মঙ্গলবার ● ৬ জানুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ইন্টারনেটে পিছিয়ে বাংলাদেশ!
ইন্টারনেটে পিছিয়ে বাংলাদেশ!
‘বাংলাদেশ ইন্টারনেট সেবায় পিছিয়ে রয়েছে’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। কোনও প্রতিবেদনে ব্যবহারে পিছিয়ে আবার কোন প্রতিবেদনে স্পিডে পিছিয়ে। এছাড়া দেশে মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বিটিআরসির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দ্বিমুখী তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট-এর দশম কমিশন বৈঠকে ‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড ২০১৪: ব্রডব্যান্ড ফর অল’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখনও একেবারে শেষের দিকে অবস্থান করছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তানই ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে দেশে মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ গৃহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে গৃহভিত্তিক হিসাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান। দেশটির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ গৃহে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতে ১৩ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১২ দশমিক ৭, পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৩ ও নেপালে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ গৃহ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে ২ দশমিক ১ শতাংশ গৃহে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিপর্যায়ে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ঘনত্ব দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এ ঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম। ২৯ শতাংশ ব্যবহারী নিয়ে ভুটানের অবস্থান এ তালিকায় দ্বিতীয় ও ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে নেপাল রয়েছে ১২তম অবস্থানে। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের ঘনত্ব বিবেচনায় বিশ্বের ১৯০টি দেশের একটি তালিকা করেছে ব্রডব্যান্ড কমিশন। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে মাত্র ছয়জন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করেন। দেশে সক্রিয় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি হাজারে চারজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ১২৮তম স্থানে। ১১০ পেজের সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়া যাবে http://www.broadbandcommission.org/Documents/reports/bb-annualreport2014… এই ঠিকানায়।
উল্লেখ্য, দেশে এক এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে বিটিআরসি। এ হিসাবে সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি এবং ওয়াইম্যাক্স ও আইএসপিগুলোর মাধ্যমেই কেবল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতে কয়েক হাজার ইন্টারনেট কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন সেবার পাশাপাশি ব্যাংকিং সেবাও পাওয়া যায়। আর এসব কেন্দ্র পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসীরাই। বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর শেষে দেশে ইন্টারনেটের সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবার গ্রাহক। ছয় সেলফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সেবার সংযোগ সংখ্যা ৪ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার। এছাড়া আইএসপি ও পিএসটিএনের ইন্টারনেট সেবায় ১২ লাখ ৩৪ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ২ লাখ ৪৯ হাজার সংযোগ চালু রয়েছে।
এদিকে বিটিসিএলের ইন্টারনেট সার্ভিস গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেলেও সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত ব্যয় চিন্তা করে এর ব্যবহার করতে পারছে না। তবে ইউনিয়ন পরিষদগুলো ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে ই-তথ্য কেন্দ্র পরিচালনা করছে। ইন্টারনেট সার্ভিস নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য সারাদেশে এক হাজার ৬শ’ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বিটিসিএলের ইন্টারনেট সার্ভিস দেশের ৫শ’টি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ২শ’র বেশি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) গ্রাহক রয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমেছে। পাশাপাশি চালু হয়েছে ডাটাভিত্তিক থ্রিজি প্রযুক্তি। তার পরও ইন্টারনেট সেবার নিয়মিত গ্রাহকের সিংহভাগই রাজধানী ও বড় শহরকেন্দ্রিক। এখনো মূলত অভিজাত শ্রেণীর সেবা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। উচ্চমূল্য, ইন্টারনেটভিত্তিক প্রয়োজনীয় সেবা ও সচেতনতার অভাবই এজন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের জরিপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা যাক। তাদের হিসাবে, বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১১ শতাংশ সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। অবশ্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাবে মোট জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশের ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আয়ের মাত্র ৪ শতাংশ আসছে ডাটাভিত্তিক সেবা থেকে। গ্রামীণফোনের পর্যালোচনায় দেশের গ্রাহকদের ৮০ শতাংশই ইন্টারনেট সম্পর্কে সচেতন নয়। সচেতনতার অভাব এর সম্প্রসারণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরিপে আরও বলা হয়, মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার নিয়মিত ব্যবহারকারী আট শতাংশ। সেবাটির অনিয়মিত ব্যবহারকারী রয়েছে নয় শতাংশ। আর তিন শতাংশের এ-সম্পর্কিত জ্ঞান থাকলেও, তা ব্যবহার করে না। ডাটাভিত্তিক সেবার নিয়মিত গ্রাহকের ৮০ শতাংশই মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে। এছাড়া ২১ শতাংশ ইউটিউব, ১৪ শতাংশ উইকিপিডিয়া, ১২ শতাংশ সংবাদমাধ্যম এবং ১১ শতাংশ ব্লগ ব্যবহার করে।
ইন্টারনেটে ডাউনলোডের গতির দিক থেকেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ১২১ তম স্থানে রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ওকলার সাম্প্রতিক নেট ইনডেক্সে এ তথ্য জানিয়েছে। ওকলার নেট ইনডেক্স অনুযায়ী, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কেবল পাকিস্তানের (১৭২ তম) চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ডাউনলোডের গতির হিসাবে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও শ্রীলংকা এগিয়ে রয়েছে। ওকলার তথ্য অনুযায়ী, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে হাউজহোল্ড ডাউনলোড স্পিড ৬.৮ এমবিপিএস। মোবাইলে হাউজহোল্ড ডাউনলোড স্পিড ২.৪। রাজধানী ঢাকায় ডাউনলোড গতি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এরপর রয়েছে চট্রগ্রাম। বাংলাদেশসহ সাড়া বিশ্বের সার্বিক ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে http://www.netindex.com/download/allcountries/ এই ঠিকানায়। এবং আপলোড স্পিড সম্পর্কে জানা যাবে http://www.netindex.com/upload/allcountries/ এই ঠিকানায়।
তবে সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ ওয়েব-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে ইন্টারনেট স্বাধীনতায় বাংলাদেশের ৬৩তম স্থান অধিকার করেছে। ওই চিত্রে আরও দেখা গেছে, ইন্টারনেট স্বাধীনতায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্বের ৮৬টি দেশের ইন্টারনেট সংযোগ ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রকাশিত ওয়েব ইনডেক্সটির শিরোনাম ‘দ্য ওয়েব অ্যান্ড রাইজিং গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ৪৮তম স্থানে। অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে ৭৬তম স্থানে। মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে ৮৬টি দেশকে বিচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৮ নম্বর। আর পাকিস্তান ১৭.৭৬ নম্বর। তবে সৌদি আরব রয়েছে ঠিক বাংলাদেশের পরেই। দেশটি পেয়েছে ২৭.৭২ নম্বর। নেপাল ২৩.৯৫ নম্বর পেয়ে রয়েছে ৬৯তম স্থানে। ইনডেক্সের নিচের দিকে রয়েছে ইয়েমেন, মিয়ানমার ও ইথিওপিয়া। শূন্য পেয়েছে ইথিওপিয়া। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://thewebindex.org/report/#2._overview_of_rankings এই ঠিকানায়। সুত্রঃ কালেরকন্ঠ