মঙ্গলবার ● ১৪ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিনোদন » দেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে অনুমতি পাচ্ছে নেটফ্লিক্স
দেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে অনুমতি পাচ্ছে নেটফ্লিক্স
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা নেটফ্লিক্সের গ্রাহকসংখ্যা বাংলাদেশে দুই লাখের ওপরে। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম পিআই স্ট্র্যাটেজির ধারণা এমনটাই। সে হিসাবে গ্রাহকপ্রতি ৯ ডলার করে প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে নেটফ্লিক্সের আয় ১৮ লাখ ডলার বা ১৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। দেশ থেকে প্রতি মাসে এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এটি বন্ধেরও কোনো উপায় নেই।
বর্তমানে প্রায় ১৯০টি দেশে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক ১৪ কোটি ৮০ লাখের মতো। চীন, উত্তর কোরিয়া, ক্রিমিয়া ও সিরিয়ায় এ সেবা নিষিদ্ধ হলেও সেই নিষেধ ভাঙার অনেক পথই উন্মুক্ত। বাংলাদেশেও এ সেবা নিষিদ্ধ করা সম্ভব না বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। বরং এই সেবার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইডথ কেনার ব্যয় এড়াতে এবং মানসম্মত সেবা পাওয়ার শর্ত সাপেক্ষে দেশে এর ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরাসি। এ ক্ষেত্রে শুধু লাইসেন্সপ্রাপ্ত ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) অপারেটররাই এই ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করতে পারবে। গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিটিআরসির সর্বশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে বিটিআরসির কাছে আবেদন করে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে রয়েছে সামিট কমিউনিকেশনস, আমরা টেকনোলজিস, সিস্টেম সলিউশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস, লিংক-৩ টেকনোলজিস, আমবার আইটি ও মাজেদা নেটওয়ার্ক। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কয়েকটির এনআইএক্স অপারেটরের লাইসেন্সও রয়েছে।
বিটিআরসির আগের একটি সভায় দেশে নেটফ্লিক্সের ক্যাশ সার্ভার স্থাপনে বিভিন্ন আইআইজি ও আইএসপি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস (ই অ্যান্ড ও) বিভাগের পক্ষ থেকে এর সুবিধা- অসুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করে বলা হয়, কমিশন যদি দেশে নেটফ্লিক্স ক্যাশ সার্ভার স্থাপন ও ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তাহলে আইএসপি প্রান্তে না দিয়ে ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) প্রান্তে স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, দেশে আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। তাদের নেটফ্লিক্স ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি দিলে তা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হবে। অন্যদিকে এনআইএক্স অপারেটরের সখ্যা কম (ছয়টি) হওয়ায় তাদেরকে এর অনুমতি দেওয়া যুক্তিসংগত হবে।
কমিশন সভায় নেটফ্লিক্সের সেবার ধরন এবং দেশে এর ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে এই যুক্তি উপস্থাপন করা হয় যে এর মাধ্যমে গ্রাহকরা টিভি শো, চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি এবং আরো অনেক ধরনের ভিডিও দেখার সুযোগ পায়। প্রতি মাসে নতুন নতুন টিভি শো ও চলচ্চিত্র এ সেবায় যোগ করা হয়। এই সেবা পাওয়ার জন্য গ্রাহককে নেটফ্লিক্স সাইটে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ওই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই এর সেবার ফি পরিশোধ করতে হয়। নেটফ্লিক্স ছাড়া আর কারো এর থেকে আয় করার কোনো সুযোগ নেই। নেটফ্লিক্স একটি আন্তর্জাতিক ক্লাউড বেইসড সার্ভারের মাধ্যমে তাদের কনটেন্ট সঞ্চালন করে থাকে। এর ফলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে এর সেবা গ্রহণ করা যায়।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের এক হাজার লোকেশনে ১০ হাজারের কাছাকাছি সার্ভার রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১০ টেরাবাইট সংযোগ দেওয়া সম্ভব। এসব সার্ভার আইএসপি, ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (আইএক্স) বা এনআইএক্স প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে এবং এগুলোর বেশির ভাগই আমেরিকা ও ইউরোপে অবস্থিত। বাংলাদেশে এ সেবা চলছে আইএসপি অপারেটরদের মাধ্যমে। এর জন্য আইএসপি অপারেটরদের ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইডথ কিনতে এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। এতে কোনো লাভ ছাড়াই তাদের ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য এ ছাড়া তাদের উপায়ও নেই। এ অবস্থায় দেশেই নেটফ্লিক্সের ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করা হলে ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার কমবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমার পাশাপাশি এর সেবার মানও অনেক ভালো হবে। এ ছাড়া দেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি না দিলেও এ সেবা বন্ধ করার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউবকেও দেশে ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।