রবিবার ● ৭ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কী?
৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি কী?
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ৭ম বার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত) প্রণয়ন করেছে। উক্ত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি একটি ভাল ডকুমেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। উক্ত পরিকল্পনা বইতে ১৩টি চ্যাপ্টার রয়েছে। বর্ণিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্ধারিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দেশে যথার্থ দক্ষ জনবলের (উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত) তীব্র সঙ্কট (Acute Shortage of Skill Manpower) রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে লাখ লাখ দক্ষ জনবল আমদানি করতে চলে যাচ্ছে ৫/৬ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ঝঙ্কার শোনা যাচ্ছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যাত্রায় পথচলা শুরু করেছে, আবার কোন কোন দেশ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বাংলাদেশকে বাধ্য হয়েই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। না হয় ছিটকে পড়তে হবে উন্নয়নের ধারা থেকে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিনটি শিল্প বিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ ও জীবনধারা। প্রথম শিল্প বিপ্লবটি হয়েছিল ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। এরপর ১৮৭০ সালে বিদ্যুত ও ১৯৬৯ সালে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের আবিষ্কার ও প্রচলন শিল্প বিপ্লবের গতিকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। তবে আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে সারা দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করে নবরূপে আবির্ভূত হয় ইন্টারনেট প্রযুক্তি। এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মেশিন লার্নিংয়ের কল্যাণে এখন যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তাকেই বলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।
এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ভিত্তির ওপর শুরু হওয়া ৪র্থ শিল্পবিপ্লব তথা ডিজিটাল এ বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে, যা আগে কখনও হয়নি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমন কী রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়া। আইডিইবি আইসিটি ও ইনোভেশন সেলের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ শাহ আলম মজুমদারের ভাষায় ৪র্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর নির্মিত মানব সভ্যতার নতুন একটি যান্ত্রিক অনুভূতিপ্রবণ সিস্টেমে পদার্পণ যা একগুচ্ছ ইমার্জিং টেকনোলজি সমন্বিত ও নিখুঁত ক্রিয়াকলাপের ফল। এটা ইন্টারনেটের কল্যাণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিং লার্নিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিউরো-প্রযুক্তির নিত্যনতুন ক্ষমতার প্রকাশ আর প্রচলিত কর্মযজ্ঞের অবলুপ্তির ভীতি মিশ্রিত এক নবতর জগত। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব শ্রমবাজার আর ভবিষ্যতের কাজকর্মের ধরন, আয়ের অসমতা, ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের কাঠামোকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করছে এবং করবে। সারা বিশ্বের আলোড়নের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। ডিজিটাল বিপ্লব বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
ইন্টারনেটের আবির্ভাব এবং বহুমুখী ব্যবহারের ফলে ইতিমধ্যেই ব্যক্তিজীবন, সমাজ এবং রাষ্ট্রে এক অভাবনীয় পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। হাভাস মিডিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট টম গুডউইন পরিবর্তিত ব্যবস্থাকে বর্ণনা করেছেন এমনভাবে- ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজের কোনো ট্যাক্সি নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুক নিজের কোন কনটেন্ট তৈরি করে না, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাইকার কারবারী প্রতিষ্ঠান আলীবাবার কোন নিজস্ব গুদাম নেই এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রোভাইডার এয়ার বিএনবির নিজেদের কোন রিয়েল এস্টেট নেই। সত্যিকারের অর্থে তাবৎ দুনিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যের তত্ত্ব ও কৌশলের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে আর এসব কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব প্রযুক্তির এই পরিবর্তনকে দেখছেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে। আমরা চাই বা না চাই, এতদিন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তা-চেতনা যেভাবে চলেছে সেটা এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। এখন আমরা এক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন এ আসছে বিশাল পরিবর্তন।
বিশ্বব্যাপী ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ ও উপযোগী মানব সম্পদ তৈরি করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে দেশময় কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় দক্ষ মানুষ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি নির্ভরতা ছাড়া আমাদের দুটি ভিশনের কোনটিই অর্জন সম্ভব নয়। আর ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সুযোগ কাজে লাগানোর যথাযথ কৌশল অবলম্বন ছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাও সম্ভব হবে না। উপরের চিত্র থেকে এটা পরিষ্কার যে, একদিকে দেশে দেশে চলছে কর্মীর কাজ হারানোর ঝুঁকি অন্যদিকে চলছে মারাত্মক দক্ষতা সঙ্কট। মনে রাখতে হবে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কর্মক্ষম দক্ষ জনবলের সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়ে অনন্যোপায় হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তথা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের নব নব আবিষ্কারকে স্বাগত জানাচ্ছে, জীবনকে আরও গতিশীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য। অন্যদিকে আমরা এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের অনন্য সোনালী সুযোগের মোক্ষম সময়ে অবস্থান করছি। ২০৩০ সাল যেমন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আন্তর্জাতিক বছর। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডের অনন্য সোনালি সুযোগের মোক্ষম সময়ে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল যেমন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আন্তর্জাতিক বছর। আবার সেই বছরটিই আমাদের সর্বোচ্চ কর্মক্ষম মানুষের দেশ (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মানুষ) বা সর্বনিম্ন নির্ভরশীল মানুষের দেশ হওয়ার বছর। এ সুযোগকে আমরা বলি ‘গোল্ডেন অপরচুনিটি ফর বাংলাদেশ’। এ গোল্ডেন অপরচুনিটিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত Strategic Workforce Plan বা কৌশলগত শ্রমশক্তি পরিকল্পনা যার ছয়টি স্তর হচ্ছে-
