বৃহস্পতিবার ● ২৩ অক্টোবর ২০১৪
প্রথম পাতা » উপকূলের প্রযুক্তি » উপকূলের গ্রামে জীবিকার পথ দেখাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি
উপকূলের গ্রামে জীবিকার পথ দেখাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি
।। রফিকুল ইসলাম, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ঘুরে এসে ।। শুরুর সময় সম্বল ছিল মাত্র একটি কম্পিউটার আর দু’খানা চেয়ার টেবিল। বলতে গেলে শুণ্য থেকেই শুরু। এগুলো নিয়েই ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছিল। সেই কেন্দ্র এখন প্রত্যন্ত এলাকায় জীবিকার পথ দেখাচ্ছে। তথ্য আদান-প্রদান আর সেবামূলক কার্যক্রমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
গ্রাম ঘুরে জানা গেল, তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তরুণ সমাজ দুনিয়া জুড়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। সামাজিক নেটওয়ার্ক এদের হাতের কাছে পৌঁছেছে। ইন্টারনেট সুবিধা সহজ করে দিচ্ছে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। একইসঙ্গে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে আয়-রোজগার বাড়ছে উদ্যোক্তাদের।
এটা উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের গল্প। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বাইরে পুরানো একটি ভবনের একটি কক্ষে তথ্যসেবা কেন্দ্রের কাজ চলে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। শুন্যতে শুরু হলেও এখন এর ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে ব্যাপক।
সূত্র বলছে, সুবর্ণচরের চরবাটায় তথ্য আদান-প্রদান আর প্রযুক্তি সেবার সব কাজই উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলামকে ঘিরে। শুধু চরবাটা ইউনিয়ন নয়, আশপাশের এলাকা থেকের বহু লোকজন তার কাছেই ছুটে আসেন। চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা, ভর্তির তথ্যাবলী জানা, কোথাও অনলাইনে আবেদন পাঠানো, ছবি স্ক্যান করা এমনকি বিমানের টিকেট বুকিংয়ের জন্য লোকজন এখানেই ছুটে আসেন। তথ্যকেন্দ্রটাই যেন এলাকার বাতিঘর।
তথ্যসেবা কেন্দ্রের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অন্তত ৮০ ভাগ সফল বলে দাবি জোবায়ের ইসলামের। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ যেসব কাজের জন্য আগে ৩৫ কিলোমিটার দূরের জেলা সদরে যেতেন, সে কাজ এখন এখানেই হয়। বিমানের টিকেটের জন্য এখানে লোকজন আসেন। কৃষি বিষয়ক তথ্যের জন্য কৃষকেরা আসেন। ছাত্ররা ভর্তির খোঁজখবরের জন্য অসেন। পরিক্ষার ফলাফল জানা, বিসিএস পরিক্ষার আবেদন করার জন্য এখানে অনেকেই আসেন। অনেক ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয় না।
তথ্যকেন্দ্রে আসা একজন জানালেন, এলাকায় জলদস্যুদের তৎপরতা সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন মহলকে কিছুতেই জানাতে পারছিলাম না। অবশেষে তথ্যকেন্দ্রে এসে ই-মেইলে আবেদন পাঠালাম। আবেদন পেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। দস্যুদের তৎপরতা কমেছে। তথ্য-প্রযুক্তির সেবা নিয়ে সফল হওয়া এমন আরও অনেক গল্প রয়েছে।
শুরুর প্রসঙ্গ তুলে উদ্যোক্তা ও মাষ্টার ট্রেইনার জোবায়ের ইসলাম জানালেন, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাট কম্পিউটারের ব্যবসার অভিজ্ঞতা ছিল তার। একদিন চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তাকে প্রস্তাব দেন তথ্যকেন্দ্রটি পরিচালনার। নিজের ব্যবসা চালু রেখেই জোবায়ের ইসলাম এখানে কাজ শুরু করেন। খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। কঠোর পরিশ্রমে মাত্র এক মাসের মাথায় তথ্যকেন্দ্রে ভালো ফল পাওয়ায় আগের ব্যবসাটি ছেড়ে দেন জোবায়ের। এখানেই দিনে দিনে তার রোজগার বাড়তে থাকে।
তথ্যকেন্দ্রের কাজের সফলতা দেখে ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন’ থেকে জোবায়ের ইসলামকে কারিগরি বোর্ডের অন্তভ’ূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। আবেদন করা হলে বোর্ড থেকে পরিদর্শন করে অনমোদন দেয়া হয়। কারিগরি বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার ফলে এই তথ্যকেন্দ্র ‘অফিস অ্যাপ্লিকেশন’ ও ‘ডাটাবেজ’ নামের দু’টো প্রোগ্রাম নিয়ে তিন ও ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করে। এ সময়ে কম্পিউটার কেনার জন্য কিছু অর্থেও প্রয়োজন পড়ে যায়। এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এর সঙ্গে নিজের কিছু টাকা জুগিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ নিয়ে তথ্যকেন্দ্রের সঙ্গে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন জোবায়ের। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পরিক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল করছে।
এইসব সমস্যার ভেতর দিয়ে কাজ চালিয়েও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছেন উদ্যোক্তা জোবায়ের। নেটওয়ার্ক ভালো পেলে ৫০০ ছেলেমেয়ের বেকারত্ব দূর করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। স্থান সংকট দূর হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেবেন। ইন্টারনেট সুবিধা আরও ছড়িয়ে দিতে একটি সাইবার ক্যাফেও করার ইচ্ছা রয়েছে তার।
//রফিকুল ইসলাম/২৩১০২০১৪//