বুধবার ● ৩ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » স্যামসাং-এলজি ব্র্যান্ডের পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হবে বাংলাদেশে
স্যামসাং-এলজি ব্র্যান্ডের পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হবে বাংলাদেশে
দক্ষিণ কোরিয়া এদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার প্রস্তুতি শুরু করেছে। স্যামসাং-এলজি ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী উৎপাদন হবে বাংলাদেশে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আইটি ও তথ্য প্রযুক্তি খাত নিয়ে আগ্রহ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার। বিপুল অঙ্কের ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে বলে আশাবাদী সরকার। আগামী ১৩ জুলাই তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক ইয়োন। ওই সময় দেশটির উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশ সফর করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন লি নাক ইয়োন। ওই সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-বিনিয়োগের জন্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে উর্বর ভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচী। এছাড়া কোম্পানি আইন সংশোধনসহ ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা। ব্যবসা উন্নয়ন সূচকে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে সরকারের মেগা দশ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের অনেক দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আনা হচ্ছে।
এদিকে, কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে রয়েছে, রফতানির বিপরীতে কোন কোন পণ্য আমদানি হচ্ছে, বছরে কি পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে, রফতানিতে কি ধরনের শুল্ক সুবিধা বিদ্যমান, কোন কোন খাতে কোরিয়ার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে এসব বিষয় নিয়ে একটি কার্যপত্র তৈরি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে-দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার ওই সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠক ও আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এখন প্রয়োজনীয় তথ্যাদি, কাগজপত্র তৈরি ও সংগ্রহ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া হবে। তবে কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগটি একেবারে নতুন নয়। ইতোমধ্যে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) পাশাপাশি সে দেশের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। আরও অনেক কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে তিনদিনের সরকারী সফরে আগামী ১৩ জুলাই বাংলাদেশে আসছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক ইয়োন। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে তাদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো দক্ষিণ কোরিয়া এদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। লি নাক ইয়োনের সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গেও তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
স্যামসাং ও এলজি পণ্য উৎপাদন হবে বাংলাদেশে ॥ স্যামসাং ও এলজি একটি আন্তর্জাতিক মানের উন্নত ইলেক্ট্রনিক্স ব্র্যান্ড। স্যামসাং মোবাইল সারাবিশ্বে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলজির টিভি ও ফ্রিজও সারাবিশ্বে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশে বাজারজাতকরণের পাশাপাশি উৎপাদিত স্যামসাং ও এলজি পণ্য বিশ্বের অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এর ফলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সময় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। এবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এ সংক্রান্ত বিষয়টির বেশ অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্যামসাং ও এলজি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা এবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি এ দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য জমি বরাদ্দ দিতে আগ্রহী সরকার।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ১৫২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ সে দেশে রফতানি করেছে প্রায় ২৪ কোটি ডলারের পণ্য। আর ১২৮ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। এ সুবিধা নিতে ব্যবসায়িক জটিলতাসহ বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে কাজ করছে উভয় দেশ। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হবে। চট্টগ্রাম কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) এ কোরিয়ার ২২টি কারখানায় প্রায় ৫৫ হাজার কর্মী কাজ করছে। এখান থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ১৩ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী কাজ করছে। তারা প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।
দু’দেশের বাণিজ্য বাড়াতে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। নতুন সার্ভিসের ফলে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের পরিবর্তে সরাসরি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। গার্মেন্ট শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিপুল সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, নতুন সার্ভিস ও উদ্যোগ ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ইয়াংওয়ান গ্রুপসহ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে। কোরিয়ার আরও বিখ্যাত কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।