সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
সোমবার ● ১০ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি বাণিজ্যযুদ্ধে জিতবে কে
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি বাণিজ্যযুদ্ধে জিতবে কে
৭৩৩ বার পঠিত
সোমবার ● ১০ জুন ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি বাণিজ্যযুদ্ধে জিতবে কে

---
পারমাণবিক বোমা মেরে যুদ্ধ না হলেও যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্বজুড়েই পড়েছে। এ যুদ্ধ প্রযুক্তির সঙ্গে প্রযুক্তির, যা পারমাণবিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ যুদ্ধে কে জিতবে আর কে হারবে তা বলা মুশকিল। যুদ্ধ শুরু হয়েছে পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। একইসঙ্গে এ যুদ্ধ প্রযুক্তিবাণিজ্য যুদ্ধে গড়িয়েছে। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রের গুগল, ইনটেল, কোয়ালকম, ব্রডকমের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সহায়তা না করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত ১৫ মে এক আদেশে সহায়তা বন্ধ করায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ব্যবসায় বড় ধাক্কা লেগেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় গুগলের এ্যাপ হুয়াওয়ের ফোনে চলবে না। গুগলের এ্যান্ড্রয়েড ওএস ব্যবহারও করতে পারবে না। প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এটা আসলে ‘প্রযুক্তি মোড়লদের’ মধ্যে ব্যবসায়ীদের ঠান্ডা যুদ্ধ। কে কার প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে কত বড় ব্যবসা করতে পারবে। হুয়াওয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে গুগলকে। তারা নিজেরাই বিকল্প এ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। এখন দেখার বিষয়, এ যুদ্ধ কোথায় গিয়ে শেষ হয়।

সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে চীনের মানুষ আইফোন কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ আইফোনের বড় বাজারই ছিল চীন। ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়ের সঙ্গে হঠাৎ করে বড় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুয়াওয়ের সিইও রেন ঝেংফেই চীন সরকারের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না থাকার যে কথা বলছেন, তা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেছেন, হুয়াওয়ের সিইও রেন ঝেংফেই মিথ্যা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তবে কয়েক বছর ধরেই হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কথা হচ্ছে। এ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হিসেবে ওই ওএস তৈরি করছে হুয়াওয়ে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মধ্যেই নতুন ওএস উন্মুক্ত করবে হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ের কনজুমার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ইউ বলেছেন, নতুন ওএস নিয়ে কাজ করছেন তারা। পাবলিক উইচ্যাট গ্রুপে তিনি এ কথা বলেছেন। এর আগে হুয়াওয়ের সিইও রেন ঝেংফেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নেবেন তারা।

গুগলের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কেইথ এনরাইট বলেন, আমরা আমাদের সব পণ্য ও পরিষেবায় গোপনীয়তা ও সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য নজরদারি বাড়িয়েছি। আমাদের সেবাপণ্যে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছি, যাতে ব্যবহারকারীরা তাদের অনলাইনে থাকা তথ্যগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। গুগল তাদের ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুগল এ্যাকাউন্ট ও এর প্রধান পরিষেবাগুলোয় ওয়ান-ট্যাপ। এছাড়া গুগল সার্চ ও ম্যাপের মতো গুগলের জনপ্রিয় পরিষেবায় ছদ্মবেশী মোড যুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কোম্পানিটি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে। দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। পম্পেও মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, হুয়াওয়ে শুধু চীন সরকার নয়, দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। এই গভীর সংযোগ মার্কিন তথ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তারা চীন সরকার বা দেশটির সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এর আগে রেন ঝেংফেই দাবি করেন, হুয়াওয়ে কখনও গ্রাহকের তথ্য বিনিময় করে না। পম্পেও তার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। চীন সরকারের সঙ্গে কাজ না করার যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তা মিথ্যা। হুয়াওয়ের সঙ্গে আরও কোম্পানি সম্পর্ক ছিন্ন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পম্পেও বলেন, আরও অনেকে হুয়াওয়েকে ছেড়ে দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে সবাইকে হুয়াওয়ে ব্যবহারের ঝুঁকি বোঝাতে কাজ করা হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন কোম্পানি হুয়াওয়ে গুগলের কিছু সফটওয়্যার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরে বিপদে পড়েছে। গুগলের জনপ্রিয় কয়েকটি এ্যাপ ইউটিউব, গুগল ম্যাপ, জি-মেইলের মতো এ্যাপের ওপর মানুষ কতটা নির্ভরশীল, তার ওপর নির্ভর করছে চীনা কোম্পানিটির ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুয়াওয়েকে এমন একটি তালিকায় রাখা হয়েছে যে তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোন মার্কিন কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। গুগলের এ সিদ্ধান্তের ফলে হুয়াওয়ে এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের কিছুই আপডেট করতে ও কয়েকটি গুগল এ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে না।

