বুধবার ● ২২ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » তারকাদের ব্যবহার করে ফাঁদ বাড়ছে অনলাইনে
তারকাদের ব্যবহার করে ফাঁদ বাড়ছে অনলাইনে
গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেটের ব্যবহার আজ অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, খাদ্য, রাজনীতি, অভ্যাস কোনো কিছুই আর ইন্টারনেট প্রভাবমুক্ত নয়। হয়তো দরকারও নেই! ভার্চুয়াল আর যা-ই বলেন, এক কথায় ইন্টারনেট উত্তপ্ত এক বাস্তবতা।
বিটকয়েন এখনো মূলধারার মুদ্রার মর্যাদা পায়নি। তবে অনেক বড় লেনদেনে বিটকয়েন ক্রমে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। বিশেষত অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বা লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেকেই বিটকয়েনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। বিটকয়েন ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে বড় ধরনের প্রভাবিত করবে বলেও মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
অনলাইনভিত্তিক অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি ও মুদ্রা বাণিজ্যেরও প্রচলন শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরে। অন্যান্য অনেক পণ্য বা সেবার মতো এসব মুদ্রাভিত্তিক ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য যথারীতি সেলিব্রিটিদের ব্যবহার করা হয়।
ডাকসাইটে কোনো সেলিব্রিটি যখন কোনো কিছুর পক্ষে প্রচারণা চালান, অনেকে সহজে তা বিশ্বাস করে, সাত-পাঁচ ভাবার আগেই ফাঁদে পা দেয়। অনলাইনভিত্তিক এসব জাল প্লাটফরমগুলো যখন দুদিন পর উধাও হয়ে যায়, তখন বুদ্ধি বাড়ে, চোখ খোলে সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প সময়ে সহজে প্রচুর অর্থপ্রাপ্তির আশায় মানুষ এসব প্লাটফরমে বিনিয়োগ করে।
লন্ডনভিত্তিক আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) অনলাইনভিত্তিক এসব জাল মুদ্রা কারবারির বিষয়ে বারবার সতর্কতা জানিয়ে আসছে। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এসব প্লাটফরম সম্প্রসারণের জন্য সেলিব্রিটিদের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করা হয়। স্বনামধন্য তারকাদের দিয়ে নামিদামি ঘড়ি, ব্যয়বহুল গাড়িসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল পণ্যের বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় পোস্ট করা হয়, যা সংক্রামকের মতো দ্রুত ভোক্তাদের আকর্ষণ করে। এসব ক্রিপ্টোকারেন্সি প্লাটফরম যখন খ্যাতনামা তারকাদের মাধ্যমে প্রচারণা চালায়, তখন প্লাটফরমগুলোও নির্ভরযোগ্য অন্যান্য অনেক অনলাইনভিত্তিক প্লাটফরমের মতো বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। অ্যাকশন ফ্রডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ সালে অনলাইনভিত্তিক এসব ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্তরা ২ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড হারিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের অনলাইনভিত্তিক বিনিয়োগ ও স্টকব্রোকার সার্ভিস প্লাটফরম এজি বেলের কর্মকর্তা লরা সুতার অনলাইনে বিনিয়োগে আগ্রহীকে সতর্ক করে বলেছেন, আপনার কোনো বন্ধু যদি অনলাইনভিত্তিক কোনো প্লাটফরমে বিনিয়োগের সুপারিশ করে, তাহলে চিন্তাভাবনা না করে ঝট করে বিনিয়োগ করতে যাবেন না। মনে রাখবেন, আপনার বন্ধু আপনার বিনিয়োগের সব চিন্তাভাবনা করে রাখেনি। বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নিবন্ধন ও ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা, তা অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।
গত বছর যুক্তরাজ্যে অনলাইনভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট মামলার সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৮৩৪ তে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব মামলায় প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ গড়পড়তা ১৪ হাজার ৬০০ পাউন্ড হারিয়েছে।
অ্যাকশন ফ্রডের পরিচালক পলিন স্মিথ জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে যে মামলার সংখ্যা উঠে এসেছে, তা বেশ চমকপ্রদ। অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা একটা কড়া সতর্কবার্তাও বটে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনলাইনভিত্তিক যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বৈধতা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীকে সবকিছু ভালোমতো জানতে হবে।
যুক্তরাজ্যের রঙমিস্ত্রি ও ডেকোরেটর জন ওয়ালকার নিজ অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, বিটকয়েন যখন সবে শুরু হলো, বিটকয়েনের এ ধারণাকে আমাদের বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। মাত্র ২৫০ পাউন্ডে বিনিয়োগ করা যায় দেখে আমি নতুন করে পরিকল্পনা করি। আমার পরিবারকে নিয়ে কর্নওয়েলে নতুন জীবনযাপন করতে শুরু করি।
তিনি আরো বলেন, সবকিছু ভালোই চলছিল। এরই মধ্যে হঠাৎ কেউ একজন আমাকে ফোন করে বলে, আমার বিটকয়েন ব্যবসার জন্য আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তারা আরো ৫ হাজার পাউন্ড নেয়ার দরকার আছে বলে মনে করছেন। ফোনকারী এও বলে, তারা চায়, ব্যাংকের লেনদেনে আমাকে যেন কোনো কষ্ট করতে না হয়, এজন্য সব কাজ তারাই সেরে নেবে। বস্তুত জালিয়াত চক্রটি আগেভাগে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ করে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪১ হাজার পাউন্ড সরিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
তিনি এই বলে শেষ করেন, এ ঘটনা থেকে আমার শিক্ষা হলো, আসলে শূন্য থেকে আপনি কোনো ভালো ফলাফল আশা করতে পারেন না।