বুধবার ● ২৯ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যয় ৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছবে
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যয় ৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছবে
২০১৯ সালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম বাবদ ব্যয় ৫৫০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছরের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। অঞ্চলটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এআই সফটওয়্যার সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে। ২০২২ সাল নাগাদ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এআই বাবদ ব্যয় বার্ষিক ৫০ শতাংশ হারে বেড়ে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলারে পৌঁছবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আইডিসির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক সোয়াতি চতুরবেদি বলেন, যেভাবে ভাবা হচ্ছে সেভাবেই বিশ্বকে বদলে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে দ্রুত প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের কারণেই অঞ্চলটির প্রতিষ্ঠানগুলোতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। এখন প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে অনেক দেশ দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে প্রযুক্তি খাত ঘিরে মেধাবীর সংখ্যা বাড়ছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার প্রসার ঘটছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে টিকে থাকা।
আইডিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এআই সিস্টেম বাবদ ব্যয়ে নেতৃত্বে থাকবে খুচরা বিক্রয় শিল্প খাত। অঞ্চলটিতে এআই বাবদ মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ডাইজিং সলিউশন, শপিং অ্যাডভাইজার সম্প্রসারিত করা, স্বয়ংক্রিয় কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট এবং সরবরাহ ও লজিস্টিক খাতে এআই সিস্টেম কাজে লাগাতে বর্ধিত ব্যয় করবে। এআইভিত্তিক সল্যুশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়েও এগিয়ে থাকবে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বিকাশ আমাদের এমন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, যেখানে প্রচলিত সব ধ্যানধারণা বাতিল বলে গণ্য হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শহর ব্যবস্থাপনা, কলকারখানা, বিগ ডাটা, আবহাওয়া, সাইবার নিরাপত্তাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই দিন দিন কমে যাচ্ছে মানুষের কাজ। এসব কাজে এখন আর মানুষ নয়, ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
এটি এমন একটি সিস্টেম, যা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে নিজে কোনো কিছুর বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহজেই আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে সবক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়তে থাকায় ছোট হয়ে আসছে মানুষের কাজের পরিসর। যে কারণে ভবিষ্যতে লাখ লাখ মানুষ তাদের কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য এআইয়ের নেতিবাচক প্রভাব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকের মতে, উন্নয়নশীল বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারলে উৎপাদনশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে, যা ওই দেশগুলোকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তার পরও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। কারণ মানুষের কাজগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির কল্যাণে কম খরচে করে নেয়া যাচ্ছে।
ইউরোপে আগামী দশকে ৪০ শতাংশ চাকরি চলে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারাবে অর্ধেক মানুষ। এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চাকরির বাজারের একটি বড় অংশ দখলে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অবশ্য অনেকে যুক্তি দেন যে রোবট অনেক চাকরি দখল করলেও এ প্রযুক্তির কারণে চাকরির নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। তবে উন্নত দেশগুলো চাকরির নতুন ক্ষেত্র তৈরির বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সেটি করা অনেক কঠিন হবে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রযুক্তি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বে নিজের শক্তি বাড়াতে প্রযুক্তির উন্নয়নকে সবাই ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে সিলিকন ভ্যালি সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।