রবিবার ● ৫ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ‘নগদ’ নিয়ে ভিন্নমত সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘নগদ’ নিয়ে ভিন্নমত সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার
ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর কার্যক্রম শুরু হয় গত ২৬ মার্চ। যদিও সেবাটি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো আর্থিক সেবা প্রদান করতে হলে অনুমোদন নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এর তদারকিও থাকতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। ডিজিটাল আর্থিক সেবা দিতে হলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে পৃথক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি। অর্থ মন্ত্রণালয়ও একমত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতির সঙ্গে। ডাক অধিদপ্তরকে একই পরামর্শ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (বিআইডিএ)।
যদিও সরকারি এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করছে ডাক অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্য কারো পরামর্শ বা নির্দেশ পালনে ডাক বিভাগ বাধ্য নয় বলে মনে করছেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র। তিনি বলেন, ডাক অধিদপ্তর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আইন অনুযায়ী, আমরা কোনো সাবসিডিয়ারি করতে পারি না। অন্যরা যা বলছেন, তা অবান্তর।
দুটি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর এ টানাপড়েন অনেক দূর গড়িয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার চিঠি চালাচালিও হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক বৈঠক। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। উল্টো এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
‘নগদ’ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপড়েনের বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইন অনুযায়ী, যেকোনো ইলেকট্রনিক লেনদেন করতে হলে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েই করতে হবে। কিন্তু ‘নগদ’ আর্থিক সেবা চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়নি।
ডাক অধিদপ্তরের ‘নগদ’ চালুকে কেন্দ্র করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে কয়েক দফায় চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায়ও। ‘নগদ’-এর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদের মতামত জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ। ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওই চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে ২০১০ সালে সংশোধিত দ্য পোস্ট অফিস অ্যাক্টের পেমেন্ট সিস্টেমস সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করতে বলা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, যুগোপযোগী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ডাক বিভাগের কার্যক্রমকে মৌলিক ডাক সেবা ও আর্থিক ডাক সেবা-এ দুটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। মৌলিক ডাক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। মানি অর্ডার ও ডাক জীবন বীমা ব্যতীত অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। এ-সংক্রান্ত নতুন আর্থিক সেবা তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাভুক্ত হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এ ধরনের আর্থিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ যদি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়, তবে প্রস্তাবিত পোস্ট অফিস অ্যাক্ট-২০১৮-এর ১১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী ডাক বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক বিভাগ কর্তৃক কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির আওতাভুক্ত হবে।
‘নগদ’ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়ে গত ৩ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবকে চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘নগদ’ সেবাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির আওতায় না থাকলে দেশে বিদ্যমান সমগ্র পেমেন্ট সিস্টেমের তদারকির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ওই সেবায় লেনদেনের সংখ্যা এবং সীমা বিদ্যমান বাজারে প্রচলিত পরিমাণ থেকে কয়েক গুণ বেশি হওয়ার কারণে এক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে ‘নগদ’-এর জন্য পৃথক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়। একই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত বিআইডিএ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেয়া হয়।
সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের আর্থিক খাত পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘নগদ’ বিষয়ে সরকারকে নিজেদের পরামর্শ দিয়েছে। ডাক অধিদপ্তর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মনোমালিন্য বা টানাপড়েন ভালো দেখায় না। দেশের যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকার থেকে আসে। সরকার যেভাবে চাইবে, ‘নগদ’ সেভাবেই চলবে।