শনিবার ● ১১ অক্টোবর ২০১৪
প্রথম পাতা » টিপ্স-এন্ড-ট্রিক্স » অনলাইনে হয়রানি : অভিভাবকদের জানা জরুরি
অনলাইনে হয়রানি : অভিভাবকদের জানা জরুরি
ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে সহজ স্বাচ্ছন্দ্যময় করলেও এর রয়েছে সীমাহীন নেতিবাচক দিক। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। আর এ অপরাধের বড় অংশজুড়ে আছে অনলাইন হয়রানি। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি রীতিমতো ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার নাম। আর এসব ঘটনা শুধু প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যেই নয়, আমাদের দেশেও এ ঘটনাগুলো ঘটছে অহরহ। এসব ঘটনা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রেখে যায়। পরিণত জীবনে যা অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল বয়ে আনে না। এ ধরনের হয়রানি নিয়ে অভিভাবকদের কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি।
অনেক কিছুই কিন্তু হয়রানি নয়
বিভিন্ন ধরনের হয়রানি নিয়ে সচেতনতা বাড়ার পাশাপাশি এ নিয়ে ভুল ধারণাও তৈরি হয়েছে। অনেক ছোটখাটো বিষয়কে না বুঝে হয়রানির পর্যায়ে ফেলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কেউ তার চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল কারও ওপর ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা চালায় এবং বারবার অপব্যবহার করে, সেটিই হয়রানি। এটি শারীরিক, মৌখিক কিংবা অনলাইন মিডিয়ায় ফটো শেয়ারের মতো ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অন্যদিকে অনলাইন মিডিয়ায় কেউ কাউকে কুৎসিত কিছু বললে বা গোপন কিছু ফাঁস করে দিলে, সেটিকে হয়রানি বলা যাবে না।
বাস্তবে হয়রানির সংখ্যা বেশি
৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু বাস্তব জীবনে কোনো না কোনো সময় হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। অনলাইনে এর হার ২৫ শতাংশ। বলা যায়, সাইবার হয়রানির চেয়ে বাস্তব জীবনে দুই থেকে তিনগুণ বেশি হয়রানির শিকার হয় শিশুরা। যদিও অনলাইনের ব্যাপারটিই সবার আগে নজরে আসে এবং গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইনে আসার চেয়ে স্কুলে যাতায়াতে শিশুদের হয়রানির সুযোগ বেশি।
প্রতিক্রিয়া হতে পারে কল্পনাতীত
বাস্তবে হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়। কিন্তু সাইবার হয়রানির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। টিনএজার বা শিশুদের মনে এটি এমন প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের সারা জীবন ভোগাতে পারে। কারণ অনলাইনে হয়রানির ঘটনা খুব অল্প সময়ে বহু মানুষ জেনে যায়।
সব মাধ্যমে সাইবার হয়রানি
ইন্টারনেটের প্রতিটি প্লাটফর্মেই এখন হয়রানির উপকরণ উপস্থিত। বিশেষত সামাজিক মিডিয়াগুলো। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এঙ্বঙ্ লাইভ, স্ন্যাপচ্যাট, মাইনক্রাফট গেম এমনকি মোবাইল এসএমএসেও এসব হয়রানির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা এ ব্যাপারে কিছুই জানছেন না। আর শুধু সামাজিক মিডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেই এসব এড়ানো যাবে না।
কীভাবে বোঝা যাবে শিশু হয়রানির শিকার
বয়ঃসন্ধিকালের সাধারণ মানসিক টানাপড়েন ও দ্বন্দ্ব থেকে হয়রানিকে আলাদা করতে পারেন না বেশিরভাগ অভিভাবক। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর চরিত্রের আকস্মিক পরিবর্তনকে এক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তাদের মতে, স্কুলে যেতে ভালোবাসে এমন শিশু যদি হঠাৎ স্কুলে যেতে না চায়, তাহলে বুঝতে হবে শিশু হয়রানির শিকার হয়েছে। কিংবা দেখা যায় ফোন বা ল্যাপটপে বেশ সময় কাটাত যারা-হঠাৎ এসব ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে, এটিও হয়রানির শিকার হওয়ার কারণ হতে পারে।
হয়রানি করতে পারে আপনার শিশুও
শুধু হয়রানির শিকার না হয়ে আপনার শিশুও অন্যকে হয়রানি করতে পারে। আর তা করছে কিনা সেটি বোঝার জন্য শিশুর আচার-আচরণের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। হঠাৎ বেশি আবেগপ্রবণ বা সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া, বড় কাউকে দেখলে ফোন বা কম্পিউটার লুকিয়ে ফেলা, অনেকগুলো নামে সামাজিক মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট চালানোর মানে হতে পারে আপনার শিশু অন্য কাউকে হয়রানি করছে।
শিশুর সঙ্গে গড়ে তুলুন বন্ধুত্ব
১৭ বছরের কম বয়সী শিশুরা তাদের চেয়ে বড় কারও সঙ্গে জীবনযাত্রার খুঁটিনাটি শেয়ার করতে চায় না। সাইবার হয়রানির ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও প্রকট। কিন্তু তারপরও অভিভাবকদের চেষ্টা করতে হবে শিশুর কাছাকাছি আসার। প্রযুক্তি নিয়ে ইতিবাচকভাবে কথাবার্তা বলে তার সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করতে হবে।
-শাহরিয়ার হৃদয়