রবিবার ● ১৬ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » গ্রামীণফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত
গ্রামীণফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত
তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাসম্পন্ন (এসএমপি) অপারেটর ঘোষণা করে গ্রামীণফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি)। গ্রামীণফোনের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জুন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে গত ফেব্রুয়ারিতে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে বিটিআরসি। এর ধারাবাহিকতায় প্যাকেজ, অফার ও কলরেটসহ নতুন সেবার তথ্য জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
এসএমপি অপারেটর হিসেবে করণীয় ও বর্জনীয় কার্যক্রম নির্ধারণ করে গ্রামীণফোনকে দেয়া বিটিআরসির এক চিঠিতে বলা হয়, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও একক স্বত্বাধিকার চুক্তি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির কোনোভাবেই মাসে কলড্রপের সর্বোচ্চ হার ২ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার লক ইনের মেয়াদ হবে ৩০ দিন।
তবে মার্চে এসএমপি অপারেটর হিসেবে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া চিঠিতে গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে গত ১৭ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গ্রামীণফোনের কলরেট বৃদ্ধিসহ আরো বেশকিছু বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়গুলো উল্লেখ করে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এতে ভয়েস ট্যারিফ, আন্তঃসংযোগ চার্জ, এমএনপি লক ইন পিরিয়ড ও সেবার অনুমোদনের বিষয়ে গ্রামীণফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
উল্লেখ্য, সেলফোন অপারেটরদের অননেট ও অফনেট ভয়েস কলে অভিন্ন ট্যারিফ হার চালু হয়েছে গত বছরের ১৪ আগস্ট। এতে কল ট্যারিফসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ২ টাকা। ভ্যাট-করসহ সর্বনিম্ন কলরেট দাঁড়ায় ৫৪ পয়সা। তবে গ্রামীণফোনের গড় কলরেট ৭০ পয়সা, যা অন্য অপারেটরদের তুলনায় বেশি।
গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (তাত্পর্যপূর্ণ বাজারক্ষমতা) প্রবিধানমালা, ২০১৮ জারি করা হয়। এ প্রবিধানমালা অনুযায়ী, কোনো অপারেটর গ্রাহক সংখ্যা, অর্জিত বার্ষিক আয় ও কমিশন কর্তৃক বরাদ্দকৃত তরঙ্গসহ অন্যান্য সম্পদ-এ তিনটির যেকোনো একটির নির্ণায়কের ভিত্তিতে সেলফোন সেবা খাতের মোট বাজারের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করলে সেটি ওই বাজারের জন্য এসএমপি অপারেটর হিসেবে বিবেচিত হবে। কমিশন দেশের টেলিযোগাযোগ বাজারে এসএমপি অপারেটর চিহ্নিত করে তার করণীয় ও বর্জনীয়সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করবে।
জানা গেছে, বাজারে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে এসএমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ট্যারিফ ও করহার প্রযোজ্য হবে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বাজারে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য কমিয়ে আনতে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকায় ৫৫ শতাংশ, নেপালে ৩৫ ও পাকিস্তানে ৫৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার এসএমপির আওতাভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সেলফোন সেবা ছাড়া টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে নির্ণায়ক নির্ধারণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণের শতকরা হার সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা জারি করবে কমিশন। পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধিনিষেধ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক নির্দেশনা জারি করা হবে।
উল্লেখ্য, গ্রাহক সংখ্যা ও আয়ের ভিত্তিতে সেলফোন সেবা খাতের চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এগিয়ে গ্রামীণফোন। বিটিআরসির সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে দেশে সেলফোন সংযোগ সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের সংযোগ ৭ কোটি ৪৫ লাখ, রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ ও বাংলালিংকের ৩ কোটি ৪৫ লাখ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটকের সংযোগ সংখ্যা ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার। গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৪৬ দশমিক ৩৭, রবির ২৯ দশমিক ৬২, বাংলালিংকের ২১ দশমিক ৫১ ও টেলিটকের ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আয়ের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার ৫১ শতাংশের বেশি।