম রয়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষণায় স্টকটিউইটসের ১ কোটি ৮০ লাখ বার্তা বিশ্লেষণ করা হয়। অনলাইনে নেতিবাচক মতামত বা মনোভাব ১ শতাংশ বাড়লে তা স্টক রিটার্নে ৩ বেসিস পয়েন্ট পতন ঘটায় বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে।