মঙ্গলবার ● ৭ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলের অংশীদারিত্ব কমছেই
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপলের অংশীদারিত্ব কমছেই
আইফোনের বিক্রি কমে যাওয়ার খবরের মধ্যে টেক জায়ান্ট অ্যাপলকে আরো বড় দুঃসংবাদ শুনতে হলো। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বাজার অংশীদারিত্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফের অবস্থান হারিয়েছে। অ্যাপলকে হটিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে উঠে গেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। যথারীতি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে দক্ষিণ কোরীয় স্যামসাং। ফলে ডিভাইস বিক্রির দিক থেকে অ্যাপল এখন তৃতীয় অবস্থানে। মূলত হুয়াওয়ের অবিশ্বাস্য অগ্রগতিই অ্যাপলকে তিন নম্বরে নিয়ে গেছে। খবর জেডনেট।
তিন মাস আগেও ধারণা করা হয়েছিল অ্যাপল চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই বাজার অংশীদারিত্বে স্যামসাংকে হটিয়ে শীর্ষস্থান দখল করবে। অথচ চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কাছেই তাকে হারতে হলো!
ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) তথ্যের ভিত্তিতে ব্লুমবার্গে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বাজার অংশীদারিত্ব ছিল ২৩ দশমিক ১ শতাংশ, হুয়াওয়ের ১৯ ও অ্যাপলের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।
অবশ্য এ সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের সরবরাহ কমেছে। এর মধ্যে স্যামসাংয়ের সরবরাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং অ্যাপলের ৩০ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। তবে হুয়াওয়ের সরবরাহ অবিশ্বাস্যরকম বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ এপ্রিল সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে হুয়াওয়ের সরবরাহ বেড়েছে ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে স্মার্টফোনের সার্বিক সরবরাহ কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
তবে একটি ব্যবসার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে সেটির বাজার অংশীদারিত্ব এবং রাজস্ব (ও মুনাফা) আলাদা করে দেখতে হয়। বাজার অংশীদারিত্বের ওপর বেশি জোর দেয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়নের সঠিক পদ্ধতি নয়। দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অ্যাপল বাজার অংশীদারিত্বে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেলেও রাজস্ব ও মুনাফার দিক থেকে এখনো শীর্ষেই রয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে স্যামসাং, হুয়াওয়ে ও অ্যাপলের রাজস্ব যথাক্রমে ৪৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ও ৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে কোম্পানি তিনটির মুনাফা যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ও ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রাজস্ব ও মুনাফার ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে।
তবে মুনাফায় সব থেকে এগিয়ে থাকায় অ্যাপলের চিন্তার কোনো কারণ নেই, এমনটি ভাবাও ভুল। কারণ অ্যাপলের ব্যবসা নির্ভর করে মূলত বাজার অংশীদারিত্বের ওপর। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অ্যাপল যত বড় ও স্থিতিশীল বাজার অংশীদারিত্ব ধরে রাখতে পারবে, তত বেশি ভক্ত গ্রাহক পাবে, যাদের কাছে কোম্পানি নানা পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারবে। এতে কোম্পানির ইকোসিস্টেমের মধ্যে বেশি সংখ্যক মানুষকে যুক্ত রাখতে পারবে। তাতে যেমন বাড়বে রাজস্ব, তেমনি বাড়বে মুনাফা।
এখন স্যামসাং ও হুয়াওয়ের হ্যান্ডসেট বিক্রি বাড়তে থাকলে নিজেদের ইকোসিস্টেমের বিস্তার ঘটানো অ্যাপলের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে। এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানি দুটি অ্যাপলের ভক্ত গ্রাহকদেরও মন জয় করে নেবে; বিশেষ করে নিচের দিকের যেসব গ্রাহক খুব বেশি মূল্য সংবেদনশীল।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাপলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন এখন হুয়াওয়ের দখলে চলে গেছে। চীনের বাজার দখলে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিটি। তবে এ প্রচেষ্টা সফলতার মুখ না দেখতেই হুয়াওয়ের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি আগ্রাসী ব্যবসায়ী কৌশল নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে অ্যাপলের বাজার সম্প্রসারণ আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখন হুয়াওয়ে যদি বর্তমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে এবং চীনের ৫০ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্ব দখলে রাখতে পারে, তাহলে ২০২০ সাল নাগাদ কোম্পানিটি স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।