মঙ্গলবার ● ১৪ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » দরজির কাজে প্রযুক্তির ছোঁয়া
দরজির কাজে প্রযুক্তির ছোঁয়া
দুইটায় ক্লাস, তাই কিছুটা তড়িঘড়ি করেই দুপুর ১২টার দিকে কাটিং মাস্টারকে কামিজের নকশা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ফারজানা আলম। ল্যাপটপ খুলে স্ক্রিনে ভাসা কামিজের মতো ‘হুবহু গলা ও হাতে নকশা হবে’ বলে ফরমাশ দেন এই শিক্ষার্থী।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি দরজির দোকানে দেখা যায় এই চিত্র। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা আলম বলেন, ‘ঈদের দিন নিজের নকশা করা পোশাক পরার অনুভূতি ভীষণ আনন্দের। প্রযুক্তির কারণে সেটা আরও সহজ হয়ে গেছে।’
দেখা গেল গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নূর ম্যানশন, নিউমার্কেটে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তরুণীরা মোবাইল থেকে কাটিং মাস্টারকে সালোয়ার-কামিজ ও ব্লাউজের নকশা দেখাতে ব্যস্ত। ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী ওয়াজিদা বলেন, ‘অনলাইনে কোনো পোশাকের ডিজাইন বা নকশা মনে ধরলেই মোবাইলে সেভ করে রাখি। পরে সেভাবে কাপড় বানিয়ে নিই।’ প্রযুক্তির কারণে পছন্দমতো পোশাক পরার সুযোগ বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করে কলেজশিক্ষার্থী ঝরনা রহমান বলেন, ‘পোশাকে ঠিক কী ডিজাইন চাই, আগে এঁকে বোঝানো কঠিন ছিল। এখন হাতের নাগালে বাহারি নকশা। কেবল বেছে নিলেই চলে।’
আসন্ন ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গলি থেকে শুরু করে বিপণিবিতানের দরজির দোকান। দোকানে পা রাখার আগেই কানে আসছে সেলাই মেশিনের নানা রকম শব্দ। কাটিং মাস্টার গলায় ফিতা ঝুলিয়ে রঙিন চক দিয়ে কাপড়ের বুকে নকশা আঁকছেন। কাঁচিতে ‘ঘচঘচ’ শব্দ তুলে কাপড় কেটে চলেছেন। ক্রেতার ফরমাশ অনুযায়ী নকশা ফুটিয়ে তুলতে জোড়াতালিতে ব্যস্ত কারিগরেরা।
তৈরি পোশাক খাতের দাপটের পরেও দরজিবাড়িতে ভিড় করছেন সব বয়সী নারী। বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে ডেমরা থেকে নিউমার্কেটে ব্লাউজ বানাতে আসা তামান্না সালমা বলেন, ‘পছন্দসই কাপড়ে রঙের খেলা ও মাপমতো হয় বলে বানিয়ে পোশাক পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’
আরামবাগ থেকে আসা ৬৮ বছর বয়সী নুরুন নাহার ১৯৮৫ সাল থেকে নূর ম্যানশনে পোশাক তৈরি করেন। গতকাল মেয়ের কাপড় বানাতে এসেছিলেন তিনি। বললেন, ‘এককালে বানিয়ে পোশাক পরার রেওয়াজ ছিল। তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তৈরি পোশাকে মন ওঠে না।’
বেশ কয়েকটি দরজিবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, গরমের কারণে এখন সুতি পোশাকের ফরমাশ বেশি মিলছে। পাশাপাশি লম্বা কুর্তা, টিউনিক, ফ্রক স্টাইলের কামিজও বেশ চলছে। সেসব পোশাকে বাহারি লেইস, নানান ধরনের বোতাম ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বরাবরের মতো পোশাকের ছাঁটে ও হাতায় বৈচিত্র্য চাহিদার শীর্ষে। সালোয়ার-কামিজ তৈরিতে ছয় শ টাকা থেকে শুরু করে নকশা ও কাপড়ভেদে মজুরি বাড়বে। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও তাই।
১৫ থেকে ২০ রমজানের মধ্যে নতুন পোশাকের ফরমাশ নেওয়া মোটামুটি বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, আনার কলি সুপার মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা শপিং মলসহ পাড়া-মহল্লার দোকানেও ছুটছেন নারীরা। মোবাইল ফোনে নকশার ছবি এনে তাদের অনেকেই দরজির কাজটি সহজ করে দিচ্ছেন।