সোমবার ● ৬ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে টানা কয়েক বছর স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড অ্যাপল, স্যামসাং ও গুগল ডিভাইস ব্যবসা নিয়ে তীব্র সংকটে রয়েছে। শুধু প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেটই নয়, সস্তা দামের ডিভাইস বিক্রিও টানা কমছে। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্মার্টফোন বিক্রি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই হ্যান্ডসেট ব্যবসা নিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে তুলনামূলক দামি ও হাই-এন্ড ডিভাইস বিক্রি করা ক্রমান্বয়ে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ানে গুগলের মতোই তথ্য দিয়েছে স্যামসাং। হ্যান্ডসেট বাজারের শীর্ষে থাকা এ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, হ্যান্ডসেট ডিভাইস ব্যবসা ক্রমান্বয়ে দুরূহ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পরিণত স্মার্টফোন বাজারগুলোতে তীব্র চাপ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে স্যামসাং। স্মার্টফোন বাজারে বিরাজমান স্থবিরতা থেকে কীভাবে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে প্রবৃদ্ধি সংকটের কারণ কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে স্মার্টফোন বিক্রি কমার অনেক কারণ আছে। কয়েক বছর আগের চেয়ে স্মার্টফোন ডিভাইস এখন অনেক উন্নত হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবার পাশাপাশি স্মার্টফোনেই স্বাস্থ্য, বিনোদন ও আর্থিক সংশ্লিষ্ট নানা সেবা যুক্ত হচ্ছে। বেড়েছে স্মার্টফোন ডিভাইসের আয়ুষ্কালও। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনের দাম বেড়েছে। স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি সংকটের অন্যতম একটি কারণ ডিভাইসের চড়া মূল্য। মানুষ এখন একই ডিভাইস দীর্ঘ সময় ব্যবহার করতে পারছে। কাজেই নতুন স্মার্টফোনের ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মডেলগুলো বেছে নিচ্ছেন।
বৈশ্বিক বাজারে আইফোন বিক্রি বাড়াতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে অ্যাপলকে। টানা কয়েক প্রান্তিকের বিক্রি কমার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজারে আইফোনের দাম কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কোনো চেষ্টাই কাজে দিচ্ছে না। আইফোন বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয়ও কমেছে। এ পরিস্থিতিতে অ্যাপল পে, অ্যাপল টিভি প্লাস স্ট্রিমিং সার্ভিস, অনলাইন মিউজিক ও অ্যাপ স্টোর সেবা থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে অ্যাপলের সেবা খাত থেকে রাজস্ব বেড়েছে। তবে আইফোন বিক্রি থেকে টানা কয়েক প্রান্তিকই রাজস্ব কমছে প্রতিষ্ঠানটির।
স্মার্টফোনের মূল্য অনেক বেড়েছে, এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বাজারে আলোচিত ডিভাইস স্যামসাং গ্যালাক্সি এস১০-এর ভিত্তিমূল্য ৯০০ ডলার। আইফোনের সাম্প্রতিক মডেলগুলোর ভিত্তিমূল্য ৯৯৯ ডলার। হ্যান্ডসেট ডিভাইসের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি শুরু হয় আইফোনের দশকপূর্তি সংস্করণ আইফোন টেন দিয়ে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস১০-এর ফাইভজি সমর্থিত সংস্করণের দাম পড়বে ১ হাজার ৩০০ ডলার। ডিভাইসটি এখনো বাজারে ছাড়া হয়নি। অন্যদিকে ফাইভজি সমর্থিত ফোল্ডেবল হ্যান্ডসেট গ্যালাক্সি ফোল্ডের দাম পড়বে ১ হাজার ৯৮০ ডলার। ডিভাইসটি আগামী জুন থেকে সরবরাহ শুরুর কথা বলা হলেও ডিসপ্লে ত্রুটির কারণে ভোক্তা সংস্করণের সরবরাহ পেছানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হ্যান্ডসেটের মূল্য এরই মধ্যে সীমা ছাড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও ক্রমান্বয়ে দাম বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছিল, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারকে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন। ডিভাইস নির্মাতারাও ফোল্ডেবল ডিভাইস আনতে তোড়জোড় শুরু করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে উন্মোচন করা স্যামসাং ও হুয়াওয়ের ফোল্ডেবল ডিভাইস হতাশ করেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের ফোল্ডেবল ডিভাইসের ডিসপ্লে ত্রুটির কারণে ভোক্তা সংস্করণ সরবরাহ স্থগিত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে স্মার্টফোন নয়, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) হেডসেট স্মার্টফোনের বিকল্প হয়ে উঠবে বলা হলেও এ দুই প্রযুক্তি খুব বেশি সাড়া জাগাতে পারেনি। কাজেই শিগগিরই স্মার্টফোন বাজারের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।