সোমবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » সিইও হিসেবে সত্য নাদেলার পাঁচ বছর
সিইও হিসেবে সত্য নাদেলার পাঁচ বছর
পাঁচ বছর আগে মাইক্রোসফট নিয়ে লিখতে বসলে শুরুটা হয়তো এমন হতো-
‘উইন্ডোজ ফোন ব্যর্থ। হিমশিম খাচ্ছে উইন্ডোজ ৮। গ্রাহক, বিনিয়োগকারী আর সফটওয়্যার নির্মাতাদের বিশ্বাস তলানিতে। একসময়ের বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানের এখন ভরাডুবি। যেন নকিয়ার পথেই হাঁটছে।’
পাঁচ বছরে আমূল বদলে গেছে চিত্র। সেরা ক্লাউড কম্পিউটিং সেবাদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ক্ষণিকের জন্য হলেও অ্যাপলকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠানের তকমা পেয়েছিল। কর্মী, গ্রাহক, সফটওয়্যার নির্মাতা-সবার চোখেই এখন মাইক্রোসফট সেরা।
সবচেয়ে বড় কথা, মাইক্রোসফটজুড়ে এখন পরিবর্তনের হাওয়া। এই পরিবর্তন এনেছেন সত্য নাদেলা। ঠিক দুই সপ্তাহ আগে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পাঁচ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি। পত্রিকার কলাম লেখকেরা মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন ‘নাদেলার আমলের মাইক্রোসফট’। তবে দু-একটা সিদ্ধান্ত বাদ দিলে কেউই মোটা দাগে সত্য নাদেলার সমালোচনা করেননি, কিংবা পারেননি। সে চেষ্টায় আমরা যাচ্ছি না। বরং তাঁর উঠে আসার গল্প দেখি।
শৈশব কেটেছে ভারতে
ভারতের হায়দরাবাদে ১৯৬৭ সালে সত্য নাদেলার জন্ম। শৈশবে ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। স্কুলে খেলতেনও। তবে শিগগিরই বুঝতে পারেন তাঁর ভালোবাসা আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে। সে কারণেই হয়তো বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে মানিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ১৯৮৮ সালে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক করেন। তবে সেখানে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয় না থাকায় স্নাতকোত্তর করেন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মিলওয়াওকি থেকে, ১৯৯০ সালে। এরপর সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠান সান মাইক্রোসিস্টেমসে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন।
মাইক্রোসফটে নাদেলা
১৯৯২-১৯৯৯
* ১৯৯২ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেন সত্য নাদেলা। সে সময় সিইও ছিলেন বিল গেটস। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিশ্বজয়ের সবে শুরু। তখন মাইক্রোসফটে ৩০ জন ভারতীয় কাজ করতেন।
* মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার কিছু পরেই বিয়ে করেন। স্ত্রী অনুপমা প্রিয়া নাদেলা তখন ভারতেই ছিলেন। অভিবাসন জটিলতায় পড়েন নাদেলা। অনুপমাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতি ছেড়ে ‘এইচ-১বি’ ভিসার আবেদন করেন।
* মাইক্রোসফটের শুরুর দিনগুলোতে প্রতি সপ্তাহান্তে প্রায় ৩ হাজার ৩৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে যেতেন এমবিএর ক্লাস করতে। ১৯৯৭ সালে এমবিএ শেষ করেন তিনি।
* ১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাহী পদে আসেন। সে সময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য ওয়েব সেবা মাইক্রোসফট বিসেন্ট্রালের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে পদোন্নতি পান।
২০০০-২০১৪
* ২০০০ সালে সিইও পদে আসেন স্টিভ বলমার। পরের বছর নাদেলাকে মাইক্রোসফট বিজনেস সলিউশনসের করপোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হয়।
* এরপর একের পর এক পদোন্নতি পান তিনি। ২০০৭ সাল নাগাদ মাইক্রোসফট অনলাইন সার্ভিসেসের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হন নাদেলা। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন বিং, মাইক্রোসফট অফিসের অনলাইন সংস্করণ এবং এক্সবক্স লাইভের গেমিং সেবার দায়িত্ব আসে তাঁর কাঁধে।
* ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও পদোন্নতি দিয়ে সার্ভার ও টুলস বিভাগের প্রেসিডেন্ট করা হয় নাদেলাকে। সে সময় মাইক্রোসফটের অর্থকরী সব সেবার দায়িত্ব পান তিনি।
* এরপর মাইক্রোসফটের দুর্দিন শুরু হয়। উইন্ডোজ ৮ সফলতার মুখ দেখেনি। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েডের কাছে উইন্ডোজ ফোনের বিক্রি ছিল খুবই নগণ্য। গুগলের আধিপত্যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বিং।
* ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে নেন বলমার। ২০১৩ সালের আগস্টে তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে নতুন সিইও খোঁজার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটিতে স্টিভ বলমার ও বিল গেটসও ছিলেন।
সিইও হিসেবে সত্য নাদেলা
* অনেক কানাঘুষার পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন সিইও হিসেবে সত্য নাদেলার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সময় আগের দুই সিইওর সমর্থন পেয়েছিলেন নাদেলা। প্রথম বছর নাদেলার বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
* দায়িত্ব পেয়েই সব কর্মীকে ই-মেইল করেন তিনি। সেখানে নিজের সম্পর্কে বলেন, পরিবার, কৌতূহল এবং জ্ঞানের জন্য ক্ষুধা-এগুলোই আমাকে সংজ্ঞায়িত করে। প্রোগ্রামিং সংকেতকে তিনি কবিতার সঙ্গে তুলনা করেন।
* প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেয়েই বেশ পরিবর্তন আনেন মাইক্রোসফটে। নাদেলার নেতৃত্বেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে অংশীদারত্বে যায় মাইক্রোসফট।
-অ্যাজিউর ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম
-অ্যাপলের আইপ্যাডের জন্য মাইক্রোসফট অফিস চালু করেন
-২৫০ কোটি ডলার খরচ করে মাইনক্র্যাফটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মোজাং কেনেন
-৯ বাদ দিয়ে সরাসরি উইন্ডোজ ১০ চালু করেন
-মাইক্রোসফটের প্রথম ল্যাপটপ সারফেস বুক চালু করেন
-হলোগ্রাফিক চশমা মাইক্রোসফট হলোলেন্স প্রকাশ করেন
* নাদেলার দর্শন হলো অংশীদারত্ব। যেখানে গ্রাহক আছে সেখানেই সেবা দেওয়া।
* বেশ কিছু বড় অধিগ্রহণ হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে।
-২০১৬ সালে ২ হাজার ৬২০ কোটি ডলারে লিংকড-ইন কেনেন
-৭৫০ কোটি ডলারে কেনেন গিটহাব
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, বিবিসি