সোমবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » ‘অ্যালেক্সা’ র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার যত অপকৌশল
‘অ্যালেক্সা’ র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার যত অপকৌশল
ওয়েবসাইট র্যাংকিং হলো অনলাইন মিডিয়ার ভিড়ে আপনার ওয়েবসাইটটি কততম অবস্থানে আছে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার একটি মাধ্যম। এ কাজগুলো করে থাকে www.alexa.com,www.sitescore.com অথবা www.heatsync.com এর মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব সাইটে গিয়ে ক্লিক করে ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ দিলেই জানা যাবে যেকোনো ওয়েবসাইটের র্যাংকিংয়ের অবস্থান। এখন প্রশ্ন হলো- এসব সাইটে সার্চ দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটের যে অবস্থান জানতে পারছেন তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য? এ প্রশ্ন ওঠার পেছনে কারণ হলো- কয়েকটি ওয়েবসাইটে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে সার্চ দিলে যদি একেক সাইটে একেক রকম রিপোর্ট প্রদর্শন করে?
উইকিপিডিয়া এবং মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া র্যাংকিং নির্ণয়কারী সাইট ‘অ্যালেক্সা’ ক্যালিফোর্নিয়ার আমাজন সাইটের একটি সাবসিডিয়ারি সাইট। সাইবার স্পেসম্যান ব্রুস জিলাটের মালিকানাধীন এ সাইটটি অন্য ওয়েবসাইটের র্যাংকিং সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। এই ওয়েব ইনফরমেশন কোম্পানি থেকে ওয়েব ট্রাফিক রিপোর্টও দেখানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে যদি কোনো সাইট প্রথম এক লাখের মধ্যে না থাকে তাহলে যে রিপোর্ট দেখায় তা প্রকৃতপক্ষে ভুল হয়ে থাকে। যারা অ্যালেক্সা টুলবার ব্যবহার করেন কেবল তাদের ভিজিটই অ্যালেক্সা গণনা করে থাকে। তাই অ্যালেক্সার রিপোর্ট নিরপেক্ষ নয়। বরং পক্ষপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত। এ কারণেই নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল অ্যালেক্সার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। মামলা নম্বর - সি-০৭-০১৭১৬ আরএস। তবে মামলার বিবরণের কপিটি ইতোমধ্যে উইকিপিডিয়া থেকে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যালেক্সাই বিশেষ কৌশলে এ কাজটি করেছে।
অ্যালেক্সায় ওয়েবসাইটের র্যাংকিং বাড়ানোর কৌশল বাতলে দিয়ে একটি টিউটরিয়ালে বলা হয়েছে, অ্যালেক্সা র্যাংকিং আসলে তাদের টুলবার (অ্যালেক্সা টুলবার) যারা ব্যবহার করে তাদের ভিজিটের উপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে। আপনি একটা ওয়েবসাইট খুললেন লক্ষ লক্ষ ভিজিটরও আপনার সাইট ভিজিট করে কিন্তু যারা ভিজিট করে তাদের কেউ যদি অ্যালেক্সা টুলবার ব্যবহার না করে তাহলে আপনি কোন র্যাংকিং পাবেননা, পেলেও হয়ত ৩/৪ লক্ষ হবে আপনার র্যাংকিং। অপরদিকে আপনার সাইটের মাত্র যদি কয়েক হাজার ভিজিটর থাকে আর তারা সবাই যদি অ্যালেক্সার টুলবার ব্যবহারকারী হন তাহলে একমাসের মধ্যেই দেখবেন আপনার সাইটের র্যাংকিং শতকের ঘরে এসে গেছে। তাই অ্যালেক্সার তথ্য কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নয়। ধরুন আপনার একটা সাইট আছে, দিনে হয়ত কয়েকশবার ভিজিট হয় এবং অ্যালেক্সাতে র্যাংকিং মনে করেন দুই লক্ষের ঘরে। এখন আপনি আপনার ১৫/২০ জন বন্ধুকে (যারা নেট ব্যবহার করে)বললেন যে বন্ধু তোরা তোদের ব্রাউজারে দয়া করে অ্যালেক্সা টুলবারটি ইনস্টল করে নে আর প্রতিদিন আমার সাইটে ৮/১০ বার করে ঢুকবি। ব্যস অ্যালেক্সার কেল্লা ফতে (দুর্গ বিজয়)। এবার দেখবেন একমাসেই আপনার র্যাংকিং দুইলক্ষ থেকে হয়ত দুই হাজারে চলে আসছে। এজন্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকা,বিখ্যাত ব্লগ, ফোরামের অ্যালেক্সা র্যাংকিং এত বেশি। কারণ এর একেকটা সাইটের পেছনে যদি ১০/১২ জন লোক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে তারা কনটেন্ট লেখক, ওয়েব ডেভেলপার, ডিজাইনার বা যেকোন কিছু। অর্থ্যাৎ এই সাইট নিয়ে তাদের সবসময় পরে থাকতে হয় এবং এদেরকে বলাই থাকে আপনার সবাই অ্যালেক্সা টুলবার ব্যবহার করবেন। এদেরকে হয়ত সংশ্লিষ্ট সাইটে দিনে ৬০/৭০ বার ঢুকতে হয়। তবে টুলবার ছাড়া সাইটে ঢুকলেও অ্যালেক্সা সেটা গগনা করে কিন্তু সেটার প্রভাব খুব অল্প। এছাড়া অ্যালেক্সার একটা উইজেট আছে যদি সেটা আপনার সাইটে দেন তাহলে সেই উইজেটে প্রতি ক্লিকেই একবার করে ভিজিট হয়েছে অ্যালেক্সা ধরবে। (এই উইজেটে আপনার সাইটের র্যাংকিং এবং আপনার সাইটের লিংক কয়টি সাইটে আছে সে সম্পর্কে তথ্য থাকবে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রত্যেকটিরই ওয়েব পোর্টাল রয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটিই প্রতিনিয়ত নিউজ আপডেট করে থাকে। এই পত্রিকাগুলোর পরিচিতি এবং পাঠক চাহিদা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে তো আছেই, এমনকি বিশ্বব্যাপীও। অথচ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে প্রথম ৩০-এর মধ্যে মাত্র তিনটি দৈনিক পত্রিকা স্থান পেয়েছে। একটি পত্রিকার অন-লাইনকে অ্যালেক্সাই ইচ্ছে করে প্রথম দিকে রেখেছে বা রাখতে বাধ্য হয়েছে। কারণ এই পত্রিকাটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষে। এটিকে যথাস্থানে রাখা না হলে অ্যালেক্সা সাধারণ পাঠকের কাছেও সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ হতো। এছাড়া প্রিন্ট মিডিয়ার অন্য যে পত্রিকা দুটির ওয়েব পোর্টালকে এগিয়ে রাখা হয়েছে তার একটি হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। জানা গেছে, ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বিশেষ যোগাযোগের পর অ্যালেক্সা কর্তৃপক্ষ এই পোর্টালটির র্যাংকিং দ্রুত এগিয়ে এনেছে। এই পত্রিকাটির যদিও মোটামুটি জনপ্রিয়তা আছে, তাই এটিকে হিসাবে না ধরেই অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে এমন সব ওয়েব পোর্টালকে অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে, এগুলোর নামও ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সচেতন মানুষ শোনেনি। এটিও অ্যালেক্সার র্যাংকিং প্রতারণার একটি বড় প্রমাণ। অ্যালেক্সায় ওয়েবসাইটের র্যাংকিং বাড়ানোর কৌশলে বাতলে দিতে গিয়ে বিভিন্ন টিউটরিয়ালে বলা হয়েছে, অ্যালেক্সাতে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার সাইটের তথ্য দিলে এরপর থেকে অ্যালেক্সাতে আপনার সাইটের র্যাংকিং দেখাবে। প্রশ্ন হলো অ্যালেক্সা যদি নিরপেক্ষভাবে র্যাংকিং করে তাহলে নিবন্ধন করতে হবে কেন? তার মানে যে ওয়েবসাইটটি সেখানে নিবন্ধিত থাকবেনা সে সাইটটির র্যাংকিং নিয়েও অ্যালেক্সার মাথা ব্যাথা নেই।শীর্ষ কাগজের সৌজন্যে