মঙ্গলবার ● ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে যত আয়োজন
এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে যত আয়োজন
আগামী ৯-১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫’। গতবারের মতো এবারের আয়োজনটিও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) যৌথভাবে আয়োজন করছে। আজ সোমবার পিআইডি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বক্তব্য রাখেন। আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান।
সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানান বেসিস সভাপতি। তিনি জানান, সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো প্রথমবারের মত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স সংযোজন করা হয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ প্লাটফর্ম, আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা (আইটিইউ)’র সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিন ঝাও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় তার স্বপ্ন এবং ভাবনা বিনিময় করবেন। এছাড়া মালদ্বীপ ও ভুটানের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীসহ সার্কভুক্ত কয়েকটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীরা এতে উপস্থিত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ আকর্ষণীয় ও অর্থবহ করতে আইসিটি খাতের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ ডাকে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৯টি দেশের ৮১ জন বিদেশি বক্তা তাদের আগমন এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। তারা আমাদের কর্মশালা ও সেমিনারগুলোতে অংশগ্রহণ করে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে মূল্যবান পরামর্শ দেওয়ার পাশাপশি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে যাওয়া, অর্জন ও সামগ্রিক কার্যক্রম স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করবেন। এতে করে এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডকে আমরা আরো বড় পরিসরে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।
সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা, বাংলার জনমানুষের উন্নয়নে এবং ২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা, দুর্নীতি ও দারিদ্রমুক্ত এবং আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে মহান ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারপর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী নেতৃত্বে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্ঠা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, শুরুতে অনেকের কাছে নানা ধরণের সংশয় থাকলেও আমাদের যুগোপযোগী কর্মকান্ড ও আপনাদের নি:শর্ত সমর্থনে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে আজ অনেক পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য “আইসিটি পলিসি-২০০৯” প্রণয়ন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলাম, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, কন্ট্রোলার অব সার্টিফায়িং অথরিটি সৃষ্টি, ন্যাশনাল ই-সার্ভিস চালুকরণ, সারাদেশে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, বাংলা গভনেট ও ইনফো সরকার ফেজ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ১৮,১৩২ টি সরকারি অফিসকে একটি অভিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, সব সরকারি সেবাকে আরো জনবান্ধব করার জন্য এবং আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে আরো ব্যাপক আকারে প্রচারের জন্য সারাদেশের প্রায় ২৫,০০০ সরকারি ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টাল “জাতীয় তথ্য বাতায়ন” উদ্বোধন, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন ও ২৩,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা ইত্যাদি নানাবিধ উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হয়েছি।
ইনু বলেন, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক ও যশোর হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা বর্তমান সরকারের অন্যতম উলেখযোগ্য কাজ যা বর্তমানে পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুসংহত করার জন্য “লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট”, আমাদের আগামী প্রজন্মকে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করে তোলার জন্য “ফাস্ট ট্র্যাক ফিউচার লিডার” প্রশিক্ষণসহ আইটি টপ-আপ ট্রেনিং ও আইটিইএস স্কিল ফাউন্ডেশন ট্রেনিং চলমান রয়েছে, ক্রম বর্ধমান ব্যান্ডউইড্থের চাহিদা মেটানোর জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, আগামী বছরের প্রথমার্ধে এই সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযুক্ত হতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। আগামীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্কের পাশ ৪-টিয়ার ডেটা সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক প্রাঙ্গনে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিগম প্রায় ৬ বছরে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ হয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছ্ েতাছাড়াও ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নেটওয়ার্ক অবকাঠামো দেশের উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি স্থাপন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ইতোমদ্যে দেশের প্রতিটি ‘ইউনিউন ডিজিটাল সেন্টার’ কে ডিজিটাল সেন্টার হিসেবে রূপান্তর করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে এসব ডিজিটাল সেন্টার থেকে গ্রামের জনগোষ্ঠি বিভিন্ন ধরনেরই সেবাগ্রহণ করছে এবং ভবিষ্যতে এসব কেন্দ্রকে মিনিবিপি ও সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষিত যুব সমাজের আত্ম-কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসবের একটি সরাসরি সুফল আমরা দেখছি দারিদ্র বিমোচনে। বর্তমানে দারিদ্রের হার ৪০% থেকে ২৪% নেমে এসেছে। আপনারা জানেন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। ইতোমধ্যে আমাদের মাথা পিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যা প্রায় ১২০০ ডলারের কাছাকাছি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। যা একটি গতিশীল অর্থনীতির পরিচয় বহন করে।
এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সফট এক্সপো, ই-গভর্ন্যান্স এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো, ই-কমার্স এক্সপো ও বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট কনফারেন্স নিয়ে মোট ৫টি প্রদর্শনী, সেমিনার, কর্মশালা ছাড়াও আইটি জব ফেয়ার, সিইও নাইট এবং অ্যাওয়ার্ড নাইট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সহযোগিতায় এ আয়োজনে অন্যদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) এবং বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি)। এগিয়ে এসেছে চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) ফোরাম, বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এবং টাই’র মতো প্রতিষ্ঠান।
এবারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সারাদেশের ৭টি বিভাগ থেকে ৭টি হাসপাতাল, ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৭টি জেলা প্রশাসন, ৭টি উপজেলা প্রশাসন, ৭টি পুলিশস্টেশন, ৭টি পৌরসভাসহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সিটি কর্পোরেশন, পাবলিক সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে একটি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বমোট ৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য যথাক্রমে ৭টি বেস্ট ডিজিটাল হাসপাতাল, ৭টি বেস্ট ডিজিটাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৭টি বেস্ট ডিজিটাল জেলা প্রশাসন, ৭টি বেস্ট ডিজিটাল উপজেলা প্রশাসন, ৭টি বেস্ট ডিজিটাল পুলিশ স্টেশন, ৭টি বেস্ট ডিজিটাল পৌরসভা, একটি বেস্ট ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, একটি বেস্ট ডিজিটাল সিটি কর্পোরেশন, পাবলিক সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থা থেকে ১টি বেস্ট সিটিজেন সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক নজরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫
স্থান : বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র
তারিখ ও সময় : ৯-১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত
বাস্তবায়নে : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগর এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)
সহযোগী : বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প
পার্টনারঃ BCS, BACCO, ISPAB, BWIT, BIJF, CTO Forum Ges TiE
প্রবেশ মূল্য : বিনা মূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা
সেমিনার/ কর্মশালা/ সমাবেশ : প্রদর্শনী, সেমিনার, কর্মশালা, আইটি জব ফেয়ার, সিইও নাইট ও এওয়ার্ড নাইট (সব মিলিয়ে মোট ৪৩ টি সেশন)
উল্লেখযোগ্য আয়োজন : ১) ই-গভর্ন্যান্স(১০টি সেশন)
২) সফট এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো, ই-কমার্স এক্সপো (৩টি মিলিয়ে মোট ১৬ টি সেশন)
৩) বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট কনফারেন্স,উইমেন আইটি ফোরাম, টেকনিক্যাল সেশন, সিইও নাইট ও অ্যাওয়ার্ড নাইট (সব মিলিয়ে ৮টি)
সেমিনার/কর্মশালা বক্তা : বিদেশী ৮১ জনসহ মোট ২০০ জন
প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা : ১) পাবলিক সেক্টর (ই-গভ)- সর্বমোট ৬৬টি (স্টল-৪৪ টি, মিনি প্যাভিলিয়ন-১২ টি, প্যাভিলিয়ন ১০ টি) ২) বেসরকারি সেক্টর - সর্বমোট ১৫২টি ((স্টল-৯৩ টি, মিনি প্যাভিলিয়ন-৪৩ টি, প্যাভিলিয়ন ১৬ টি)।