বুধবার ● ৩ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » মে মাস থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু
মে মাস থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দেশের সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ১২ মে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এক বছরপূর্তির দিন থেকেই সব টিভি চ্যানেলকে ফ্রিকুয়েন্সি বরাদ্দ দেয়া হবে। ওই দিন থেকেই টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে যেতে পারবেন। এই তারিখ ঘোষণা করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ কারিগরি দিক পরীক্ষা করে দেখছে। সম্প্রচারের জন্য গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনে দিন রাত কাজ চলছে। নির্ধারিত দিনে সব টেলিভিশন সম্প্রচারে নাও যেতে পারে। কারণ বিসিএসসিএলের সঙ্গে অনেক আগেই বেসরকারী ৭ টেলিভিশন চ্যানেল চুক্তি করে রেখেছে। সরকারী টেলিভিশনে ফ্রিকুয়েন্সি দেয়া সম্ভব হলেও বেসরকারী টেলিভিশনগুলোকে এখন পর্যন্ত ফ্রিকুয়েন্সি দেয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্প্রতি বলেন, রাষ্ট্রীয় তিন চ্যানেল বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশিন ও বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরীক্ষামূলক সম্প্রচার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকুয়েন্সি পাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন এক মাসের বেশি সময় আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিচ্ছে। বেসরকারী টেলিভিশনগুলোর মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, সময় টিভি, ডিবিসি নিউজ, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি, এনটিভি, একাত্তর টিভি, বিজয় বাংলা ও বৈশাখী টিভি। এই চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ট্রান্সমিশন ব্যবহার করতে পারবে। ৭টি বেসরকারী টেলিভিশন আমাদের সঙ্গে চুক্তি করছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন আমরা গ্রাউন্ড স্টেশনে ঢুকতে পারছি। ফ্রিকুয়েন্সি দেখতে পাচ্ছি। যা গত মাসেও আমাদের হাতে ছিল না। এখন আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন বিদেশী প্রকৌশলীদের সঙ্গে। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) জানিয়েছে, বেসরকারী চ্যানেলগুলো চুক্তি করলেও তারা বিদেশী স্যাটেলাইট এ্যাপস্টারের সংযোগও রেখে দিয়েছে। কারণ সেবা নেয়ার চুক্তি বাতিল করতে হলে তিন মাস আগে নোটিস দিতে হয়। জানুয়ারিতেই সেই নোটিস দিয়ে দেবে এসব বেসরকারী টিভি চ্যানেল। ফলে মার্চ থেকে পুরোদমে শুধু বঙ্গবন্ধু-১ দিয়ে ট্রান্সমিশন করবে এই সাতটি চ্যানেল। টেলিভিশনের ট্রান্সমিশন বিষয়ে ডিটিএইচ কোম্পানি রিয়ালভিউও সম্প্রতি বিসিএসসিএলের সঙ্গে চুক্তি করেছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ৪৮টি টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু করবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।
সূত্র জানিয়েছে, দুটি স্থানীয় ভিস্যাট কোম্পানির সঙ্গেও চুক্তিতে যাচ্ছে বিসিএসসিএল। এটা হলে দ্রুততার সঙ্গে আয় করতে শুরু করবে সরকারী দেশের প্রথম এই স্যাটেলাইট। গত বছরের ১১ মে নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রীতে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার পর নবেম্বরে তা বিসিএসসিএলকে বুঝিয়ে দেয় স্যাটেলাইটটির নির্মাতা কোম্পানি থ্যালাস এ্যালেনিয়া স্পেস। আর সে কারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতেই অনেক বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিএসসিএল। এদিকে বর্তমানে চালু থাকা বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর বেলায় তেমন কিছু উল্লেখ না করলেও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্তরা সেবায় আসতে হলে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকেই সম্প্রচার করতে হবে। সম্প্রতি কমিশন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিটিআরসি এটি এখন টেলিভিশনের স্পেকট্রাম বরাদ্দ পাওয়ার শর্ত হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছে। তবে স্যাটেলাইট কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) টেলিভিশনগুলোকে স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেবে।
বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) বাণিজ্যিক বিপণনের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশের মধ্যে সেবা দিতে বিসিএসসিএল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। চুক্তির ফলে স্যাটেলাইট থেকে নৌযানে অত্যাধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। অল্পদিনের মধ্যে দেশের আরও কয়েকটি দফতরের সঙ্গে বিসিএসসিএলের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল যোগাযোগ করে যাচ্ছে। এসব দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে।