বুধবার ● ১৯ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » হুয়াওয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ কমতে পারে ৪০-৬০%
হুয়াওয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ কমতে পারে ৪০-৬০%
চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে স্মার্টফোন সরবরাহ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গত রোববার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়।
গত মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো ধরনের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার কিংবা সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয় করতে পারবে না হুয়াওয়ে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের কোনো পণ্য সরবরাহ করতে পারবে না তারা।
হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই গত সোমবার জানান, তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে চাপে রয়েছেন। আগামী দুই বছর প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব পূর্বাভাসের চেয়ে ৩ হাজার কোটি ডলার কমবে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি সামলে এগিয়ে যেতে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের থামাতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, গত বছর হুয়াওয়ে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে। চলতি বছর রাজস্ব আয় ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস ছিল। তবে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী দুই বছর হুয়াওয়ের রাজস্ব ১০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোন সরবরাহ বাড়াতে নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে বাজারে আসতে যাওয়া ‘অনার ২০’ স্মার্টফোনটিকে বিশেষ অস্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২১ জুন থেকে ডিভাইসটি ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইরোপের কিছু দেশে বিক্রি শুরু হবে। হুয়াওয়ের নির্বাহীরা অনার ২০ উন্মোচনের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন। বিক্রি প্রত্যাশা ছুঁতে না পারলে সরবরাহ কমানো হতে পারে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুয়াওয়ের বিপণন এবং বিক্রয় ব্যবস্থাপকরা অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শেষে চলতি বছর স্মার্টফোন সরবরাহ ৪ থেকে ৬ কোটি ইউনিট কমার আশঙ্কা করছেন। বৈশ্বিক সরবরাহ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হুয়াওয়ে চলতি বছর স্থানীয় বাজারের সর্বোচ্চ অর্ধেক দখলে নিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
হুয়াওয়ে বিশ্বের বৃহৎ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা। গত মে মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা সম্পর্ক স্থগিতে বাধ্য হয়েছে একাধিক মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ের বিদ্যমান গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই তা শিথিল করা হয়। যে কারণে শুরুতে হুয়াওয়ের ফোনে অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দিলেও, পরবর্তীতে তা তুলে নেয় গুগল এবং হুয়াওয়ের ফোনে সমর্থন চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শুধু হুয়াওয়ের ওপরই নয়। এর আগে চীনভিত্তিক জিটিই করপোরেশনের ওপরও একই ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং ডিভাইস সরবরাহ করায় গত বছর শুরুর দিকে জিটিইর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে বড় অংকের জরিমানা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পায় জিটিই।
হুয়াওয়ে ইস্যুতে ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিতে হুয়াওয়েকে রাখার মাধ্যমে বিদ্যমান পরিস্থিতির সমাধান টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাস্তবিক অর্থে হুয়াওয়ে ইস্যুতে ট্রাম্পের চাওয়া কী, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিলেও বিশ্বের অনেক দেশ হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং ডিভাইস ব্যবহার অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া ও মালয়েশিয়া এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা চীনা প্রতিষ্ঠানটির সরঞ্জাম ব্যবহার অব্যাহত রাখবে। ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি কমলেও তা সামান্যই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।