শনিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » নগরীতে নতুন সাইবার অপরাধ !
নগরীতে নতুন সাইবার অপরাধ !
অপরিচিত নম্বর থেকে মিসকল দেখে যারা কলব্যাক করেন তাদের জন্য সতর্কতা। কারণ কলব্যাক করলেই অপরাধীদের জালে ধরা পড়ার আশঙ্কা! ‘সিম ক্লোনিং’ নামে পরিচিত নতুন এই সাইবার সন্ত্রাসে অপরাধীরা নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড কল দেয়। কলব্যাক করা হলে ফোনের নম্বরসহ যে কোনও তথ্য কপি করে রাখতে পারবে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চুরি করা এসব তথ্য নিয়েতৈরি করা ক্লোন সিম দিয়ে সহজেই ফোনকল করা ও মেসেজ পাঠানো যায়। এতে করে পরিচয় গোপন রেখে অপরাধ করে পার পেয়েযেতে পারে অপরাধীরা।
পুলিশের দাবি, মিসড কল বিনিময়ের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল বা সিম কার্ড ক্লোন করা সম্ভব। তবে এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বিশেষজ্ঞদের মত ভিন্ন। সিম ক্লোনিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অপরিচিত হলেও ভারতে এর মাধ্যমে অপরাধের খবর শোনা যায়। এমনকি, ২০১২ সালে ভারতের কিছু পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ হতে দেখা গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ২০১৩ সালের করা এক গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে জানায়, সিম ক্লোনিং-এর মতো সাইবার অপরাধের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। পৃথিবীব্যাপী স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সাইবার সন্ত্রাসের ঝুঁকি অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় এখন বেশি। অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায় বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করার মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে ফোনের ক্রেডিট বা ব্যালান্স শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। আবার অনেকেই এমন সব বিষয়ে ফোন কল বা টেক্ট মেসেজ পান যে সবের জন্য তিনি কোনও চেষ্টা বা খোঁজ করেননি।
আইসিটি বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু ফোন নম্বর বা মেসেজই নয়, ক্লোনিং দল মোবাইল ফোন থেকে ছবি, ভিডিওসহ যে কোনও নথিপত্র কপি করে ফেলতে পারে। তারা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের হার বাড়ছে বলেই সিম ক্লোনিং বেড়েছে। ক্লোনিং দলের টার্গেটে তারাই থাকেন, যারা নিয়মিত ফোনের মাধ্যমে টাকা পাঠান। কয়েক বছর আগেও দুই সিম কার্ড চালানোর মতো ফোন সেট বাজারে আসেনি। তখন কিছু ফোন সেট বিক্রেতা সেটের ভেতর এক ধরনের বাড়তি মডিউল স্থাপন করে দুটো সিম কার্ড চালানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন। পরে, ডাবল সিম কার্ড ব্যবহার উপযোগী ফোন সেট বাজারে আসায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার কমে যায়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক প্রধান মোস্তফা জব্বার বলেন, “সিম ক্লোনিং সম্পর্কে শুনছি বছর দুয়েক আগে থেকে। ইদানীং এখানেও ফোন গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে।” তিনি আরও বলেন, প্রচুর পরিমাণ নিবন্ধনহীন সিম কার্ড থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অপরাধ সনাক্ত করা কঠিন হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ কোটি ৬৮ লাখ সক্রিয় মোবাইল ফোন রয়েছে। টেলিকম বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপন মিসড কলের মাধ্যমে সিম ক্লোনিং-এর আশঙ্কা সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তবে এ দেশে প্রায় ১৫ বছর ধরেই নকল সিম কার্ড তৈরির মাধ্যমে সিম ক্লোনিং হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “ক্লোন করার জন্য প্রথমে খালি সিম কার্ড আমদানি করা হয় ও ডাটা রিডারের মাধ্যমে সক্রিয় সিমের তথ্য কপি করা হয় ওই খালি সিমে। কাজটা খুব সহজ নয়, এতে ফোন ও নেটওয়ার্কের ওপর কাজ করতে অনেক যন্ত্রের প্রয়োজন হয়।” আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রায় নিষ্ক্রিয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধের শিকার ব্যক্তি বুঝতে পারেন না কোথায় কার কাছে অভিযোগ করতে হবে। বেশিরভাগ সময়ই তারা নিজের ফোন অপারেটরের কাছ থেকে বা কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করে সমস্যার সমাধান করেন। ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই ধরনের অভিযোগই পান না।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর একজন সুপারিনটেনডেন্ট আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমরা মোবাইল ক্লোনিং সম্পর্কে কিছু তদন্ত করেছি, তবে এখনও নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ক্লোনারদের ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটর ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি ক্রমে ভীতিকর হয়ে উঠবে।”
র্যাবের সহকারী পরিচালক মেজর আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি অন্যান্য দেশে সিম ক্লোনিং হয় এবং বাংলাদেশেও তা করা সম্ভব। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারব।” তিনি আরও জানান, র্যাবের কাছে এ ধরনের অপরাধ সনাক্ত ও দমন করার মতো সরঞ্জাম রয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউন