সোমবার ● ২০ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবায় এক সেকেন্ডও বিরতি হবে নাঃ চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ (বিসিএসসিএল)
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবায় এক সেকেন্ডও বিরতি হবে নাঃ চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ (বিসিএসসিএল)
ক্যাবল সংযোগ নির্ভরতা না থাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে এক সেকেন্ডের জন্যও সেবার ব্যাঘাত ঘটবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে টেলি-মেডিসিন ও টেলি-এডুকেশনের মতো সেবাসহ নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং সেবা দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
এক বছর আগে সফল উৎক্ষেপণের পর রোববার (১৯ মে) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথমবার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বর্ষপূর্তি ও সেবা বিপণন কার্যক্রম অনুষ্ঠানে বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, অনেকেই বলে একবছর হয়ে গেল, এক বছরে আমরা কী করলাম?
‘যদিও ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। উৎক্ষেপণের পরই আমাদের হাতে আসেনি। প্রায় চার-পাঁচ মাসের মতো বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে নভেম্বরে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ অন্যান্য স্যাটেলাইট থেকে ভিন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্যাটেলাইট অনেক দূরে। অনেক যন্ত্রাংশের পরিবর্তন-পরিবর্ধনের দরকার ছিল। কিছু কিছু যন্ত্রাংশ শুধু ব্যয় সাপেক্ষ না, তৈরি করতে প্রায় আট থেকে ১২ মাস সময় লেগে গেছে। ‘গাজীপুরে আমাদের যে আর্থ স্টেশন আছে, ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে কনটেন্ট সেখানে নিয়ে গিয়েছি। সেখান থেকে আমরা উপরে থ্রু (পাঠাই) করি, সেখান থেকে কাস্টমাররা পায়। এ পদ্ধতি পৃথিবীতে অত্যন্ত মানসম্মত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে ট্রান্সমিশন হয়।’
বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, প্রথম দিকে যে বিশ্লেষণ থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, এখন সেখান থেকে আমাদের একটু বিচ্যুত হতে হয়েছে। কারণ বিদেশে আগে ব্যান্ডউইথের যে দাম, এখন ব্যান্ডউইথ অনেক বেশি সরবরাহ হওয়ায় দাম কমে গেছে। সেজন্য আমরা বাইরের বাজারের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, দ্বীপাঞ্চলে অনেক দূরে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে থ্রিজি সেবা, টেলি মেডিসিন সেবা, টেলি এডুকেশন সেবা এবং এটিএম ব্যাংকিং সেবা দেবো।
‘বিদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে যায় এবং সেখানে সাইবার থ্রেটের শিকার হয়। আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দেওয়ায় সাইবার থ্রেট কমে যাবে। পারসোনাল হিসাব থেকে টাকা নিয়ে চলে যেতে পারবে না। এটিএম মেশিন থেকে বার্তাটি সরাসরি স্যাটেলাইটে গিয়ে হেডকোয়ার্টারে চলে আসে।’
শাহজাহান মাহমুদ আরও বলেন, এটিএম মেশিনগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে কানেকটেড, যেকোনো সময় কাটা যেতে পারে। স্যাটেলাইট হচ্ছে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে এক সেকেন্ডের জন্যও কোনো বিরতি হবে না। নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং সাইবার থ্রেট কমানোর জন্য ব্যাংকিং সেক্টর স্যাটেলাইটকে ভীষণভাবে পছন্দ করে। আশা করছি এটা আমাদের জন্য বিরাট একটা সেগমেন্ট হবে। একটি ব্যাংক আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে সেবা দেওয়া শুরু করবে।
সরকারের নির্দেশনায় সব টিভি চ্যানেলগুলোকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, যারা উত্তর দিয়েছে তাদের সঙ্গে সমঝোতা সই করেছি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে দরে বাইরে থেকে ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে তার থেকে কম দামে কিনতে পারবেন। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাবে চার ভাগের এক ভাগ খরচ হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। ৭-৮ বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। আগের চেয়ে ইন্টারনেট আরও কম দামে পাওয়া যাবে বলেও আশা করেন তিনি।
বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, আর্থ স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে ডাটা আপলিঙ্ক করা হবে। এরপর ক্যাবল অপারেটররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দিকে তাক করে ১১৯ ডিগ্রিতে ডাউনলোড করে ডিস্ট্রিবিউশন করবে।
তিনি আরও বলেন, যদি ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল কোথাও কাটা পড়ে তাহলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ বিকল্প পথ রেখেছে। একটি লাইন কাটা গেলে আরেকটি লাইনে ফিড যাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তারও কারণ নেই, টেলিপোর্ট ব্যবহার করে সবকটি টেলিভিশন একসঙ্গে আপলিঙ্ক পৃথিবীতে নতুন কোনো প্রযুক্তি নয়। অনেক দেশেই এ কাজ করা হয়। অতীতে কোন টেলিপোর্ট সুবিধা না থাকার কারণে পৃথক পৃথকভাবে আপলিঙ্ক করা হতো। এখন সবাই মিলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের টেলিপোর্টের মাধ্যমে আপলিঙ্ক করবো, এতে টেকনোলোজিক্যাল কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।
‘আমরা এতোদিন ভাড়া স্যাটেলাইটে ছিলাম। আজ থেকে আমরা সবাই একযোগে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে এখন সম্প্রচার শুরু করলাম। তিন মাস পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষে বিদেশি চুক্তি থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করবো।’
খরচ সাশ্রয় প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতি মেগাহার্টজ বাবদ আমরা সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ডলার বিদেশি চ্যানেলকে দিতাম। ওই রকই একটা মূল্য, পুরো টাকাটাই দেশে থাকবে।