প্রযুক্তিবিদরা বলেন, হুয়াওয়ে গত কয়েক বছরে তরতর করে সামনে এগিয়েছে। সম্প্রতি স্মার্টফোন বিক্রিতে হুয়াওয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এ্যাপলকেও ছাড়িয়ে গেছে। মোবাইলে গুগল এ্যাপ ব্যবহার করতে না পারলে মানুষ কতটা গ্রহণ করবে ওই ফোন, বা আদৌ করবে কিনা এ নিয়ে ভাবছে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। এটা চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ।
শুরুতে গুগল ছিল সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইডার। ইন্টারনেটে যে কোন তথ্য খুঁজে পেতে সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইডারগুলোর মধ্যে এখনও গুগলই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বিশ্বজুড়ে ৮৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটে কিছু খুঁজতে হলে গুগলের কাছে যেতে হয়। গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ ইঞ্জিন বাইদু। চীনের এই সার্চ ইঞ্জিন বিশ্বজুড়ে ৮ শতাংশ লোক বাইদু ব্যবহার করেন। চীনে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চীনে হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীদের ওপর গুগলের নিষেধাজ্ঞার তেমন কোন প্রভাব পড়বে না এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে পৃথিবীর বাকি সব দেশে। চীন ছাড়া বিশ্বজুড়ে গুগল ছাড়া মানুষ চলতেই পারে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রিতে ভাটা পড়বে। ২০০৬ সালে ইউটিউব কিনে নেয় গুগল। ইউটিউব এতটাই জনপ্রিয় যে এটি একটি নতুন পেশার সৃষ্টি করেছে। যার নাম ইউটিউবার।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর শীর্ষ ১০ ইউটিউবার মোট ১ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। মানুষের খ্যাতি ও অর্থের বাসনাকে প্রভাবিত করে কামিয়েছে ইউটিউব। তবে এই একটি ক্ষেত্রেই গুগলকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ‘১৮ সালে যে এ্যাপ সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে তার মধ্যে তিন নম্বরে রয়েছে টিকটক। ‘১৬ সালে প্রথম এই এ্যাপ বাজারে আসে। অল্প ক’দিনেই টিকটক নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটিতে পৌঁছেছে। বাইটড্যান্স নামের এক চীনা কোম্পানি প্রথমে ‘ডোয়িন’ নামে এ এ্যাপ চালু করে। এখনও চীনে এ এ্যাপ ডোয়িন নামেই পরিচিত। ‘১২ সালে এ্যাপল তাদের নিজস্ব ম্যাপ তৈরি করেছিল, তবে সেটি বিস্তারিত তথ্যের অভাব ও ভুলভাল দিকনির্দেশনার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। ম্যাপ নিয়ে সমস্যা এতই প্রকট হয় যে, এ্যাপল তাদের ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তাদের ম্যাপ ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়। ৬৯ শতাংশ আইফোন ব্যবহারকারী এ্যাপলের ওই এ্যাপের চেয়ে গুগল ম্যাপ বেশি পছন্দ করে। তবে সার্চ ইঞ্জিনের মতোই চীনে গুগল ম্যাপের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। চীনে বাইদুর ম্যাপিং সফটওয়ারই বেশি জনপ্রিয়। বাইদুর নতুন ভয়েস এ্যাক্টিভেটেড ম্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি। তারা চীনের বাইরেও তাদের জনপ্রিয়তা তৈরি করতে চায়। তারা হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ গুগল এ্যাপগুলোর বিকল্প হিসেবে তাদের এ্যাপগুলো ব্যবহারের প্রস্তাব দিতে পারে।

হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হুয়াওয়ের নতুন অপারেটিং সিস্টেম বা ওএস স্মার্টফোন, ট্যাব, পিসি, টিভি, অটোমোবাইল প্রযুক্তিপণ্যসহ সব ধরনের ডিভাইসে চলবে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট এ্যান্ড্রয়েড পুলিশ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হুয়াওয়ের নতুন ওএস এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ ও ওয়েব এ্যাপ সমর্থন করবে। হুয়াওয়ের ওএসে এ্যান্ড্রয়েড ওএস ৬০ শতাংশ দ্রুতগতিতে কাজ করবে। অবশ্য এসব গুঞ্জন সত্যি কি না, তা বছরের শেষ নাগাদ বোঝা যাবে। এটি এ্যান্ড্রয়েডের ওপেস সোর্স সংস্করণের ভিত্তিতে তৈরি কি না (ফর্ক ভার্সন), তা এখনও জানা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ওএস তৈরির বিষয়টি হুয়াওয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাতে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, জিমেইল, টুইটার, হোয়াটসএ্যাপ সমর্থন করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মে ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারী অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে টেন মিনিট স্কুল ও বিকাশের উদ্যোগ
কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে অপো বাংলাদেশ
মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৪ হাজার শিক্ষার্থী পেল নতুন ল্যাপটপ
এনাবলার অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলো মাস্টারকার্ড
জাইকার সহযোগিতায় বি-জেট ও বি-মিট প্রোগ্রামের সমাপনী প্রতিবেদন প্রকাশ
দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে ‘বেসিস জাপান ডে ২০২৪’
এআই অলিম্পিয়াডের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য হলেন বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন
সিআইপি সম্মাননা পেলেন উল্কাসেমির সিইও মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান
রিয়েলমি সি৭৫ পানির নিচে সচল থাকবে ১০ দিন