১. কৌশলগত দিক-নিদের্শনা প্রদান
২. কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যোগ্য জনবলের সরবরাহ বিশ্লেষণ
৩. কর্মসংস্থানের চাহিদার বিশ্লেষণ
৪. সরবরাহ ও চাহিদার ব্যবধান বিশ্লেষণ
৫. সমাধাণ সূত্রায়ন, প্রয়োজনীয় ইন্টারভেনশন এরিয়া ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণসহ বাস্তবায়ন
৬. বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ
কৌশলগত কর্মসংস্থান পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গবর্নেন্সের ত্রিমাত্রিক অনুশীলন এখন সময়ের দাবি। গবর্নেন্সের তিনটি মাত্রা বা ডাইমেনশন রয়েছে-
ক. ইন্সস্ট্রুমেন্ট (আইন/হুকুম বা প্রবিধান)
খ. ইন্সস্ট্রুমেন্সসমূহকে কার্যকরণের জন্য প্রোগ্রাম তৈরি/ কর্মসূচী প্রণয়ন/ প্রজেক্ট প্রণয়ন
গ. উক্ত প্রোগ্রাম/ কর্মসূচী/ প্রজেক্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উৎপাদন বা সেবার নির্ধারিত মান যথোপযুক্ত সময়ে নিশ্চিত সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা Strategic Workforce Plan এর ছয়টি স্তরের মধ্যে ১ম স্তরটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। যা আমাদের বহুল আলোচিত স্বপ্ন-ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১। এদিক নির্দেশনা সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, সংস্থা এবং শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক মিশনসমূহ নির্ধারণ করত টিভিইটি (TVET) এনরোলমেন্ট ২০২০ সালে ২০% ২০৩০ সালে ৩০% এবং ২০৪০ সালে অন্তত ৪৫% এ উন্নীত করে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উপযোগী টিভিইটি (TVET) প্রাজুয়েট তৈরি ও শ্রম বাজারে যুক্ত করার কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। Strategic Workforce Plan এর অন্যান্য স্তর তথা শ্রমশক্তির চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ বিশ্লেষণ ও ব্যবধান নির্ণয়। এ ক্ষেত্রে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের এতদ্বসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, ২০৩০ এ সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মক্ষম জনশক্তির পটেনশিয়ালিটি এবং উন্নত দেশসমূহে জনসঙ্কট ও স্কিল ক্রাইসিসের সুযোগ গ্রহণের লক্ষ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অকুপেশন ভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ, সে অনুযায়ী জনসম্পদের সরবরাহ বিশ্লেষণ এবং তদপ্রেক্ষিতে যোগ্যতা ও দক্ষতার ঘাটতি নির্ণয় করার জন্য শ্রমশক্তির একটি ফোরকাসটিং রিপোর্ট তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী। এজন্য বিদ্যমান শ্রেণীবিন্যাসকৃত জনবল কাঠামো NTVQF এর হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল এক্সিপানশন তথা BQF প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করত- দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীকে যোগ্য করে তোলার একটি রোডম্যাপ বা Build Skill Bangladesh ধারণাপত্র নামে আইডিইবি ইতোমধ্যে প্রণয়ন করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে যা এ স্তরের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। পলিসি, পরিকল্পনা ও প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য Build Skill Bangladesh গবেষণা বইটিতে ১৪টি সাধারণ ও ৫টি শিক্ষা প্রযুক্তি বিষয়ক আইন প্রণয়ন এবং আইনের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ১৪টি সংস্থা গঠনের সুপারিশ আছে।
এজন্য টিভিইটি (TVET) সংশ্লিষ্ট সকল জনবল তথা পলিসি মেকার, প্রফেশনাল, শিক্ষক ও সাপোর্টিং স্টাফকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউশনাল ও অর্গানাইজেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বল্পতম সময়ে একটি সমন্বিত শিক্ষক যোগ্যতা কাঠামো ও নিয়োগ বিধিমালা তৈরি করে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ১২:১ অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ করা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থাকরণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং মানসম্মত যন্ত্রপাতির সংস্থান, গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পলিসি, পরিকল্পনা ও প্রজেক্ট প্রণয়নসহ সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ট্রেডিশনাল টিভিইটি (TVET) শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মূল্যায়ন তথা যোগ্যতা যাচাই NTVQF এ্যাসেসমেন্ট এর আদলে করত গ্র্যাজুয়েটদের সনদ ও তথ্যাবলী অনলাইন ডাটাবেজে সংরক্ষণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা, প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক শিল্প জোন এ একটি করে পলিটেকনিক/ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং অথনৈতিক শিল্প জোনে এ স্থাপিত শিল্পের ধরন অনুযায়ী টেকনোলজি বা ট্রেড নির্বাচন, শিক্ষা খাতের মোট বাজেটের পর্যায়ক্রমে ৫০% কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকরণ এবং দক্ষতা ও শ্রমের মূল্য অনুধাবনসহ দক্ষতা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় আগামী বছর থেকেই অন্তত একটি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্স বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।
প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রযুক্তির মানুষকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করে কারগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে সাধারণ শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার সর্বপ্রকার প্রসার ঘটাতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখনই দেশের চাহিদা ও প্রযুক্তিভিত্তিক মানব সম্পদ গড়ে তুলতে দেশের সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরিবিষয়ক শিক্ষার কোর্স চালু করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা ও আর্থিক খাতকে সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের জন্য তৈরি করতে হবে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এজন্য প্রয়োজন হাজার হাজার আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা কর্মী ও ব্যবস্থাপক। এজন্য এখনই কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে তথ্য প্রযুক্তিমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। এমন একটি তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষ প্রজন্ম তৈরি করতে হবে, যাতে ২০২৫ সালের পরে দেশ আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে। মনে রাখতে হবে, মানহীন সনদধারী দ্বারা এ যজ্ঞ সম্পন্ন করা যাবে না। দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারব। তাহলেই সম্ভব হবে অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো আর মোকাবেলা করা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। মোকাবেলা ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।