সোমবার ● ১১ জুন ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ১১ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দিল মেকার কমিউনিকেশন
১১ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দিল মেকার কমিউনিকেশন
এগারতম ল্যাপটপ মেলা উপলক্ষ্যে এবার একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল ল্যাপটপ মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান মেকার কমিউনিকেশন। এবার দেশের ব্যতিক্রমী মেধাবী ১১ জন শিক্ষার্থীকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৮ জুন মেলার দ্বিতীয় দিন বিকালে রুপসী বাংলা হোটেলের বকুল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শিক্ষার্থীদের কাছে বৃত্তি তুলে দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহিম, দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাহিম মাশরুর। শিক্ষাবৃত্তি প্রসঙ্গে মেলার সমন্বয়ক বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ‘আয়োজক হিসাবে আমরা এবার তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দিকে জোর দিচ্ছি। এবার এগারো জন গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমরা শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছি। আশা করছি পরবর্তী বছর থেকেও এ ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে পারবো।’যে ১১ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে তারা হলো:
স্বপন চন্দ্র দাসঃ সূর্য উঠার আগেই বাবার সাথে মাছ ধরতে নদীতে যেত স্বপন চন্দ্র দাস। সে মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চলত তাদের। নিজের বই ছিলো না। বন্ধুদের বই ধার করে পড়ত সে। শত অভাব অনটনের মধ্যেও হার মানেনি সে। রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার আদর্শ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে সে।
পিতোষ কুমার দাসঃ সংসারের হাল ধরতে বাবার সাথে মাছ ধরত পিতোষ কুমার দাস। ছিলো না পড়ার টেবিল, মানুষের দেয়া সাহায্যে পড়ালেখার খরচ চলত তার। তবুও দমে যায় নি সে। অদম্য চেষ্ঠায়, সাফল্য অর্জন করেছে সে। পেয়েছে জিপিএ-৫।
বিপুল মিয়াঃ বাবা মায়ের সীমিত আয়ে সংসার চলে না বিপুল মিয়ার। তাই সকাল-বিকাল টিয়শনি করাতে হত তাকে। তবুও অভাব পিছু ছাড়ে না তাদের। শত বাধা পেরিয়ে অভাবকে জয় করে এ বছর গাজীপুরের শ্রীপুরের তেপড়ীপাড়া থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
সৈয়দ নাজমুল হকঃ গরীব ঘরের সন্তান সৈয়দ নাজমুল হক। মা ক্যান্সারে আক্রান্ত। আভাব দূর করার জন্য টিউশনি করে, লেখাপড়ার পড়ার খরচ আর অসুস্থ মায়ের ওষুধ কিনত সে। সেই প্রিয় মাও এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান- গণিত পরীক্ষার দিন। কিন্তু ভেঙ্গে পড়েন নি সৈয়দ নাজমুল হক। শোককে শক্তিতে রুপান্তর করে জিপিএ-৫ অর্জন করে সে।
আইভী আক্তারঃ অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী আইভী আক্তারের পরিবারের। দরিদ্র পিতার আয়ে সংসার চলে না। তাই নানীর সাথে থাকে সে। বাসার আশে-পাশের ছোট ছেলে মেয়েদের পড়িয়ে নিজের লেখা-পড়ার খরচ চালায় সে। শত অভাব অনটনের মাঝেও হার না মেনে সে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শহিদুল ইসলামঃ বাবা নেই শহিদুল ইসলামের। মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালায়। অভাব অনটনের মাঝেও নিজ লক্ষ্যে অবিচল ছিলো শহিদুল ইসলাম। শত বাধা পেরিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সে।
সোহানা আক্তারঃ দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সোহানা আক্তার সংসারের অভাব দূর করার জন্য বাবার সাথে বিড়ি কারখানায় কাজ করে। এক দিকে কাজ অন্য দিকে লেখাপড়া এই দুই নিয়েই তার জীবন। শত পরিশ্রমের মাঝেও সে অর্জন করে তার কাঙ্খিত সাফল্য। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সে।
ফাতেমা আক্তার নিশাঃ দরিদ্র রিক্সাচালক বাবার আয়ে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় অভাবই মিটে না ফাতেমা আক্তার নিশার পরিবারের। তবুও হার মানে না সে। নিজ লক্ষ্যে অবিচল, ফাতেমা আক্তার নিশা শত বাঁধা পেরিয়ে অর্জন করে জিপিএ-৫।
সবুরুন নেসা বিনাঃ অভাব অনটনের মাঝে নিত্য বসবাস সবুরুন নেসা বিনার। বাবার চাকরী নেই প্রায় দুই বছর। অভাব, কষ্ঠ আর দারিদ্রের মাঝেও আলো ছড়িয়েছে সবুরুন নেসা বিনা। খেয়ে না খেয়ে , শত দুঃখ কষ্ঠের মাঝে থেকেও এবারের এসএসসি তে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
সাম্প্রতী জেরীন সম্পাঃ কৃষক বাবার আয়ে টানাটানি করে সংসার চলে সাম্প্রতী জেরীন সম্পাদের। অভাব অনটনের মাঝে, শত বাধা পেরিয়ে এবারের এসএসসি তে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সে।
লাল্টু মিয়াঃ সকালে পড়ার টেবিলে বই হাতে নেয়ার সুযোগ হয়নি। পেটের দায়ে কাস্তে হাতে যেতে হয়েছে পরের ক্ষেতে। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পর লেখাপড়া করত সে। এসএসসি রেজাল্টের সময়ও কাজ করছিল সে। শত কষ্ঠের মাঝেও সে অর্জন করেছে তার সাফল্য।