বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৪
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ফেসবুকে প্রেম, গর্ভে দু’সন্তান নিয়ে নির্মমভাবে খুন কলেজছাত্রী!
ফেসবুকে প্রেম, গর্ভে দু’সন্তান নিয়ে নির্মমভাবে খুন কলেজছাত্রী!
নাজমুন নাহার (২৪) হতভাগা মেয়েটি আজ থেকে প্রায় ১০ মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় নরসিংদীর মনোহরদী থানার সুকন্দী গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ছেলে রফিকুল ইসলামের (২৬) সঙ্গে। প্রেমের টানে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের দু’মাস পরই বাবা-মার অমতে রফিকুলকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। বিয়ের পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান নাজমুনের। শেষে সেই স্বামীর হাতেই দুই সন্তান গর্ভে নিয়ে নির্মমভাবে খুন হয়ে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল নাজমুন।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নাজমুনের ছোট মামা মহিউদ্দিন স্বামী রফিকুলের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী মহি উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার মিডিয়ায় ভাগ্নি লাশ উদ্ধারের খবর প্রচারিত হওয়ার পরই মামা জানতে পারেন, বিয়ের দুই মাস পর তারা গাজীপুর শহরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার অ্যাডভোকেট শামীম ভূঁইয়ার বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। তারা এ বাড়ির ৫ম তলায় প্রায় ৬ মাস বসবাস করছিলেন।
জয়দেবপুর থানার এস.আই আরশাদ হোসেন জানান, স্বামী রফিকুল স্বীকারোক্তিতে বলেন , অন্য এক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রী নাজমুন নাহারের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে রফিকুল তার স্ত্রীকে বার বার নিষেধ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার মনমালিন্য ও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বামী রফিকুল ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ ও ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। এরপর লাশটি তার বাসার একটি কক্ষে দুটি লেপ ও তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখে।
পরর্বতীতে বাসা পরিবর্তন করার জন্য রফিকুল একটি পিকআপভ্যান ভাড়া করে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে বাসার মালামাল পিকআপে ওঠানো শুরু করা হয়। পিকআপে লেপ-তোষক তোলার সময় এগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এতে পিকআপ চালক ফোরকান মিয়া ও হেলপার তানজিনের সন্দেহ হয়। তারা এ বিষয়ে রফিকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে রফিকুল দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করলে চালক ও হেলপার তাকে ধাওয়া করে আটক করে।
পরে ঘটনাটি জয়দেবপুর থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রফিকুলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, নিহত নাজমুন নাহারের গলা ও ডান পা কাটা রয়েছে। মুখের মধ্যে ওড়না ঢুকানো ও দু’পা বাঁধা ছিল। তাকে গত রোববার হত্যার পর লাশটি বাসায় তোষক দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ঘাতক স্বামী রফিকুলের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী থানার সুকুন্দি গ্রামে। তার বাবার নাম হুমায়ূন কবীর।
রফিকুল ঢাকার গুলশানে সাউথ পয়েন্ট ওভারসীজ লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এর আগে তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় রাণী রি-রোলিং স্টিল মিলে এবং চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।
ময়নাতদন্ত শেষে গাজীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার জানান, নাজমুনের পেটে ৫ মাস বয়সী ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা জমজ (দুইটি) কন্য সন্তান ছিল।
ঢাকার উত্তরা এলাকার বাসিন্দা নাজমুনের বড় মামা মোতালেব হোসেন সরকার জানান, লাশ গলে যাওয়ায় উত্তরার আজমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। তার লাশ গ্রামের বাড়ি নেয়া হবে না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বোয়ালিয়া থানার মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়া পদ্মা আবাসিক এলাকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্টার গোলাম জিলানীর মেয়ে নাজমুন নাহার । তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজের গণিত বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন ।