রবিবার ● ৫ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা কোয়ালকমের
৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা কোয়ালকমের
রয়্যালটি ও পেটেন্ট নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের ইতি টেনেছে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ও চিপ নির্মাতা কোয়ালকম। গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে চলমান দ্বন্দ্বের বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়া হয়। টানা কয়েক বছর চলা একাধিক মামলা মীমাংসার জন্য অ্যাপলের কাছ থেকে ৪৫০ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করছে কোয়ালকম। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়েছে। খবর সিএনবিসি।
কোয়ালকমের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, একাধিক মহাদেশে চলমান মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি চড়া মূল্য পরিশোধ করেছে। বিশ্বব্যাপী ডজনের বেশি মামলার কারণে অ্যাপলের ফাইভজি-সংবলিত আইফোন উন্মোচনের সক্ষমতাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
কোয়ালকমের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৬ এপ্রিল বিভিন্ন দেশে চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়ার পর কোয়ালকমের শেয়ারদর বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে অ্যাপলের শেয়ারদর বেড়েছে ৫ শতাংশ। টানা কয়েক বছর চলমান দ্বন্দ্বের জেরে উভয় প্রতিষ্ঠান ব্যবসার দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ব্যবসার দিক বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশে চলমান পরস্পরিক মামলা নিষ্পত্তিতে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান দুটি পরস্পরের মধ্যে ব্যবসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি ছয় বছর মেয়াদি লাইসেন্সিং চুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি সরবরাহ চুক্তি সই করেছে।
গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান মামলা নিষ্পত্তির জন্য কোয়ালকমকে অ্যাপল অর্থ পরিশোধ করবে বলা হলেও অংকটা প্রকাশ করা হয়নি। কোয়ালকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাপলের হাতে নগদ ২২ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার রয়েছে। সে তুলনায় ৪৫০ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ অতি সামান্য।
রয়্যালটি ও পেটেন্ট নিয়ে মামলা নিষ্পত্তির আগে উভয় প্রতিষ্ঠানই জোরালো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে অন্য পক্ষকে আক্রমণ করেছিল। অ্যাপলের আইনজীবী রুফিন কর্ডেল অপ্রচলিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে রয়্যালটি আদায়ের অভিযোগ তোলেন কোয়ালকমের বিরুদ্ধে। চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে রয়্যালটি প্রদানের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে অভিমত দেন তিনি।
অ্যাপলের আইনজীবীর অভিযোগের জবাবে কোয়ালকমের আইনজীবী ইভান চেসলার বলেন, কোনো ধরনের অর্থ পরিশোধ কিংবা অনুমতি ছাড়াই কোয়ালকমের প্রযুক্তি নিজেদের ডিভাইসে ব্যবহার করে পেটেন্ট লঙ্ঘন করেছে অ্যাপল, যা প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে চীন ও জার্মানির বাজারে কোয়ালকমের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, এমন আইফোনের মডেলগুলো বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
অ্যাপলের সঙ্গে পেটেন্ট দ্বন্দ্বের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল কোয়ালকম। কারণ অ্যাপল তাদের আইফোনে কোয়ালকমের চিপ ব্যবহার বন্ধ করেছিল। ব্যবসায় ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে কোয়ালকম গত বছর দেড় হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, কোয়ালকমের ব্যবসা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অ্যাপল-কোয়ালকম মামলা নিষ্পত্তি হলেও চাপে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপল ভবিষ্যতে কোয়ালকমের কাছ থেকে আগের মতো মডেম চিপ না-ও কিনতে পারে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিজেরাই মডেম চিপ উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই লক্ষ্যে ওয়্যারলেস প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে শুরু করেছে অ্যাপল। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এ খাতে অ্যাপলের প্রবেশ ঘটলে তা কোয়ালকমের মডেম চিপ ব্যবসার জন্য নেতিবাচক হবে।